বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্য খাতে ক্যানসার এখন একটি বড় চ্যালেঞ্জ। প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রান কেড়ে নিচ্ছে এই নাছোড়বান্দা মারণ রোগ। ক্যানসার যে কারও হতে পারে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক বা বয়স্ক ব্যক্তি, এমনকি শিশুরাও এই মারাত্মক রোগ থেকে মুক্ত নয়। আর গবেষণার ভিত্তিতে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন যে আগামী বছরগুলিতে ভারতে ক্যানসারের চাপ আরও বাড়তে পারে। এমন পরিস্থিতিতে, ক্যানসারের ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং রোগটির প্রতিরোধ, সনাক্তকরণ এবং চিকিৎসাকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে প্রতি বছর ৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ক্যানসার দিবস পালিত হয়।
এইতো ২০২২ সালের কথা। সে বছর ভারতে ১৪.৬ লক্ষেরও বেশি মানুষের ক্যানসার ধরা পড়েছিল। গবেষকরা এদিকে আশঙ্কা করছেন যে এই বছর আক্রান্তের সংখ্যা ১২ শতাংশ থেকে ১৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে। হৃদরোগের পরে এই রোগটি বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর দ্বিতীয় বৃহত্তম কারণ।
তাই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, যেভাবে এই রোগটি বছরের পর বছর বেড়েই চলেছে, মানুষের উচিত এর বিপদ বুঝে, ছোটবেলা থেকেই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া। এ ক্ষেত্রে আমরা দৈনন্দিন রুটিনে এমন কিছু পরিবর্তন পারি, যা ক্যানসারের হাত থেকে রেহাই দিলেও দিতে পারে।
ক্যানসারের লক্ষণগুলির প্রতি মনোযোগ দিতে হবে
ক্যানসার বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে এই গুরুতর রোগ প্রতিরোধ এবং এর কারণে মৃত্যুর হার কমাতে মানুষের সচেতন হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভারতে ক্যানসারের ঘটনা এবং মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধির সবচেয়ে বড় কারণ হল সময়মতো ক্যানসার সনাক্ত না করতে পারা। যদি ক্যানসার লক্ষণগুলির প্রতি সময়মতো মনোযোগ দেওয়া হয় এবং এর চিকিৎসা শুরু করা যায়, তাহলে কেবল চিকিৎসাই সহজ হয় না, রোগীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
ক্যানসারের লক্ষণ
পুনের একটি হাসপাতালের ক্যানসার বিশেষজ্ঞ বলেন, যদি আপনার শরীরে কোনও অস্বাভাবিক পিণ্ড বা ক্ষত লক্ষ্য করেন, তাহলে সাবধান থাকুন। এটি ক্যানসারের সম্ভাব্য লক্ষণ হতে পারে। এছাড়াও, 'CAUTIONUS/ কশনস' সূত্রের সাহায্যেও আপনি ক্যানসার সনাক্ত করতে পারেন। যাদের পরিবারে ক্যানসারের হিস্ট্রি আছে, যারা বেশি রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শে আসেন, অথবা ধূমপান বা মদ্যপানের অভ্যাস আছে, তাঁদের আরও সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
কী এই 'কশনস/CAUTIONUS' সূত্র
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে 'কশনস'-এর সাহায্যে সময়মতো ক্যানসারের লক্ষণ সনাক্ত করা সম্ভব।
C - পরিবর্তন/Change (মল বা প্রস্রাবের অস্বাভাবিক পরিবর্তন)
A - ব্যথা/A Sore (ক্ষত নিরাময়ে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় নেয়)
U - অস্বাভাবিক/Unusual (শরীরের যে কোনও অংশ থেকে অস্বাভাবিক রক্তপাত)
T - ঘন হয়ে যাওয়া/Thickening (স্তন বা শরীরের যে কোনও অংশ থেকে ঘন রক্তপাত) )
I - বদহজম/Indigestion (বদহজম বা গিলতে অসুবিধা)
O - স্পষ্ট পরিবর্তন/Obvious change (শরীরে আঁচিল বা যে কোনও ধরণের দাগের বৃদ্ধি)
N - বিরক্তিকর কাশি/Nagging cough (কাশি বা কর্কশতা, কণ্ঠস্বরে পরিবর্তন)
U - রক্তাল্পতা/Unexplained Anemia (রক্তাল্পতা সমস্যা যা সুস্থ না হওয়া)
S - হঠাৎ ওজন হ্রাস/Sudden weight loss (হঠাৎ রোগা হয়ে যাওয়া)
আরও পড়ুন: (Cervical Cancer: মেনোপজের পরেও ঝুঁকি সার্ভিক্যাল ক্যানসারের, কী করলে কমে বিপদ? জানালেন ক্যানসার বিশেষজ্ঞ)
প্রসঙ্গত, ধূমপান বা গুটখা খাওয়া ক্যানসারের সবচেয়ে বড় কারণ, যা ভারতে প্রায় ৪০ শতাংশ ক্ষেত্রেই দায়ী। তামাকজাত দ্রব্য থেকে দূরে থাকলে প্রায় ১০ ধরনের ক্যানসারের ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো যেতে পারে বলে দাবি করছেন বিশেষজ্ঞরা।