ঘটনাটা বছর দশেক আগেকার। সে সময়ে এক জনের সঙ্গে একটি প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ি। সম্পর্কটির আয়ুও নেহাত কম ছিল না। প্রায় বছর দুই। তার পরে সেটি ভেঙে যায়। কিন্তু সেই ঘটনা যে এভাবে তাড়া করে বেড়াবে— বুঝতে পারিনি।
পুরনো কথায় যাওয়ার আগে, আমার এখনকার কথা বলি। আমার বয়স এখন ৩৭ বছর। আমার বর একটি নামজাদা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী। ৬ বছর আগে আমাদের বিয়ে হয়। চাকরি প্রয়োজনে বরকে নানা জায়গায় যেতে হয়। আমিও সঙ্গে যাই। পেশাগতভাবে আমি একজন শিক্ষিকা। যদিও কোনও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত নই। প্রাইভেট টিউশন পড়াই। করোনাকালে যাবতীয় টিউশনগুলি অনলাইন নিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিলাম। ফলে এখন বরের সঙ্গে নানা জায়গায় গিয়ে থাকতেও খুব একটা অসুবিধা হয় না। নিজের কাজও সমান তালেই চালিয়ে যেতে পারি।
হালে এভাবেই এসে পড়লাম উত্তরাখণ্ডের এক শহরে। এখানকার অফিসের কিছু দায়িত্ব সামলানোর জন্য আমার বরকে এখানে পাঠানো হয়েছে। সব মিলিয়ে মোটামুটি ৬ মাস তো থাকতেই হবে। এখন সবে ১ মাস মতো কেটেছে।
ঘটনাটা ঘটল সপ্তাহ খানেক আগে। এক রবিবার সন্ধ্যায় এখানকার এক রেস্তোরাঁয় খেতে গিয়েছি দু’জনে। হঠাৎ পাশ থেকে কেউ একজন বেল উঠল, ‘চিনতে পারছো?’ এই গলা আমার পক্ষে ভোলা সম্ভব নয়। মানুষটিকে চেনার জন্য ঘাড় ঘোরানোর দরকার ছিল না। বুকের মধ্যে ধকধকানি শুরু হয়ে গিয়েছে আওয়াজ শুনেই।
মাথা ঘুরিয়ে তাকালাম। বাঁদিকে পিছনটায় সে দাঁড়িয়ে। সেই এক চেহারা, এক চাহুনি। মুখটা এই ক’বছরে বদলে গিয়েছে। এখন মোটা গোঁফ জায়গা নিয়েছে ঠোঁটের উপরে। কী বলব বুঝে উঠতে পারলাম না। একটু সৌজন্যমূলক হাসলাম।
আমার বর ওকে চেনে না। চেনার কথাও নয়। কখনও বলিনি ওর কথা। সে বেচারাও একটু অবাক হয়েছে এই ঘটনায়। আমি হতচকতি হয়ে একটু হেসে বললাম, ‘আরে! এখানে যে!’ তার পরে ওর নাম বলে বরের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিলাম। বললাম, পুরনো বন্ধু। অনেক দিন যোগাযোগ নেই।
আমাদের ও জিজ্ঞাসা করল, কোথায় থাকি? মোটামুটি পুরোটা জানার পর সেখান থেকে চলে গেল। এর পরেই শুরু হল যন্ত্রণা!
