গত তিন বছর ধরে করোনা ভাইরাসের কবলে রয়েছে সারা বিশ্ব। এখনও পর্যন্ত যে রোগের কোনও ওষুধ আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি। এই ভাইরাসের আক্রমণে প্রাণ হারিয়েছে অসংখ্য মানুষ । সংখ্যাটা হয়তো আরও বাড়তে পারত। যদি না চরম বিপদে রক্ষক হিসেবে আসত কোভিডের টিকা। ২০২০ সালে প্রথম কোভিডের টিকা আবিষ্কার হয়। যা বিশ্বজুড়ে প্রয়োগের ফলে রোগটির মারমুখী আক্রমণ অনেকটা ঠেকানো গিয়েছে।
করোনা ভাইরাসের আক্রমণের ফলে সারা বিশ্বেই টিকাকরণ নতুন করে প্রাধান্য পেয়েছে। আজ ১০ নভেম্বর সারা বিশ্বে পালন করা হচ্ছে আন্তর্জাতিক টিকাকরণ দিবস। টিকাকরণ সম্পর্কে সচেতনতা প্রসারের জন্য এই দিনটি পালন করা হয়ে থাকে।
যেকোনও রোগের আক্রমণ ঠেকাতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বরাবর প্রতিরোধক্ষমতা গড়ে তোলার দিকেই নজর দেয়। বিশেষজ্ঞদের কথায়, শিশুরা জন্মের সময় মায়ের থেকে কিছু রোগ প্রতিরোধক্ষমতা পায়। কিছু রোগ প্রতিরোধক্ষমতা তাকে পরিবেশ থেকে অর্জন করতে হয়। একেই অর্জিত অনাক্রম্যতা বলা হয়। টিকাকরণ এই প্রতিরোধক্ষমতা অর্জনের অন্যতম উপায়। টিকাকরণের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলা নানা কারণে জরুরি।
- কোনও বিশেষ রোগের নিরিখে তৈরি টিকা একবার বা কিছু নির্দিষ্ট সংখ্যক বার নিলে শরীরে দীর্ঘকালীন প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে। টিকা না নেওয়া থাকলে রোগে আক্রান্ত হলে বেলাগাম খরচ হতে পারে। চিকিৎসার মূল্যের হিসেবে টিকা যথেষ্ট সাশ্রয়ী।
- সঠিক সময় টিকা নেওয়া থাকলে সংক্রমক রোগের থেকেও রেহাই মেলে। সংক্রমক রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে বলেই টিকাকরণ এক্ষেত্রে প্রাথমিক শর্ত।
- যেসব দেশ অর্থনৈতিকভাবে পিছায়ে রয়েছে, সেসব দেশে টিকাকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। রোগের সংক্রমণ ও ছড়িয়ে পড়া আটকাতে বেশ কিছু দেশের সরকার বিনামূল্যে টিকা দেয়।
১৭৯৮ সালে প্রথম টিকা আবিষ্কার করেন এডওয়ার্ড জেনার। এরপর ধীরে ধীরে সারা বিশ্বেই ছড়িয়ে পড়ে টিকার মাহাত্ম্য। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতি বছর সারা বিশ্বে দুই থেকে তিন মিলিয়ন মানুষ টিকার কারণে মারণ রোগের কবল থেকে মুক্তি পান।
ভারতে প্রথম টিকাকরণ শুরু হয় ১৯৪৮ সাল নাগাদ। বিসিজি টিকা ছিল প্রথম টিকা। এই দেশে জাতীয় টিকাকরণের প্রকল্প শুরু হয় ১৯৭৭ সালে। গুটিবসন্ত প্রতিরোধে সারা দেশ জুড়ে এই প্রকল্প চলে। ২০১৪ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তরফে ভারতের নাম এনডেমিক রোগের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়। এর আগে টিকা না নেওয়ায় রোগে মৃত্যুর হার ছিল যথেষ্ট বেশি। কোভিডের টিকা আবিষ্কারের পর এখনও পর্যন্ত সারা দেশে ২১৯ কোটি টিকাকরণ হয়েছে। যা ভারতের এক নতুন মাইলফলক বলা যায়।