প্রতি বছর ১ অগস্ট ওয়ার্ল্ড লাঙ ক্যান্সার ডে পালিত হয়। ফুসফুসের সুস্বাস্থ্য সুনিশ্চিত করা এবং ফুসফুসের ক্যান্সারের প্রতি সচেতনতা প্রসারই এই দিনটি পালনের অন্যতম উদ্দেশ্য। কোন কোন কারণে ফুসফুস কর্কট রোগে আক্রান্ত হয় সে বিষয় সচেতনতা প্রসারের মাধ্যমে ফুসফুস সুস্থ রাখার পথ দেখানো হয়। এখানে জেনে নিন লাঙ ক্যান্সারের কারণ, লক্ষণ এবং কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন—
ফুসফুসের ক্যান্সার কী?
ফুসফুসের কোষগুলি অনিয়ন্ত্রিত ভাবে বেড়ে গিয়ে টিউমার তৈরি করলে সেটিকে ক্যান্সার বলা হয়।
কারণ
৯০ শতা্ংশ ক্ষেত্রে ধূমপানের কারণে ফুসফুসের ক্যান্সার হয়। এছাড়াও অন্ কিছু ক্ষতিকর পদার্থও লাঙ ক্যান্সারের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অনেক সময় ফুসফুসের ক্যান্সারের স্পষ্ট কোনও কারণও ধরা পড়ে না।
ধূমপান- সিগারেট, বিড়ির ধোঁয়া ফুসফুসের ক্ষতি করে। প্রাথমিক পর্যায় ফুসফুস এর মেরামতি করে নিতে পরে। কিন্তু লাগাতার ধোঁয়ার সংস্পর্শে থাকলে ফুসফুসের পক্ষেও তা সারিয়ে তোলা কষ্টকর হয়ে পড়ে। কোষগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হলে অস্বাভাবিক ব্যবহার করতে শুরু করে, যার ফলে ফুসফুসে ক্যান্সারের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
অন্যান্য ক্ষতিকর পদার্থ
দীর্ঘকাল ধরে বিপজ্জনক পদার্থের মধ্যে শ্বাস নিলে ফুসফুসের ক্যান্সার হতে পারে। অ্যাসবেস্টসে সংস্পর্শে থাকলে মেসোথেলিয়োমা নামক ফুসফুসের ক্যান্সারের সম্ভাবনা থেকে যায়। এ ছাড়াও—
- আর্সেনিক
- ক্যাডমিয়ম
- ক্রোমিয়ম
- নিকল
- কিছু পেট্রোলিয়ম পদার্থ
- ইউরেনিয়াম
লক্ষণ
প্রাথমিক পর্যায় এর বিশেষ কোনও লক্ষণ ধরা পড়ে না। এই রোগ বৃদ্ধি পেলে লক্ষণ প্রকাশ্যে আসে। সে ক্ষেত্রে যে লক্ষণগুলি দেখা যায়, তা হল—
১. ক্রমাগত কাশি।
২. সামান্য হলেও কাশির সঙ্গে রক্ত বেরিয়ে পড়া।
৩. শ্বাসকষ্ট।
৪. বুকে ব্যথা।
৫. গলা বসে যাওয়া।
৬. অকারণে ওজন কমে যাওয়া।
৭. হাড়ে ব্যথা।
৮. মাথা ব্যথা।
ফুসফুসের ক্যান্সার রোধের উপায়
১. ধূমপান করবেন না- ধূমপান না-করে থাকলে, তা শুরু করবেন না। এমনকি নিজের সন্তানের মধ্যেও এ বিষয় সচেতনতা বিস্তার করুন, যাতে তাঁরা কখনও ধূমপান না-করে।
২. ধূমপান বন্ধ করুন- আজই ধূমপান বন্ধ করুন। এর ফলে ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমবে।
৩. সেকেন্ড হ্যান্ড স্মোকিং এড়িয়ে যান- ধূমপায়ী কোনও ব্যক্তির সংস্পর্শে থাকলে ধূমপানের ধোঁয়া আপনার জন্যও ক্ষতিকর। এই সেকেন্ড হ্যান্ড স্মোকিং আপনার ফুসফুসের ক্যান্সারের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিতে পারে।
৪. কার্সিনোজেনিক পদার্থ থেকে বাঁচার চেষ্টা করুন।
৫. ফল ও সবজি বেশি করে খান- বিভিন্ন ফল ও সবজির মধ্যে ভিটামিন-সহ নানান পুষ্টিকর উপাদান থাকে। সেগুলি খান।
৬. নিয়মিত এক্সারসাইজ করুন- নিজেকে ফিট রাখার জন্য নিয়মিত এক্সারসাইজ করুন।
লাঙ ক্যান্সার ধরা পড়লে খাদ্য তালিকা কেমন হওয়া উচিত?
১. ভিটামিন সি- কর্কট রোগের ক্ষেত্রে ভিটামিব সি সমৃদ্ধ খাবার-দাবার বেশি করে খান।
২. ক্যারোটিনয়েড- সবুজ, লাল, হলুদ, কমলা সবজিতে এই উপাদানটি পাওয়া যায়।
৩. সেলেনিয়ম- ব্রাজিল নাট, সূর্যমুখীর বীজ, তিল, মাছ, নানান সিফুড, ডিম, মাংস ও গোটা অন্নে সেলেনিয়ম পাওয়া যায়।
৪. কারকিউমিন- হলুদে কারকিউমিন পাওয়া যায়। এই কারকিউমিন ঔষধী গুণে সমৃদ্ধ।
৫. সোয়া- তোফু, টেম্পে, সোয়া সস, সোয়া মিল্ক খাদ্য তালিকা অন্তর্ভূক্ত করুন।
৬. ভিটামিন ডি৩- ফর্টিফায়েড খাদ্য দ্রব্য এবং সূর্য রশ্মি এবং ভিটামিন ডি৩ সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করুন।
৭. গ্রিন টি- এতে পলিফেনল নামক ক্যান্সার প্রতিরোধক উপাদান থাকে। নিয়মিত দিনে দুবার গ্রিন টি পান করুন।
উল্লেখ্য, কাশি, কাশির সঙ্গে রক্ত, বুকে ব্যথার মতো লক্ষণ বার বার দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। ক্যান্সার ধরা পড়লে চিকিৎসার পাশাপাশি খাওয়া-দওয়ার যত্ন নিতে হবে।