বাংলা নিউজ > টুকিটাকি > ময়দানের এই হরিণকে আজও ভোলেননি কেউ, অবসর নিলেও প্রতিটি ঘাসে লেখা আছে তাঁর নাম

ময়দানের এই হরিণকে আজও ভোলেননি কেউ, অবসর নিলেও প্রতিটি ঘাসে লেখা আছে তাঁর নাম

ভারতীয় ফুটবল তাঁকে ভুলতে পারবে না কখনও। 

সোমবার আই এম বিজয়নের জন্মদিন। তাঁকে কেন ভারতীয় ফুটবল কোনও দিন ভুলতে পারবে না?

রণবীর ভট্টাচার্য

আই এম বিজয়ন, এক লপ্তে বললে মনে পড়ে সেই হার-না-মানা এক রোখা ফুটবলারকে, যেন নিজের নাম ঘোষণা করছেন। কলকাতার ময়দানে তিনি নেই অনেক দিন, বরং মালয়ালি সিনেমায় মারকাটারি সিনেমায় ব্যস্ত পুলিশে চাকরির সঙ্গে সঙ্গে। কিন্তু ফুটবলার আই এম বিজয়নকে কি ভোলা যায় কোনও দিন? সোমবার তাঁর জন্মদিন।

এখন আইএসএলের রমরমা। দেশবিদেশের বুড়ো বা হাফ-বুড়ো কিংবা দ্বিতীয়-তৃতীয় ডিভিশনের ফুটবলারদের নিয়ে অদ্ভুত এক্সপেরিমেন্ট চলছে তো চলছেই ভারতীয় ফুটবলে। আন্তর্জাতিক র‌্যাঙ্কিংয়ের দিক থেকে ভারতের অবস্থা বলার মতো না। বরং হতাশা বেড়েছে অনেকটাই। করোনার দৌলতে আইএসএল বাদ দিয়ে বাকি ট্রফিগুলো টিমটিম করে জ্বলছে। আজকের প্রজন্মের কাছে রোভার্স, ডিসিএম, বরদলুই, নেহরু কাপ অতীতের ছায়া মাত্র। শিল্ড এখন নমো নমো করে হয়। আর জাতীয় লিগ তো কবেই দুয়োরানি হয়ে গিয়েছে। তবে নব্বইয়ের দশকের বাঙালি ফুটবলপ্রেমীদের কাছে আজও বিজয়ন, ভাইচুং, জো পল আনচেরি, ব্রুনো কুটিনহোর মতো নামগুলো বড্ড চেনা। পেশাদার লিগ সদ্য শুরু হয়েছে আর তিন প্রধানের দাপট কিছুটা হলেও খর্ব হতে শুরু হয়েছে — ঠিক এই সময়ে কেরালার এক অখ্যাত পরিবার থেকে উঠে আসা আই এম বিজয়নের সুপারস্টার হয়ে ওঠা কম রোমহর্ষক নয়! কে বলবে এই খেলোয়াড় প্রথম জীবনে অভাবের তাড়নায় ত্রিশূড় মিউনিসিপ্যাল স্টেডিয়ামের বাইরে সোডা বোতল বিক্রি করতেন।

দুই বড় দল ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানের পাশাপাশি কেরালা এফ সি, জেসিটি, এফ সি কোচিন, কেরালা পুলিশ,চার্চিল ব্রাদার্সের মতো প্রথম সারির টিমের হয়ে দাপিয়ে খেলেছেন বিজয়ন। দেশের হয়ে খেলার সময়েও একই রকম সফল বিজয়ন। অর্জুন পুরস্কারের সঙ্গে রয়েছে পদ্মশ্রীও। ১৯৯১ থেকে ২০০৩ পর্যন্ত দেশের জার্সিতে বিজয়নের রয়েছে ৮৮ ম্যাচে ৩৯ গোল। ১৯৯৯ সালে সাফ কাপে ভুটানের বিরুদ্ধে ১২ সেকেন্ডে করা গোলটি তো রূপকথা হয়ে গিয়েছে। তবে খেলা থেকে অবসর নেওয়ার পর তরুণ খেলোয়াড়দের জন্য একাডেমি চালান বিজয়ন।

সিনেমা হোক কিংবা পুলিশ হিসেবে দায়িত্ব, নিজের কাজের ক্ষেত্রে কখনও সেরার চেয়ে একটুও কম দেন না আই এম বিজয়ন। এখনও ফুটবল নিয়ে নেমে পড়লে ম্যাজিক তো হবেই। তিনি কি ভাইচুং এর ছায়ায় থেকে কিছুটা কম প্রচারের আলো পেয়েছেন? বিজয়নকে জিজ্ঞেস করলে কোন উত্তর পাওয়া যাবে না। কারণ তিনি ছিলেন অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্লেমেকার, খেলা তৈরি করতেন। যেই মানুষটি খেলার মাঠে পেন্ডুলামের মতো দুলতেন দলের স্বার্থে, তার কাছে ব্যক্তিগত স্বার্থের কোনও জায়গাই নেই সেই ভাবে।

তবে ভারতীয় ফুটবলের জন্য নতুন কালো হরিণ চাই। অবসরের কাছে এসে যাওয়া ফুটবলারদের সঙ্গে খেলে শেখার সুযোগ কম। এখন দক্ষিণ ভারত থেকে বিজয়নের মাপের ফুটবলার উঠে আসে না কেন, সেটিও ভাবার মতো।

বন্ধ করুন