HT Bangla Special: ওজন কমাতে ডায়েট ফলো করছেন। কিন্তু বাস্তবে মেদ ঝরছে না কিছুই (Weight Loss)। অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়া বা ইউটিউব দেখে বিশেষ ডায়েট ফলো করেন। কিন্তু প্রায়ই দেখা যায় লাভ হচ্ছে না। এর একটি বড় কারণ, ডায়েট সম্পর্কে কিছু ভুল ধারণা। কয়েকটি নির্দিষ্ট খাবার ওজন কমানোর সুপারফুড (Weight Loss Superfood) বলে পরিচিত হলেও সেগুলি কখন, কীভাবে খাচ্ছেন তার উপরেই নির্ভর করবে ওজন কমার হার। এই প্রসঙ্গেই হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার সঙ্গে কথা বললেন নারায়ণা হাসপাতালের ডায়েটিশিয়ান রাখি চট্টোপাধ্যায়।
সুপারফুড নিয়ে প্রচুর মিথ
‘এখন ইউটিউব, সোশ্যাল মিডিয়া দেখে ওয়েট লস ট্রেন্ডিং হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমার চেম্বারে এসে অনেকেই বলেন, একটা হেলদি ডায়েট চার্ট ফলো করি। কিন্তু সেই ডায়েট চার্টে অধিকাংশ সময়েই ভুলত্রুটি থাকে। যিনি ওজন ঝরাচ্ছেন, তাঁর খাবার সম্পর্কেও নানা মিথ (Weight Loss Superfood Myth) থাকে।’ ডায়েটিশিয়ান রাখির কথায়, ‘গ্রিন টি, ডার্ক চকোলেটের মতো বেশ কিছু খাবার অনেকের কাছে ওয়েট লসের সুপারফুড। কিন্তু খাওয়ার কিছু ভুলে সেগুলি ওজন কমানোর বদলে বাড়িয়ে দেয়।’
গ্রিন টি আদৌ ওজন কমায়?
রাখি চট্টোপাধ্যায় অভিজ্ঞতায়, ‘অনেকেই বলেন, সকালে ঘুম থেকে উঠে আমি গ্রিন টি খাই। এর কোনও মেডিকাল লজিক নেই। সকালে খালি পেটে গ্রিন টি খেলে মেটাবলিজম ফাস্ট হওয়ার বদলে স্লো হয়ে যায়। তাছাড়া, গ্রিন টি প্রচণ্ড অ্যাসিডিক। ফলে হজমের সমস্যা, গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হয়।’ তাহলে কি খাওয়া উচিত নয়? ডায়েটিশিয়ানের মতে, ‘নিশ্চয়ই খাবেন। কিন্তু সকালে নয়। খেতে হবে একটু ভারী খাবার খাওয়ার দুই থেকে আড়াই ঘন্টা পর। আর অবশ্যই চিনি ছাড়া।’
আরও পড়ুন - ফোর্ট উইলিয়ামের নয়া নাম ‘দেশে’ ফেরাল বর্গিদের? HT বাংলায় আলোচনায় ইতিহাসবিদ
অনেকেই খান ‘ভুল’ অ্যাপেল সাইডার ভিনিগার
অ্যাপেল সাইডার ভিনিগার ওজন কমানোর সুপারফুড হিসেবে বেশ জনপ্রিয়। কিন্তু অনেকেই বাজার থেকে সঠিক অ্যাপেল সাইডার ভিনিগার কেনেন না বলে জানাচ্ছেন ডায়েটিশিয়ান। তাঁর কথায়, ‘বেশিরভাগ মানুষই ফিল্টারড অ্যাপেল সাইডার ভিনিগার খান। এতে শরীরের প্রয়োজনীয় ভিটামিনস, মিনারেলস কিছুই থাকে না। তাই যখনই খান না কেন, আনফিল্টারড খান। সব ধরনের পুষ্টিগুণ শরীর পাবে।’ খাওয়ার নিয়মও মনে করিয়ে দিলেন রাখি। তাঁর মতে, ‘ইউটিউবে ভিডিয়োগুলিতে বলে, অ্যাপেল সাইডার ভিনিগার খেলেই তরতরিয়ে ওজন কমবে। কিন্তু খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে অনেকের ধারণা নেই। অ্যাপেল সাইডার ভিনিগার খেতে হবে খাওয়ার ১ ঘন্টা থেকে ৪০ মিনিট আগে। এক গ্লাস হালকা গরম জলে অর্ধেক টেবিল চামচের বেশি কখনই খাবেন না। আর অবশ্যই খাওয়ার পর মুখ কুলকুচি করে ধুয়ে নিতে হবে। নয়তো দাঁতের এনামেলের ক্ষতি হয়।’ তবে যারা অস্টিয়োআর্থ্রাইটিসের প্রচণ্ড ব্যথায় ভোগেন, তাদের এটি না-খাওয়াই ভালো। এতে ব্যথা বাড়তে পারে বলে জানালেন ডায়েটিশিয়ান
