সুমেরু মহাসাগর এবং উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের মাঝখানে অবস্থিত গ্রিনল্যান্ড। যার কাছাকাছির দেশগুলির মধ্যে রয়েছে কানাডা ও আইসল্যান্ড।
অথচ, এই দেশের যাঁরা আদি বাসিন্দা, সেই ইনুয়িতদের দেখতে একেবারে মঙ্গোলীয় ধাঁচের এশীয়দের মতো! কিন্তু, এটা কীভাবে সম্ভব? গ্রিনল্যান্ড থেকে এশিয়ার দূরত্ব যে অনেক। আর আশপাশের উত্তর আমেরিকা বা ইউরোপীয় জনগোষ্ঠীকে তো এমনটা দেখতে নয়।
কথিত নানা কাহিনি এবং ইতিহাসে এর সূত্র পাওয়া যেতে পারে। সেই অনুসারে, বহু বহু বছর আগে ইনুয়িতরা নাকি এখানে থাকত না। তারা আসলে এসেছিল সুদূর সাইবেরিয়া এবং এশিয়ার অন্যান্য অংশ থেকে!
ইতিহাসে দাবি করা হয়, প্রায় ৫,০০০ বছর আগে ঘটেছিল এমনই এক আশ্চর্য এবং সুবিস্তৃত পরিব্রাজন বা অভিবাসন!বর্তমানে যে ইনুয়িতরা গ্রিনল্যান্ডের বাসিন্দা, তাঁদের পূর্বসূরিরা অত্যন্ত সঙ্কীর্ণ বেরিং স্ট্রেট হয়ে সুদূর সাইবেরিয়া এবং সংলগ্ন এলাকা থেকে গ্রিনল্যান্ডে পৌঁছেছিলেন।
প্রসঙ্গত, বেরিং স্ট্রেট হল এমন একটি ভূখণ্ড, যা অতীতে এশিয়ার সঙ্গে উত্তর আমেরিকাকে সংযুক্ত করত। এই রাস্তা ধরেই ইনুয়িতদের পূর্বপুরুষরা উত্তর মেরুর কঠোর জলবায়ুযুক্ত অঞ্চলে এসে পৌঁছয়। এবং পরবর্তীতে এই এলাকাতেই স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে।
এই এলাকায় বেঁচে থাকার জন্য ইনুয়িতদের পূর্বপুরুষদের অনেক নতুন নতুন জিনিস শিখতে হয়। তারা ক্রমেই দক্ষ শিকারী হয়ে ওঠে। বরফের সাহায্যে এক অসামান্য বাসস্থান তৈরি করতে শেখে। যা সারা বিশ্বের ইগলু নামে সুপরিচিত। এবং পালিত পশুর চামড়া সেলাই করে গরম পোশাক বানিয়ে ফেলে। যা উত্তর মেরু প্রদেশের কনকনে ঠান্ডাকে সামাল দিতে সক্ষম।
এছাড়া, তাদের খাদ্যাভাসেও প্রয়োজনী পরিবর্তন করতে হয়। যার রেশ আজও বিদ্যমান। এখানকার ইনুয়িতরা তাদের পুষ্টি অর্জন করে মূলত সামুদ্রিক বিভিন্ন খাবার থেকে। যার মধ্য়ে বিভিন্ন প্রজাতির তৈলাক্ত মাছ, সিল, এমনকী তিমি পর্যন্ত রয়েছে। এই ধরনের খাবার তাদের শরীরে সেই পরিমাণ শক্তি জোগাতে সক্ষম, যা এই ধরনের চরম জলবায়ুযুক্ত অঞ্চলে টিকে থাকার জন্য অত্যন্ত জরুরি।
ইনুয়িতরা যে এশীয় বংশোদ্ভূত, তার সবথেকে বড় প্রমাণ পাওয়া যায় তাদের চেহারায়। তাদের মুখ হয় চওড়া, চোয়ালের হাড় উঁচু হয় এবং তাদের চোখে আকার হীরকাকৃতিবিশিষ্ট।
তবে, এই এলাকায় বাসস্থান গড়া যে কতটা ভয়ঙ্কর, তা বোঝা যায় ইনুয়িতদের জীবন যুদ্ধ থেকে। যেহেতু তারা দীর্ঘ সময় বরফের খোলা প্রান্তরে কাটায় এবং সেই প্রান্তরে সূর্যের তীব্র রশ্মি সরাসরি প্রতিফলিত হয়, তার ফলে অনেক সময়েই ইনুয়িতদের মধ্য়ে স্নো ব্লাইন্ডনেস-এর সমস্যা দেখা দেয়।
এই সমস্যা মোকাবিলা করার জন্য ইনুয়িতদের শরীরেই এক ধরনের বিশেষ 'রোদ চশমা' তৈরি হয়ে গিয়েছে। যা বরফ থেকে প্রতিফলিত তীব্র সূর্যের আলো থেকে তাদের চোখ রক্ষা করে। আসলে তাদের চোখের উপর চামড়ার একটি আস্তরণ তৈরি হয়ে গিয়েছে। যা মঙ্গোলীয় মুখাবয়বের সঙ্গে মিলে যায়।