শিশুদের হাতে মোবাইল তা খেলার জন্য হোক বা পড়াশোনার জন্য, খুব সাধারণ ঘটনা এখন সকলের কাছে। বাড়তে থাকা প্রতিযোগিতা এবং কমতে থাকা পারিবারিক ভালবাসার ফলস্বরূপ এখন শিশুরা বেশিরভাগ সময় কাটায় মোবাইলের সঙ্গে। এই বিষয়টি নিয়ে পিতা মাতারা চিন্তিত থাকলেও কোনও ভাবেই সন্তানকে দূরে রাখতে সক্ষম হন না। আপনার সন্তানকেও যদি আপনি মোবাইল থেকে দূরে রাখতে চান তাহলে আপনাকে মেনে চলতে হবে কিছু নিয়ম।
মোবাইল ফোনের আসক্তি শিশুর জন্মের পর থেকেই তৈরি হয়ে যায়। ছোটবেলায় কার্টুন না দেখে খাবার খেতে চায় না একটি শিশু, বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই আসক্তি আরও বেড়ে যায়। শিশুদের মোবাইলে আসক্ত হওয়ার পেছনে একটি বড় কারণ হলো ছোট থেকেই তারা দেখে বাড়ির অন্যান্য বড় সদস্যরা যেমন বাবা মা এবং দাদু দিদা সবসময় হাতে মোবাইল নিয়ে রয়েছেন। খুব স্বাভাবিকভাবেই এই অভ্যাসটি তৈরি হয়ে যায় ছোট ছোট শিশুদের মধ্যেও।
ছোট থেকে মোবাইল ফোনে অতিরিক্ত আসক্তি তৈরি হয়ে গেলে শিশুদের মধ্যে ঘুমের ব্যাঘাত, প্রতিবন্ধী সামাজিক দক্ষতা, শারীরিক কার্যকলাপ হ্রাস, পড়াশোনায় মনোযোগ কমে যাওয়া, চোখে চাপ সৃষ্টি হওয়া, মাথা ব্যথা বা আচরণগত সমস্যা তৈরি হতে পারে। শিশুদের এই সমস্যা থেকে মুক্ত করার জন্য প্রথম পদক্ষেপ নিতে হবে পিতা-মাতাকেই।
(আরও পড়ুন: হলি সুন্দরীদের ফ্যাশন কা জলওয়া! খোলামেলা পোশাকে এমির রেড কার্পেটে নজরকাড়া কারা?
পিতা মাতার উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ:
সঠিক রোল মডেল তৈরি করুন: শিশুরা বড়দের দেখেই সবকিছু শেখে, তাই আপনাকে আগে নিজেকে মোবাইল থেকে দূরে রাখতে হবে। একটি নির্দিষ্ট সময় স্ক্রিন মুক্ত থাকার চেষ্টা করুন আপনি, সময় দিন শিশুকে। খাওয়ার সময় বা ঘুমানোর আগে মোবাইল বা ল্যাপটপ দেখবেন না, দেখবেন আপনাকে দেখে শিশুরাও শিখে যাবে সেটি।
বাইরে যেতে উৎসাহিত করুন: মোবাইল ফোন থেকে শিশুদের সরিয়ে রাখার সবথেকে ভালো পন্থা হলো বাড়ির বাইরে ঘুরতে নিয়ে যাওয়া। পারিবারিক ভ্রমণ, খেলাধুলায় যুক্ত রাখা, প্রতিযোগিতামূলক ইভেন্টে ব্যস্ত রাখার মাধ্যমে আপনি আপনার শিশুকে মোবাইল থেকে দূরে রাখতে পারবেন।
স্ক্রিন টাইম সীমিত: শিশুরা কতক্ষণ মোবাইল বা ল্যাপটপ দেখবে সেই সময় বেঁধে দিন তাদের। সারাদিনে খুব বেশি হলে ১ ঘন্টা স্ক্রিন টাইমের জন্য বেঁধে দিন। শিশু ল্যাপটপ বা মোবাইলে কী দেখছে সেটিও নজরে রাখুন আপনি।
প্রযুক্তির গুরুত্ব শেখান: প্রযুক্তির উপকারী এবং ক্ষতিকারক দিকগুলি সন্তানদের শেখানোর চেষ্টা করুন। মোবাইল ফোন সকলের জন্যই ভীষণ প্রয়োজনীয় কিন্তু সেটি যেন অভ্যাসে পরিণত না হয়ে যায় সেটাই শেখানোর চেষ্টা করুন শিশুদের।
(আরও পড়ুন: একদিনের মধ্যে ২৩টি দাঁত তুলে বসানো হল ১২টি ! ১৩ দিনের মধ্যে মৃত্যু ব্যক্তির)
নিজের শৈশবের কার্যকলাপ ফিরিয়ে আনুন: আপনি ছোটবেলায় যে যে খেলার সঙ্গে যুক্ত থাকতেন বা যেভাবে সময় কাটাতেন ঠিক সেই ভাবেই পরিবারের ছোট সদস্যদের সঙ্গে কাটানোর চেষ্টা করুন। বই পড়ুন, আঁকুন, খেলুন, যাতে আপনার শিশুও সেই খেলাধুলার মধ্যে আনন্দ খুঁজে নিতে পারে।
প্রযুক্তিমুক্ত করে রাখুন বাড়িকে: বাড়ির কিছু নির্দিষ্ট এলাকা যেমন ডাইনিং রুম বা বেডরুম প্রযুক্তিমুক্ত করে রাখুন অর্থাৎ সেখানে কোনও টিভি বা ল্যাপটপ রাখবেন না। মোবাইল ফোনের নিষেধাজ্ঞা রাখুন এই ঘরগুলিতে। ঘরে প্রযুক্তিগত কোনও জিনিস না থাকলে আপনা আপনি স্ক্রিনটাইম কমে যাবে শিশুদের।
গল্প বলুন: শিশুদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করুন। তাদের কথা শুনুন। বিভিন্ন বিষয়ে নিজের অনুভূতি বা চিন্তাভাবনা শেয়ার করুন তাদের সঙ্গে। তাদের গুরুত্ব রয়েছে পরিবারে, এটাও বোঝানোর চেষ্টা করুন তাদের।
পুরস্কৃত করুন: একটি নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিন স্ক্রিনটাইমের জন্য বা তাদের বলুন যদি সারাদিন মোবাইল হাতে না থাকে তাহলে তাদের জন্য থাকবে একটি বিশেষ পুরস্কার। পুরস্কার পাওয়ার লোভে দেখবেন মোবাইলের আসক্তি কমে গেছে।
পেশাদার হস্তক্ষেপ: শিশুর মোবাইল আসক্তি যদি মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যায়, তাহলে মনোবিজ্ঞানী বা শিশুরোগ বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করুন।