সারাজীবন ডার্ক চকোলেট খেলেও কমবে না ওজন
‘ডার্ক চকোলেট ওজন কমানোর আরেক ট্রেন্ড। অনেকেই নিয়ম করে এটি খান। কিন্তু কত পার্সেন্ট ডার্ক চকোলেট খাচ্ছেন, সেদিকে নজর দিতে হবে। ৫৫ পার্সেন্ট ডার্ক চকোলেট সারাজীবন খেয়ে গেলেও ওজন কমবে না। বরং এতে প্রচুর সুগার ও ট্রান্স ফ্যাট থাকায় ওজন বাড়বে। ওজন কমাতে অন্তত ৭০ বা ৭৫ পার্সেন্ট ডার্ক চকোলেট খাওয়া জরুরি। ৯৫ পার্সেন্ট আরও ভালো। তবে খালি পেটে নয়। ওয়ার্ক আউট করতে গেলে প্রিওয়ার্ক আউট হিসেবে ডার্ক চকোলেট খেতে পারেন। এছাড়া ইভনিং স্ন্যাকস হিসেবে খেতে পারেন।’
আরও পড়ুন - দরদর করে জলের মতো ঘাম ঝরে? ভিজে যায় জামা? হাইপারহাইড্রোসিস নিয়ে টিপস চিকিৎসকের
চিয়া সীডস কি ওয়েট লসের মোক্ষম দাওয়াই?
‘ওয়েট লসের দুনিয়ায় চরম জনপ্রিয় চিয়া সীডস। অনেকে একে মোক্ষম দাওয়াই বলে মনে করেন। কিন্তু আনরোস্টেড চিয়া সীডস খেলে সহজে হজম হয় না। তাই রোস্টেড চিয়া সীডস খান। একান্তই আনরোস্টেড চিয়া সীডস খেতে হলে একটু জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে। নয়তো চিয়া সীডসের এনজাইমগুলি সক্রিয় হয় না। হাতে সময় কম থাকলে রোস্ট করে গ্রাইন্ড করে রেখে দিন । এই পাউডার সহজেই জলে লেবুর রস দিয়ে খেতে পারেন। এছাড়া, দই বা ফলের স্যালাডের সঙ্গে খেতে পারেন।’
ভেজিটেবল জ্যুস দেদার খেলেও লাভ নেই কিছু
‘অনেকেই রোজ গ্লাসের পর গ্লাস ভেজিটেবল জ্যুস খান শুধু ওজন কমাবেন বলে। কিন্তু লাভের লাভ কিছুই হয় না।’ কেন? রাখির মতে, ‘ভেজিটেবল জ্যুুস করে খেলে সবজির সব ফাইবার বেরিয়ে যায়। এই ফাইবারই পেট ভরাট রেখে খিদে কমায়। তাই জ্যুস খেলেও অনেকের এক ঘন্টা পর ফের খিদে পায়। ওজন কমাতে হলে জ্যুসের বদলে আসল ভেজিটেবলটাই খেতে হবে। স্যালাড হিসেবে খেতে পারেন। তবে খাবার খাওয়ার আগে খান। পরে নয়।’ শুধু খেলেই হবে না। খাওয়ার কিছু নিয়মও মেনে চলা জরুরি। তাহলেই অনেকটা ওজন ঝরিয়ে ফেলা সম্ভব বলে মত ডায়েটিশিয়ানের।
প্রতিবেদনটি চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে তাঁর মতামতের ভিত্তিতে লেখা। ব্যক্তিবিশেষ অনুযায়ী অনেক ক্ষেত্রেই বদলে যায় চিকিৎসা পদ্ধতি। তাই যে কোনও সমস্যায় শুধুমাত্র এই প্রতিবেদনের কথায় ভরসা না রেখে, ব্যক্তিগতভাবে চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।