আজ, ২১ সেপ্টেম্বর বিশ্ব অ্যালজাইমার্স দিবস। বিশ্বব্যাপী জনগণের মধ্যে অ্যালজাইমার্স সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তোলাই এই দিন পালনের অন্যতম লক্ষণ।
১৯০১ সালে অ্যালয়েস অ্যালজাইমার নামক এক জার্মান সায়কিয়াট্রিস্ট এক ৫০ বছর বয়সী জার্মান মহিলার মধ্যে এই রোগের লক্ষণ খুঁজে পান। পরবর্তী কালে তাঁর নামেই এই রোগের নামকরণ করা হয়। এর পর ১৯৮৪ সালে অ্যালজাইমার ডিজিস ইন্টারন্যাশনাল স্থাপিত হয়। ১৯৯৪ সালে এই সংগঠনের দশম বার্ষিকীতে ঘোষণা করা হয় যে, প্রতি বছর ২১ সেপ্টেম্বর বিশ্ব অ্যালজাইমার্স দিবস পালিত হবে। তবে বিশ্ব অ্যালজাইমার্স মাসের সূচনা হয় ২০১২ সালে।
অ্যালজাইমার্স একটি নিউরোডিজেনারেটিভ রোগ, যা সাধারণত ৬৫-র ঊর্ধ্বে ব্যক্তিদের মধ্যে দেখা যায়। এই রোগ জীবনের গুণমানকে ব্যাপক ভাবে প্রভাবিত করে। এটি সারা বিশ্বে ডিমেনশিয়ার সবচেয়ে সাধারণ কারণ। বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে অ্যালজাইমার্সের প্রাথমিক লক্ষণগুলির প্রতি সচেতন হওয়া অত্যন্ত জরুরি।
স্নায়ু ডিজেনারেশানের কারণে অ্যালজাইমার্স হয়, যা স্মৃতি ও ব্যবহারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত অ্যানাটমিকাল এলাকার কর্মহীনতাকে উত্তোরত্তোর বাড়িয়ে দেয়। মুলুন্দের ফর্টিস হাসপাতালের কনসালটেন্ট নিউরোলজিস্ট ডঃ রাজেশ বেনি জানিয়েছেন যে, ‘অ্যামিলয়েড ও নিউরোফাইব্রিল্যারি ট্যাঙ্গলযুক্ত সেনাইল প্লাক জমার ফলে এমন হয়। হিপ্পোক্যাম্পাসে সেনাইল প্লাক জমতে শুরু করে, যা সাম্প্রতিক স্মৃতিশক্তির সঙ্গে জড়িত সর্বাধিক জটিল পরিকাঠামো। এই রোগ বাড়তে শুরু করলে মস্তিষ্কের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে।’
এর ফলে ব্যক্তির স্মৃতি, ব্যবহার ও যোগাযোগ স্কিলের মধ্যে পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। এটি অ্যালজাইমার্সের প্রাথমিক স্তর এবং এ সময় স্নায়ু রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
মাসিনা হাসপাতালের কনসালটেন্ট নিউরোসার্জেন, স্ট্রোক স্পেশ্যালিস্ট এবং নিউরোইন্টারভেনশানিস্ট ড: রাজ আগরবাত্তিওয়ালা অ্যালজাইমার্সের কিছু প্রাথমিক লক্ষণ সম্পর্কে জানিয়েছেন—
স্মৃতি শক্তি হারিয়ে ফেলা- এটি অ্যালজাইমার্সের প্রধান লক্ষণ। ভুলে যাওয়া কোনও রোগ নয়। কিন্তু অ্যালজাইমার্সে ব্যক্তি ঘন ঘন এবং খুব বাজে ভাবে কিছু না-কিছু ভুলে যেতে থাকে। যেমন- এক-দুদিন আগের ঘটনা তো মনে থাকেই না, পাশাপাশি বাড়ির বাথরুম কোথায়, চাবি বা কোনও দরকারি জিনিস কোথায় রেখেছেন, সে সব কিছুই তখন মনে করতে পারে না ওই রোগী। এক-দুবার নয়, বার বার ভুলতে থাকেন।
টাকার হিসেবে সমস্যা- কোনও ব্যক্তি যদি প্রায়ই টাকা হিসেব করতে, টাকা যত্নে রাখতে বা বিল জমা দিতে ভুলে যাচ্ছেন, তা হলে সেটিও অ্যালজাইমার্সের প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে।
অবসাদ ও মেজাজ পরিবর্তন- অ্যালজাইমার্স আক্রান্ত ব্যক্তির মেজাজ পাল্টাতে থাকবে ঘনঘন। আবার অবসাদও এই রোগের প্রাথমিক লক্ষণের মধ্যে অন্যতম।
বিচার করতে অসুবিধা- অ্যালজাইমার্সের শিকার ব্যক্তি সঠিক বিষয় বিচার করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন না।
মনোযোগে সমস্যা দেখা দেয়- এতদিন ধরে যে কাজগুলি সহজেই করে এসেছেন, যা করতে হঠাৎই মনোনিবেশ করতে পারবেন না অ্যালজাইমার্স আক্রান্ত কোনও ব্যক্তি। এই মনোযোগহীনতাই এই রোগের অন্যতম প্রাথমিক লক্ষণ।
যোগাযোগে অসুবিধা- সঠিক শব্দ জুড়ে বাক্য গড়ে তুলতে ব্যর্থ হবেন অ্যালজাইমার্স আক্রান্তরা।
অস্থিরতা- এ সময় ব্যক্তি নিজের আত্মীয়স্বজনদের চিনতে পারেন না। অত্যধিক অস্থিরতা লক্ষ্য করা যায় এঁদের মধ্যে। আবার কোনও কারণ ছাড়াই এদিক ওদিক হাঁটাচলা করতে থাকেন। মাঝে মধ্যে হ্যালুসিনেশানেরও শিকার হতে পারেন অ্যালজাইমার্স আক্রান্ত ব্যক্তি।
সাধারণত রোগী এই সমস্ত সমস্যা সম্পর্কে সচেতন থাকেন না। সে ক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যদের এই বিষয়গুলি নজরে রাখা উচিত। উপরিউক্ত কোনও লক্ষণ দেখা দিলে, দেরি না-করে স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে আলোচনা করুন।
তবে ড: আগরবত্তিওয়ালা জানিয়েছেন, ভিটামিন বি১২-এর অভাব, অবসাদ বা কিছু ক্রনিক রোগ অ্যালজাইমার্সের লক্ষণ মিমিক করতে পারে। এই রোগ নির্ণয়ের কোনও পরীক্ষা-নিরীক্ষা পদ্ধতি নেই বলে, স্মৃতিশক্তি হারানোর সমস্ত সম্ভাব্য দিক খতিয়ে দেখে এই রোগ নির্ণয় করা হয়।
অ্যালজারইমার আক্রান্ত ব্যক্তির সামাজিক ও পারিবারিক সহযোগিতা প্রয়োজন। কারণ এই রোগটি বেড়ে যাওয়ার পর ব্যক্তি নিজের যত্ন নিতে পারে না।