সেই ছোটবেলা গল্পের বইতে যখন রাজা-মহারাজা বা জমিদারদের গল্প পড়তেন তখন কেমন মন খারাপ করত না? মনে হত না, এই যা পেয়েছির দেশে যদি একবার যেতে পারতাম! ঘুরে দেখতে পারতাম সাতমহলা প্রাসাদ, খেতে পারতাম রাজকীয় খাবার। চারদিকে আমার যত্ন নেওয়ার জন্য ঘোরাঘুরি করl সবাই! যা চাই তা নিমেষে হাজির করl মুখের সামনে। আপনার যদি এই সমস্ত শখ থাকে তবে তা পূরণ করতে সোজা চলে যান মুর্শিদাবাদের আজিমগঞ্জের হেরিটেজ হোটেল বড়ি কোঠিতে।
১৭০০ সালে তৈরি হয় বাড়ি কোঠি। শেরাওয়ালি পরিবারের সম্পত্তি ছিল এটা। রাজস্থান থেকে এক ব্যবসায়ী পরিবার সেই সময় বাংলার ব্য়বসায়িক প্রাণকেন্দ্র মুর্শিদাবাদে এসেছিল টেক্সটাইল আর ব্যাঙ্কিং সেক্টরে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে। আর তারপর এখানে জমিদারি স্থাপন করেন। বড়ি কোঠিতে থাকতেন শেরাওয়ালি পরিবারের বড় ভাই রাজ বাহাদুর বুধ সিং দুধোরিয়া। বলা হয়, ২০-৩০টা শেরাওয়ালি পরিবারের মোট যে সম্পত্তি ছিল সেই সময়, তা তখনকার ব্রিটিশদের থেকে বহুগুন বেশি।
তবে একসময় বেশিরভাগ শেরাওয়ালিরাই চলে যায় কলকাতা। আর এই সুন্দর স্থাপত্যগুলো নষ্ট হতে শুরু করে। বড়ি কোঠির হালও ছিল ওরকম। প্রায় পঞ্চাশ বছরের বেশি সময় ধরে পরিত্যক্ত ছিল এটি। অবশেষে ২০১৫ সালে কানাডিয়ান স্থাপত্যশিল্পী সমর চন্দ্রকে আমন্ত্রণ জানানো হয় এই প্যালেসের গৌরব পুনরুদ্ধারের জন্য। তারপর বড়ি কোঠি হয়ে ওঠে একটি লাক্সারি হেরিটেজ হোটেল। রাজার বাড়ি এটা না হলেও রাজকীয় আমেজের স্বাদ আপনি এখানে পাবেন। এক রাত কাটানোর দুর্দান্ত সুযোগ রয়েছে বড়ি কোঠিতে।
গঙ্গার একদম ধার ঘেঁষে এটা। বাড়ির ভিতরে নানা জায়গার নানা নাম, আগে সেখানে যে ধরনের কাজ হত তা অনুসারেই এই নাম রাখা হয়েছে। গদি ঘর, আগে যেখানে হিসেবনিকেশ রাখা হত, সেটাকে বানানো হয়েছে বসার ঘর। থাকার জন্য পেয়ে যাবেন ৩টি ক্যাটাগরির মোট ১৫টি সুইট। তিনটি খাবার ঘর রয়েছে এখানে- জারিন মহল, দরবার হল আর নৌবত খানা। তবে বড়ি কোঠিতে নিরামিষ খাবারই খেতে হবে আপনাকে। শেরাওয়ালি স্পেশ্যাল মারওয়ারি খাবার পরিবেশন করা হবে। পাবেন লাঞ্চ-হাই টি-স্ন্যাক্স-ডিনার-ব্রেকফাস্ট।
তবে এখানে যেমন রাত কাটানোর সুযোগ আছে, তেমন চাইলে সকাল থেকে সন্ধের ডে প্যাকেজ নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে আপনার প্যাকেজে আসবে ওয়েলকাম ড্রিংক, লাঞ্চ, চা আর বিকেলের স্ন্যাক্স। আরও পড়ুন: গলা কাটা ভূত দেখাও হবে, পাহাড়ের কোলে থাকাও! যান কার্শিয়াংয়ের ডাওহিলে
ঘরগুলোতে বিশাল বিশাল পালঙ্ক। রাজকীয় আসবাব যেমন আলনা, ট্রাঙ্ক, ড্রেসিং টেবিলের কাঠের উপর কারিগরি আপনার চোখ ধাঁধিয়ে দেবে। তবে স্থাপত্য পুরনো দিনের হলেও এসি থেকে গিজার, বর্তমানের সব বিলাসিতাও এখানে পাবেন। গোটা বাড়িটাই কিন্তু খুলে দেওয়া হয়েছে অতিথিদের জন্য। তাই পুরোটা ঘুরে দেখতেই লেগে যাবে প্রায় একবেলা। বাড়ির একদম ভিতরে রয়েছে নাটমন্দির। যেখানে দুর্গাপুজোও হয়। ঠিক তার সামনে বড়া আঙিনা।
বড়ি কোঠির বাগান পেরিয়ে আপনি হাঁটতে হাঁটতে চলে যেতে পারেন গঙ্গার ঘাটে। এখানেই বিকেলে চা বা কফি পরিবেশন করা হয়। তবে আপনি চাইলে নৌবিহার করতে করতেও বিকেলে সূর্যাস্তের মজা নিতে পারেন আর চুমুক দিতে পারেন চা বা কফির কাপে।
আরও পড়ুন: কলকাতা থেকে ৪ ঘণ্টা দূরে এক নতুন সি-বিচ, রাত কাটান টেন্টে ঝাউবনের ভিতরে
সন্ধের সময় গদি মহলে করা হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা। আলোর মালায় যখন সেজে ওঠে বড়ি কোঠি রাতের আঁধারে, যখন জ্বলে ওঠে সব ঝাড়বাতি তখন অপরূপ দেখতে লাগে। যা এক দারুণ অভিজ্ঞতা। রাত কাটিয়ে পরদিন সকালে ব্যবস্থা করা হয় হেরিটেজ ওয়াকের।
কীভাবে যাবেন: মুর্শিদাবাদের আজিমগঞ্চে বড়িকোঠি। শিয়ালদহ থেকে লালগোলা যাওয়ার ট্রেন ধরে নামুন মুর্শিদাবাদ। ওখান থেকে চলে যান আজিমগঞ্চে অবস্থিত বড়ি কোঠিতে। এখানে ডে আউটের খরচ পড়বে ২৫০০ থেকে ৫৫০০ টাকার মধ্যে। আর এক রাত এখানে থাকতে চাইলে খরচ বড়বে ১৪-২১ হাজার টাকা মতো। এর মধ্যেই পাবেন খাওয়া। কিছু প্যাকেজে আপনাকে ঘুরিয়ে দেখানো হবে মুর্শিদাবাদের দর্শনীয় স্থান।