রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘জনগণমন’ সাংবিধানিক ভাবে ‘ন্যাশনাল অ্যান্থেম’-এর স্বীকৃতি পেয়েছে। কিন্তু বাংলায় বা হিন্দিতে একে কী বলা হবে? জাতীয় সঙ্গীত নাকি জাতীয় স্তোত্র? নাকি অন্য কিছু? এই নিয়ে নানা মহলে নানা মতামত রয়েছে। এমনকী রাজনৈতিক স্তরেও এটি নিয়ে নানা ধরনের কাদা ছোড়াছুড়ির সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু সত্যিটা কী? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?
এই বিষয়ে প্রেসিডেন্সি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক এবং সংবিধান বিশেষজ্ঞ কৃত্যপ্রিয় ঘোষকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘জনগণমন’ হল ‘ন্যাশনাল অ্যান্থেম’। কিন্তু এর কোনও সুস্পষ্ট বাংলা বা হিন্দি নাম নেই। তাই আমরা একেই জাতীয় সঙ্গীতই বলতে পারি। তাতে কোনও অসুবিধা নেই।’ একই কথা বলেন সিটি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক শ্যামলেন্দু মজুমদারকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘বাংলা ভাষায় ন্যাশনাল অ্যান্থেমের কোনও অনুবাদ-নাম নেই। সেক্ষেত্রে আমরা একে জাতীয় সঙ্গীত হিসাবেই ডাকতে পারি।’
(আরও পড়ুন: স্বাধীনতা দিবসে পাকিস্তান থেকে এল 'উপহার!' ভারতের জাতীয় সঙ্গীতের সুরধ্বনিতে রবাব-বাদক করলেন মুগ্ধ)
(আরও পড়ুন: কবে থেকে জনগণমন ভারতের জাতীয় সংগীত? রইল ইতিহাস-তাৎপর্য)
এবার প্রশ্ন হল বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘বন্দে মাতরম’ তাহলে কী? এই নিয়েও অনেকের মনে নানা প্রশ্ন রয়েছে। কারও মতে, যেহেতু এটি ‘ন্যাশনাল সং’ তাই এটিকেই বাংলায় জাতীয় গীত, জাতীয় গান বা জাতীয় সঙ্গীত বলা উচিত। এই কথাটি কি আদৌ ঠিক? কৃত্যপ্রিয়বাবুর মতে, ‘বিষয়টি এরকম নয়। কারণ সংবিধানে ‘বন্দে মাতরম’ সম্পর্কে এমন কিছু বলা হয়নি। তাই একে সাংবিধানিক ভাবে জাতীয় সঙ্গীত বলা যাবে না।’
শ্যামলেন্দুবাবুর মতও অনেকটা একই রকম। তাঁর মতে, সংবিধান রচনার সময়ে জনগণমনকেই জাতীয় সঙ্গীত (ন্যাশনাল অ্যান্থেম) হিসাবে বেছে নেওয়া হয়েছিল, তার কারণ এটিতে দেশের সাংস্কৃতিক, ভৌগোলিক বৈচিত্র অত্যন্ত সুন্দরভাবে ধরা পড়েছে। পাশাপাশি এটি দেশের ঐতিহ্যেরও দারুণ প্রতিফলন ঘটায়।
(আরও পড়ুন: রবিঠাকুরের লেখা জাতীয় সঙ্গীত ৭ ঘণ্টা গাইলেন তেলাঙ্গানার কন্যা,গড়লেন বিশ্বরেকর্ড)
ভাষাগত বিভেদের জন্য বিতর্ক বা মতানৈক্য এড়াতে কী করা উচিত? শ্যামলেন্দুবাবুর মতে, বাংলায় লেখার সময়ে ‘জনগণমন’ প্রসঙ্গে জাতীয় সঙ্গীত কথাটি লিখলে সমস্যার কিছু নেই। তবে পাশে বন্ধনীর মধ্যে ‘ন্যাশনাল অ্যান্থেম’ কথাটি লিখে দিলে আর কোনও বিতর্ক থাকে না। তাঁর কথায়, জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে ‘জনগণমন’-র সাংবিধানিক স্বীকৃতি আছে ‘বন্দে মাতরম’-এর তা নেই— পার্থক্য এখানেই।
একই কথা কৃত্যপ্রিয়বাবুরও। তিনিও বলছেন, যেহেতু ‘বন্দে মাতরম’-এখনও পর্যন্ত কোনও সাংবিধানিক স্বীকৃতি নেই, তাই একে ‘দ্বিতীয় জাতীয় সঙ্গীত’ও বলা যেতে পারে। তবে এটি স্বীকৃত কোনও নাম নয়, একেবারেই বোঝানোর প্রয়োজনে ব্যবহার করা যেতে পারে। ‘জাতীয় শ্লোক’ বা ‘জাতীয় স্তোত্র’ও কেউ বলতে পারেন। তবে এগুলিও সংবিধান স্বীকৃত নয়। তাই কথাগুলিকে আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রয়োগ করার সুযোগ এখনও নেই।
এই খবরটি আপনি পড়তে পারেন HT App থেকেও। এবার HT App বাংলায়। HT App ডাউনলোড করার লিঙ্ক https://htipad.onelink.me/277p/p7me4aup