পড়ুয়াদের জীবনে শিক্ষকের স্থান গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষক ভালো হলে পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎও ভালো হয়। এদিকে, তেলাঙ্গানায় একটি অনন্য ঘটনা গুরু-শিষ্যের অটুট বন্ধনের দারুণ উদাহরণ সামনে তুলে ধরেছে। জানা গিয়েছে, তেলাঙ্গানার পোনাকালের একটি সরকারি স্কুলে জে শ্রীনিবাস নামে একজন ৫৩ বছর বয়সী শিক্ষককে বদলি করা হলে, তাঁর ১৩৩ জন ছাত্রও স্কুল ছেড়ে দিয়েছিল।
ছাত্ররা শ্রীনিবাস স্যারের বদলির খবর পেয়ে প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারেনি। কিন্তু সরকারি আদেশ নিশ্চিত হলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছিল। প্রত্যেক শিক্ষার্থীই কান্নায় ভেঙে পড়েছিল। কিছুতেই ওই শিক্ষককে স্কুল ছেড়ে বেরোতে দিচ্ছিল না তারা। শিক্ষককে থামানোর চেষ্টাও করেছিল। কিন্তু শিক্ষক ভালোভাবেই জানতেন যে সরকারি আদেশটি অবশ্যই অনুসরণ করা প্রয়োজন, তাই তাঁকে চলে যেতে হয়েছিল। শ্রীনিবাসকে পুরনো স্কুল থেকে তিন কিলোমিটার দূরে আকাপেলিগুড়ার স্কুলে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। আর পড়ুয়ারাও ছাড়েনি তাদের স্যারকে। স্যার যে স্কুলে বদলি হয়েছিলেন। সেই স্কুলে তারাও ভর্তি হয়ে গিয়েছিল। পুরনো স্কুলের ২৫০ জন পড়ুয়ার মধ্যে ১৩৩ জনই চলে গিয়েছিল তাদের প্রিয় শ্রীনিবাস স্যারের সঙ্গে।
কর্মকর্তাদের প্রতিক্রিয়া
তেলাঙ্গানার শিক্ষা কর্মকর্তারা ঘটনাটিকে অত্যন্ত অনন্য বলে বর্ণনা করেছেন। মাঞ্চেরিয়াল জেলা শিক্ষা আধিকারিক বলেছেন যে এই প্রথম এত ছাত্রছাত্রীরা তাদের শিক্ষকের সঙ্গে ভালো সম্পর্কের কারণে স্কুল পরিবর্তন করেছে। এটি একটি অবিশ্বাস্য ঘটনা।
অবাক হওয়ার বিষয় হল, স্কুল পরিবর্তন করা শিক্ষার্থীরা প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়া ছিল। শুধুমাত্র শিক্ষককে ভালোবেসে এই ধরনের ছোট বাচ্চাদের এমন পদক্ষেপ, তাদের শিক্ষকের প্রতি গভীর সংযুক্তি এবং আস্থার প্রমাণ দিয়েছে।
আরও পড়ুন: (Viral Video: গাড়ির ট্যাঙ্ক থেকে পড়ে নষ্ট হল ডিজেল, রিল বানাতে গিয়ে যুবকের কাণ্ড দেখে বড় পদক্ষেপ পুলিশের)
এমন ঘটনায় কী বলছেন শ্রীনিবাস
শ্রীনিবাস বলেছিলেন যে এটি তাঁর শেখানোর পদ্ধতি এবং শিক্ষার্থীদের প্রতি তাঁর উৎসর্গের ফলাফল। তিনি অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের এই সিদ্ধান্তকে তাঁর প্রতি তাদের আস্থার প্রতীক হিসেবে তুলে ধরে বলেছেন, ভবিষ্যতেও তিনি তাঁর সবটা দিয়ে ছোটদের পড়াতে থাকবেন। ওই শিক্ষকের কথায়, আমি শুধু আমার সাধ্যমত তাদের শেখানোর দায়িত্ব পালন করেছি। তারা আমার শিক্ষা পছন্দ করেছে। যেহেতু সরকারি স্কুলে এখন আরও ভালো সুযোগ-সুবিধা আছে, তাই আমি অভিভাবকদের অনুরোধ করব সেগুলো ব্যবহার করার জন্য। কিন্তু শিক্ষার্থীরা এত বড় পদক্ষেপ নেবে তা কেউ আশা করেননি।
উল্লেখ্য, স্থানীয়রাও তেলাঙ্গানার ওই স্কুলে গত ১২ বছরে শ্রীনিবাসের অবদানকে অস্বীকার করেননি। পোনাকালের স্কুলে আগে ৩২ জন পড়ুয়া ছিলেন। কিন্তু ওই শিক্ষকের প্রচেষ্টা এবং অনুপ্রেরণা, শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়িয়েছিল ২৫০ জন পর্যন্ত। কেউ অনুপস্থিত থাকলে তিনি নিজে খোঁজ খবর নিয়ে শিশুদের স্কুলে নিয়ে আসতেন। যদি এমন ছাত্র থাকতেন, যাদের পড়াশোনায় আরও মনোযোগের প্রয়োজন হয়, তবে তিনি স্কুলের সময় শেষে ওই ছাত্রের জন্য বিশেষ ক্লাস নিতেন। সবেমাত্র আক্কাপেলিগুডায় পৌঁছেই, তিনি সেখানকার আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছেন।