দেশ স্বাধীন হয়, নতুন সভ্যতা এগিয়ে চলে নতুন নেতৃত্বে। কিন্তু ভয়ঙ্কর অতীত অনেক সময়েই যেন স্তব্ধ করে দেয় ইতিহাসকে। যেমন ঠিক ৫১ বছর আগের একটি দিন।বর্ষীয়ান বাংলাদেশিদের ঠিক ৫১ বছর আগের সেই দিনের কথা মনে আসলে শিউরে উঠতে হয়। ইতিহাস সেই কুখ্যাত অধ্যায়কে মনে রেখেছে ‘অপারেশন সার্চলাইট’ হিসেবে।
কী ছিল অপারেশন সার্চলাইট?
‘অপারেশন সার্চলাইট’ বর্বর পাকিস্তানি সৈন্যদের দ্বারা অত্যাচারের সেই ভয়ঙ্কর দিনের কথা মনে করায়। যখন স্বাধীনতার জন্য লড়াই করা বাংলাদেশিদের উপর গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল। সেই রাতে ঠিক কত জনকে খুন করা হয়েছিল, তার সঠিক সংখ্যা পাওয়া যায়নি। কিন্তু ইতিহাসবিদরা বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ ১০ হাজার থেকে ৩৫ হাজার মানুষকে স্রেফ নিকেশ করে দেওয়া হয়েছিল। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোও বাদ পড়েনি এই নৃশংসতা থেকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক ছাত্রছাত্রীকে মেরে ফেলা হয়েছিল এই দিন। পিলখানা আর রাজারবাগ এলাকা তছনছ করা হয়েছিল। যাঁরাই প্রতিবাদ বা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন, তাঁদেরকে চিরকালের মতো সরিয়ে দিয়েছিল পাকিস্তানি সেনা।
সংবাদপত্রও রেহাই পায়নি পাকিস্তানি বাহিনীর হাত থেকে। ‘দৈনিক ইত্তেফাক’-এর মতো অনেকের অফিস পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল এবং সাংবাদিক-সহ সকলকে জীবন্তদগ্ধ হতে হয়েছিল।
এই অপারেশন সার্চলাইটের আগে তৎকালীন পাকিস্তানি রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খান পালিয়ে লাহোর চলে গিয়েছিলেন আর ঢাকার কন্টিনেন্টাল হোটেল থেকে পুরো অত্যাচার সংঘটিত করেছিলেন তৎকালীন পাকিস্তান পিপলস পার্টির প্রধান জুলফিকার আলি ভুট্টো। পরের দিন অর্থাৎ ২৬ মার্চের সকালে জুলফিকার আলি ভুট্টো ঢাকা ছাড়ার আগে পাক সেনার প্রশংসা করে যান।
তবে এত কিছু করেও কি পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের আটকাতে পেরেছিল পাক হানাদাররা? ইতিহাসের অদ্ভুত পরিহাস, ওই ১৯৭১ সালের শেষেই স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হয়।
আজ শুধু বাংলাদেশি রা নন, সারা বিশ্বের মানুষ শ্রদ্ধা জানান সেই সমস্ত মানুষকে, যাঁরা ‘অপারেশন সার্চলাইট’-এর অমানবিক অত্যাচারে প্রাণ হারিয়েছিলেন। এই গণহত্যা সারা বিশ্ব কখনো ভোলেনি, ভুলবেও না!