এই ‘ও’টি আর কেউ নয়, আার পুরনো প্রেমিক। ওর সঙ্গে আমার সম্পর্কটার কথা কীভাবে বলব জানি না। প্রথম দিকে আর পাঁচটা সাধারণ স্বাভাবিক প্রেমের মতোই ছিল সেটি। ও খুব ভালোবাসা দেখাতো। ওর কারণে আমার বাড়ির সঙ্গেও সমস্যা হয়েছিল। নানা কারণ বাড়ি থেকে সম্পর্ক মেনে নিতে চায়নি। তার একটা বড় কারণ, পাড়ায় ওর দুর্নাম। তবু আমি সম্পর্কটার মধ্যে থাকি। আমার মনে হয়েছিল, মানুষটা হয়তো খারাপ নয়।
কিন্তু আমার ভাবনা মোটেই ঠিক পথে হাঁটেনি। কয়েক মাস যেতে না যেতেই টের পেলাম ওর আসল রূপ। বেরিয়ে আসতে থাকল ভয়ঙ্কর একটা রূপ। আমাকে দিয়ে কী কী করাতো, ভাবলেও এখন শিউড়ে উঠি। আর কথার এদিক ওদিক হলই জুটত নির্যাতন। মানসিকটা তো ছেড়েই দিলাম, সারাক্ষণ শারীরিক নির্যাতনেরও অভাব হত না।
আজও শরীরে সে সব চিহ্ন বহন করে নিয়ে বেড়াই। কাছের মানুষটির প্রশ্নের উত্তরে ছোটবেলার চোটআঘাতের দাগ বলে উড়িয়ে দিতে হয়। ওই মানুষটিও সরল মনে উড়িয়ে দেয়।
সবই ঠিক হয়ে গিয়েছিল। ওই সম্পর্কটা থেকে ভেঙে বেরিয়ে আসি। নতুন করে জীবন শুরু করি। বিয়ে করি। কিন্তু হালের এই ঘটনা আবার জীবনে আবার সংকট ডেকে এনেছে।
সেদিন রেস্তোরাঁর সেই ঘটনার দু’জিন পরেই দুপুরে বাড়ির ডোরবেল বেজে উঠল। দরজার সামনে দেখি, মূর্তিমান দাঁড়িয়ে! আমি কথা বলতে চাইনি। চলে যেতে বললাম। তখন বলল, আমার ক’টা ছবি ওর কাছে আছে। ফোন থেকে সেগুলো দেখালো। বলল, এগুলো ফেরত দিতেই এসেছে। কীভাবে ফেরত দেবে বুঝতে পারছে না। বলেই সেই বীভৎস নোংরা হাসি।
সেদিনের মোত চলে গেলেও, ওর ইঙ্গিত বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না। ওই সম্পর্কটার এখন মনে পড়লে গা ঘিনঘিন করে! বুঝতে পারছি, ও আবার জোর করবে। কী করব?
বিশেষজ্ঞের জবাব:
সম্পর্কবিদ মৌমিতা গুপ্ত এই বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য:
আপনি অনেক দেরি করে ফেলেছেন। অনেক আগেই এই সমস্যার পথটা বন্ধ করে দেওয়া উচিত ছিল।
প্রথমেই বলে রাখি, আপনার বিয়ে কীভাবে হয়েছে, তা আপনি বলেননি। যদি প্রেম করে বিয়ে হয়ে থাকে, তাহলে তো বটেই, যদি বাড়ি থেকে ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে, তাহলেও বিয়ের আগেই আপনার ভবিষ্যৎ বরকে এই ঘটনার কথা জানানো উচিত ছিল। তাহলে এত জটিলতা হত না।
এর পরে প্রশ্ন হল, এখন আপনি কী করবেন? এক্ষেত্রে বলা দরকার, প্রথমেই বিষয়টি বরকে জানান। তিনি নিশ্চয়ই পুরো বিষয়টি বুঝতে পারবেন।
দ্বিতীয়ত, এমন সমস্যার জন্য মনোবিদ বা সম্পর্কবিদ নয়, আপনার দরকার আইনি পরামর্শের। দ্রুত কোনও উকিলের পরামর্শ নিন। তাঁর পরামর্শ মতো, প্রশাসনকে জানান। এ ধরনের ক্ষেত্রে আইন কড়া পদক্ষেপ করে।
শেষ বলার কথা, যদি মনে করেন, পুরনো কথা আপনাকে এখনও তাড়া করে বেড়াচ্ছে, তাহলে অবশ্যই পেশাদার মনোবিদের পরামর্শ নিন।