আজ বিশ্ব লিভার ডে। লিভার সুস্থ রাখতে সচেতনতা প্রসারের উদ্দেশে প্রতিবছর ১৯ এপ্রিল এই দিনটি পালিত হয়। শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ লিভার। শরীরের বিষাক্ত পদার্থগুলিকে নির্গত করে সুস্থ থাকতে সাহায্য করে লিভার। খাওয়া-দাওয়ার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ে এর ওপর। বিশ্ব লিভার দিবসে জানুন, কোন কোন খাবার লিভারের ক্ষতি করছে—
চিনি- শুধু দাঁতের জন্যই নয় বরং লিভারের জন্যও চিনি খারাপ। অধিক পরিমাণে রিফাইন্ড শুগার বা হাই ফ্রুক্টোজ ফ্যাট বৃদ্ধি করতে পারে। যার ফলে লিভারের সমস্যা দেখা দিতে পারে। কিছু কিছু সমীক্ষা অনুযায়ী মদের মতোই চিনিও লিভারের ক্ষতি করে।
রেড মিট- এতে প্রোটিন উপস্থিত থাকে, পাশাপাশি এগুলো সহজপাচ্যও নয়। অধিক রেড মিট খেলে লিভারে প্রোটিন জমা হয়ে যায় এবং এই অঙ্গটি খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সমীক্ষা অনুযায়ী, পর্যাপ্ত কার্বোহাইড্রেট ছাড়া অধিক পরিমাণে রেড মিট খেলে লিভারের সমস্যা বাড়তে পারে। তাই এর সঙ্গে পর্যাপ্ত পরিমাণে সবুজ শাকসবজি ও স্টার্চ খান।
ফাস্ট ফুড- ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, বার্গার, পিৎজা ইত্যাদি ভাজা খাদ্যদ্রব্যে অধিক পরিমাণে নুন ও স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে। অধিক পরিমাণে এগুলি খেলে লিভার সিরোসিস দেখা দেয়। এ ছাড়া জাঙ্ক ফুডে উপস্থিত হেভি ফ্যাট ও অন্যান্য কেমিক্যাল লিভারের পক্ষে ক্ষতিকর প্রমাণিত হতে পারে।
রেডি টু ইট ফুড- এ ধরণের খাবারে সোডিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকে। অধিক পরিমাণে সোডিয়াম খেলে শরীরের তরল পদার্থ ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। এর ফলে লিভারের ফিল্টারিং প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি হয়। আবার কিছু প্যাকেটজাত ও বেকড খাবার দাবার ট্রান্স ফ্যাট বাড়াতে পারে। ট্রান্স ফ্যাটের কারণে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত ওজন লিভারের পক্ষে ভালো নয়। তাই এ ধরণের খাবার কেনার পরিবর্তে ইনগ্রিডিয়েন্টস লিস্ট দেখে নিন।
সফট ড্রিঙ্ক ও সোডা- এ ধরণের ড্রিঙ্কস ওজন ও শরীরে মেদের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। এগুলি স্টেরিং সেল থেকে বেরিয়ে এসে লিভারে জমা হয়। এর ফলে লিভার ড্যামেজ হতে পারে। শুধু তাই নয়, ফ্যাটি লিভারের কারণে হৃদরোগ ও ক্যান্সারের মতো সমস্যাও দেখা দেয়।
অ্যালকোহল- অধিক পরিমাণে মদ্যপান লিভারের ওপর কুপ্রভাব বিস্তার করে। লিভার সুস্থ রাখার জন্য মদ্যপানের পরিমাণও নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখুন। পুরুষরা দিনে দুবার ও মহিলারা ১ বার মদ্যপান করতে পারেন।
নন অর্গ্যানিক ফুড- কেমিক্যাল প্রয়োগ করে উৎপন্ন নন অর্গ্যানিক ফুড, আমাদের শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর। পশুদের মধ্যে এ ধরণের খাবার হজম করার ক্ষমতা বেশি থাকে। কিন্তু এই খাবার আমাদের শরীরে গেলে কিডনি ও লিভারের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
সিলড ফুড- প্যাকেটজাত সিলড খাবারদাবারে অধিক পরিমাণে কেমিক্যাল থাকে। জুস, খাবার, সস, ক্যানড সুপ বা প্যাকেটজাত যে কোনও জিনিসে কেমিক্যাল থাকতে পারে। তবে প্যাকেটজাত শুকনো বেরি, বিন, কিসমিশ কেনা উচিত।
হার্বাল সাপ্লিমেন্ট- কিছু প্রাকৃতিক উপাদানও লিভারের ক্ষতিসাধন করতে পারে। মেনোপজের সময় স্বস্তি পেতে কিছু মহিলা কাওয়া জড়িবুটি খেয়ে থাকেন। সমীক্ষা অনুযায়ী, এটি লিভারকে সঠিক ভাবে কাজ করতে দেয় না। যার ফলে হেপাটাইটিস ও লিভার ফেল হয়ে যায়। কিছু দেশে এমন জড়িবুটির ওপর ব্যান লাগানো হয়েছে। তবে এ ধরণের কোনও জড়িবুটি গ্রহণ করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
ওষুধ- নানান ওষুধে কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়। এমনকি কিছু সাপ্লিমেন্টেও নানান ধরণের কেমিক্যাল পাওয়া যায়। তাই চিকিৎসকরা কোনও ওষুধ এক টানা খুব বেশি দিন ধরে খাওয়ার পরামর্শ দেন না। রোগ সেরে ওঠার পরই সেই ওষুধ বন্ধ করে দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
অধিক ভিটামিন এ সাপ্লিমেন্ট- ভিটামিন এ শরীরের পক্ষে উপকারী। তবে অধিক পরিমাণে ভিটামিন এ সাপ্লিমেন্ট খেয়ে থাকলে লিভারের ওপর এর প্রভাব পড়তে পারে। এর পরিবর্তে লাল, কমলা ও হলুদ রঙের ফলের মাধ্যমে ভিটামিন এ-র জোগান পূর্ণ করুন।
এসিটামিনোফেন- পিঠ, মাথাব্যথা বা সর্দি-কাশি হলে লোকে পেন কিলার খেয়ে থাকেন। তবে পেন কিলারের পরিমাণের ওপর নজর দিন। এই সমস্ত ওষুধে এসিটামিনোফেন থাকে, যা লিভারের ওপর বিরুপ প্রভাব বিস্তার করতে পারে। প্রয়োজনাতিরিক্ত ডোজের ফলে লিভার খারাপ হয়ে যেতে পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ এ ধরণের ওষুধ খান।
Disclaimer- এই প্রতিবেদনের নৈতিক দায়িত্ব হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার নয়। তাই পাঠকদের কাছে আবেদন জানানো হচ্ছে, যে কোনও উপায় অবলম্বনের পূর্বে যথাযথ সাবধানতা অবলম্বন করবেন। প্রয়োজনে চিকিৎসকদের পরামর্শ নেওয়ার পরামর্শ দেওয়ৈা হচ্ছে। আপনাদের তথ্য সমৃদ্ধ করাই আমাদের উদ্দেশ্য।