ব্রিটিশ সাহিত্যিক ভার্জিনিয়া উলফ বিশ্ব সাহিত্যে অতি পরিচিত এক নাম। নিজের সাহিত্যকর্মের জন্যও যেমন তিনি বহু মানুষের স্মৃতি থেকে যাবেন, তেমনই তাঁর জীবনকাহিনিও বহু মানুষের কাছে অতি অদ্ভুত এক পাঠ। জীবন শেষের মুহূর্তটিও ছিল অদ্ভুত। ওভারকোর্টের পকেটে ভারি পাথর ভরে নদীতে নেমে যান তিনি। কয়েক দিন পরে খুঁজে পাওয়া যায় তাঁর মৃতদেহ।
এহেন ভার্জিনিয়া উলফের শরীরে ছিল বাঙালি রক্ত। হালে এমন কথাই জানিয়েছেন তাঁর নাতি স্কটিশ লেখক-ইতিহাসবিদ উইলিয়াম ডালরিম্পল। ডালরিম্পল বর্তমানে দিল্লির বাসিন্দা। সম্প্রতি তিনি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ভার্জিনিয়া উলফ সম্পর্কে তিনি এমন কথা জানাতে পারেন, যা খুব কম মানুষই জানেন। সেই প্রসঙ্গেই ব্রিটিশ সাহিত্যিকের সঙ্গে বাংলার যোগের কথা জানিয়েছেন তিনি।
ডালরিম্পল জানিয়েছেন, তিনি এবং ভার্জিনিয়া দু’জনের আংশিকভাবে বাঙালি। কীভাবে? পরিবারের ইতিহাস সন্ধান করেত গিয়ে সে তথ্য পেয়েছেন উইলিয়াম ডালরিম্পল। সে তথ্যও জানিয়েছেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, ভার্জিনিয়ার দিদিমা ছিলেন ফরাসি। তিনি চনন্দনগরে এসে এক বাঙালি পুরুষকে বিয়ে করেন। তাঁদের এক কন্যা হয়। সেই কন্যা পরবর্তীকালে ইংল্যান্ডে চলে যান এবং এক ব্রিটিশকে বিয়ে করেন। তাঁদেরই কন্যা ভার্জিনিয়া। অর্থাৎ ব্রিটিশ সাহিত্যিকের দাদামশাই ছিলেন বাঙালি।
এখানেই শেষ নয়, ডালরিম্পল জানিয়েছেন, ভার্জিনিয়ার মাসি জুলিয়া মার্গারেট কলকাতাতেই থেকে যান। ভার্জিনিয়ার মা ব্রিটেনে গিয়েও কিয়দংশে বাঙালি ঐতিহ্য মেনে চলতেন। লন্ডনে থাকার সময়েও তিনি ভারতীয় গয়না এবং জামাকাপড় পরতেন।
ডালরিম্পলের কথায়, ‘ভার্জিনিয়ার মুখে বাঙালি ছাপ খুব স্পষ্ট ছিল। ওটা অনেকাংশেই ভারতীয় মুখ। আমি ওঁর দুই প্রজন্ম পরে। তাই ওঁকে কখনও দেখেনি। কিন্তু আমাদের দু’জনের শরীরেই যে বাঙালি রক্ত রয়েছে, তা পরিষ্কার।’ ডালরিম্পল জানিয়েছেন, তিনি ভার্জিনিয়ার এই অজানা দিকটি নিয়ে বই লিখতেও চান।
বিংশ শতাব্দীর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিকদের একজন হিসাবে পরিচিত ভার্জিনিয়া উলফ। ‘টু দ্য লাইটহাউস’, ‘মিসেস ডালোওয়ে’ এবং ‘অরল্যান্ডো’র মতো উপন্যাস তাঁকে বিশ্বসাহিত্যের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বসিয়ে রেখেছে।
১৮৮২ সালে ইংরেজ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তাঁর বাবা-মা ছিলেন আধুনিক ভাবধারার মানুষ। খুব অল্প বয়সেই সাহিত্যচর্চা শুরু করেন তিনি। ১৯১৫ সালে তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘দ্য ভয়েজ আউট’ প্রকাশিত হয়।
তাঁর বেশ কয়েকটি সৃষ্টিকেই নারীবাদী ধারণার গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসাবে বর্ণনা করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে ‘আ রুম অব ওয়ানস ওন’, ‘থ্রি গিনি’। তবে এই প্রতিভাবনা সাহিত্যিক এসবের পাশাপাশি তীব্র অবসাদে ভুগতেন বলেও শোনা যায়। ১৯৪১ সালে তিনি আত্মহত্যা করেন।