বর্ষায় কোনওদিন জঙ্গল দেখেছেন। বৃষ্টির জলে স্নাত গাছগুলো যেন আরও সবুজ হয়ে ওঠে। চোখ ঝলসে যায়। খাঁটি সবুজের এমন হাতছানি আপনি বর্ষা ছাড়া আর কখনো পাবেন না। আর তাই হাতে যদি ছুটি পান, এই বর্ষাতেই চলে যান জঙ্গলে। কলকাতার খুব কাছেই বাঁকুড়া। এখানে গেলেই আপনি পাবেন জঙ্গলের দেখা। কথা দিচ্ছি, বর্ষার জঙ্গলের এই রূপ আপনি কখনও ভুলবেন না।
আসলে ১৫ অগস্ট উপলক্ষে গোটা তিনদিন ছুটি রয়েছে। এই সময়টা কি বাড়িতে বসে কাটানো সম্ভব, তাহলে যে ছুটির তিন দিনটাই মাটি হয়ে যাবে! তাই অনেকেই এখন খুঁজতে বসেন আতিপাতি করে কোথায় যাওয়া যেতে পারে। এক কাজ করুন ঘুরে আসুন বাঁকুড়ার ঝিলিমিলি থেকে।
মুকুটমণিপুর থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে এবং বাঁকুড়া শহর থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরে ঝিলিমিলি। গোটা অরণ্যজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে নানা ভিউপয়েন্ট। যেখান থেকে চোখ মেলে তাকালে যেমন আপনার মন জুড়াবে, তেমনই আপনার ক্যামেরায় ধরা পড়বে অসাধারণ কিছু ল্যান্ডস্কেপ। শাল, মহুয়া, শিমুল ইত্যাদি গাছের ফাঁক দিয়ে সকাল হতেই চলে রোদের লুকোচুরি।
কী দেখবেন?
জঙ্গলের মাঝে উঁচুনিচু পথ আর টিলায় ভরা পাহাড়ি জায়গা ঝিলিমিলি। উদ্দেশ্যহীন ভাবে হেঁটে বেরাতে চান কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে দেদার আড্ডা, এই জায়গা আপনার জন্য আদর্শ।
সুতান লেক: ঝিলিমিলি রেঞ্জের মধ্যে সুতান হ্রদটি ৭ কিলোমিটার। আর এই লেকের সৌন্দর্য আরও বেড়ে যায় বর্ষাকালে। এখানে বসে দেখবেন পাকির কলকাকলিতে যেন পৌঁছে গিয়েছেন অন্য জগতে।
তালবেরিয়া বাঁধ: এই বাঁধ থেকে খুব সুন্দর ভিউ চোখে আসে। গাছের ছায়ায় বসে সারাদিন সেই সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। যত দেখবেন মন যেন শান্তি পাবে না। ঝিলমিলি থেকে এর দূরত্ব মাত্র ৪ কিমি।
দুয়ারসিনি: হাতে একটাদিন বেশি সময় থাকলে চলে যান দুয়ারসিনি। দূরত্ব মাত্র ৩১ কিমি। পাহাড়ের গায়ে শাল, পিয়াল, শিমূল, পলাশ, বহেড়ার জঙ্গল। বুক চিরে এঁকেবেঁকে বয়ে চলেছে সাতগুড়ুং নদী। দুয়ারসিনি থেকে ফেরার পথে দেখুন ভালো পাহাড়। এখানে চাইলে থাকাও যায়।
কোথায় থাকবেন?
ঝিলিমিলি-তে থাকার জায়গা বলতে রিমিল ইকো ট্যুরিজম সেন্টার। এই সরকারি গেস্ট হাউস প্রাইভেট ইজারা নিয়ে চলে। এখানে থাকা ট্রি হাউজ টানে দর্শককে। তবে আগে থেকে বুক না করে এখানে আসবেন না। আর যদি রিমলিতে থাকার জায়গা না পান তাহলে বাঁকুড়া শহরে থেকে ঘুরে নিতে পারেন ঝিলিমিলি। হোটেল থেকে প্যাকেটে করে লাঞ্চ নিয়ে আসলে একটা ছোটখাটো পিকনিকও করে ফেলা সম্ভব।
কীভাবে যাবেন?
কলকাতা থেকে বাঁকুড়ার দূরত্ব রেলপথে ২৩৩ কিলোমিটার। সেখানে নেমে গাড়ি ভাড়া করে রিমলি লজে যেতে পারেন। এছাড়া সড়কপথেও চলে যেতেন পারেন সেখানে বম্বে রোড হয়ে খড়গপুর হয়ে লোধাশুলি মোড় পেরিয়ে। ডানকুনি, চাঁপাডাঙা, আরামবাগ, কোতলপুর, বিষ্ণুপুর হয়েও যাওয়া যায়। সময় লাগে মোটামুটি ৪ ঘণ্টা মতো। হাতে সময় না থাকলে খুব ভোর ভোর বাড়ি থেকে বের হলে সেদিনই ফিরে আসা সম্ভব।