রণবীর ভট্টাচার্য
আজকের দিন পরিবেশের জন্য বেশ আলাদা। পরিযায়ী পাখিদের নিয়ে ভাবার দিন আজ। সারা পৃথিবীতে পরিযায়ী পাখিদের গুরুত্ব, পরিবেশের নিরিখে তাদের গতিপ্রকৃতি আর জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে চর্চার জন্য বরাদ্দ মে মাসের দ্বিতীয় শনিবার। ২০০৬ সাল থেকে রাষ্টপুঞ্জ এই বিশেষ দিন উদযাপনের বিষয়ে ঘোষণা করে এবং আপাতত বিশ্বের ১১৮টি দেশ যোগ দিয়েছে এই উপলক্ষ্যে। এই বছর World Migratory Bird Day এর থিম হল পরিযায়ী পাখিদের উপর আলোর দূষণের প্রভাব। বলাই বাহুল্য, বিষয়টি গুরুগম্ভীর এবং সব দেশের জন্য প্রযোজ্য।
ইতিহাসের পাতায় রয়েছে চিঠি বা বার্তাবহনকারী পায়রাদের কথা যারা এক শহর থেকে আরেক শহর পাড়ি দিত। তাদের জিপিএস লাগত না, আজকের দিনেও লাগে না। বিশেষ করে পায়রার মতো এমন কিছু পাখি আছে যাদের রীতিমত প্রশিক্ষণ দেওয়া যায়। হ্যারি পটারের সেই পোষা প্যাঁচা হেডউইগের কথা মনে আছে? জাদুর বিশ্বেও কিন্তু দূরদূরান্ত পাড়ি দেওয়ার কথা বলা রয়েছে পাখিদের। তবে বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়ে কিন্তু পরিস্থিতি বেশ সঙ্গীন পরিযায়ী পাখিদের। সাঁতরাগাছির ঝিলের মতো ভারত জুড়ে এরকম অনেক ঝিল, জঙ্গল রয়েছে যেখানে বছরে বিভিন্ন সময়ে দেখা দেয় পরিযায়ী পাখিরা। গ্রেটার ফ্ল্যামেঙ্গো বা রুডি শেলডাকের মতো হাঁস কিংবা শীতকালে আসা ইউরেশিয়ান স্পেরোহক-লিস্ট কিন্তু নেহাৎ ছোট নয়!
তবে কোভিড পরবর্তী সময়ে পরিযায়ী শব্দের অর্থ বোধহয় সবচেয়ে বদলেছে। তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে পরিযায়ী শ্রমিকদের লকডাউনের সময় টানাপোড়েন, কাজের জায়গা থেকে বাড়ি ফেরার সময় বিড়ম্বনা, হতদরিদ্র অবস্থা— চোখ এড়ায়নি কারোরই। তারপর ধীরে ধীরে কোভিড দুর্বল হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে কিন্তু পরিযায়ী শ্রমিকদের কষ্টের কাহিনি মুছে যায়নি। কোথাও না কোথাও পরিযায়ী শ্রমিক আর পরিযায়ী পাখি একাকার হয়ে গিয়েছে।
পাখিরা প্রকৃতির সূচকের মতো। পরিবেশ কেমন রয়েছে তা যাচাই করার জন্য পাখির গতিপ্রকৃতি বোঝা খুব জরুরি। শহরের মতো গ্রামেও আজকাল উন্নয়নের মতো দাঁড়িয়ে রয়েছে মোবাইল টাওয়ার। এছাড়া অবৈজ্ঞানিক ভাবে গাছ কাটা তো রয়েছেই। কলকাতার মত শহরে আজকাল বাবুই পাখির বাসা কিংবা চড়াইয়ের দেখা পাওয়া দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে মানুষ দিব্যি খাঁচায় পাখি আটকে রাখাকে পোষ মানানো বলে চালিয়ে দিতে পারে। নিজেদের অস্তিত্ব ছাড়া অন্য প্রাণীদের নিয়ে তুচ্ছ তাচ্ছিল্যের মধ্যে পাখিরাও আর ব্যতিক্রম নয়। এরপর হয়তো মেলায় সেলফি তোলার জন্য রঙিন পাখি পাওয়া যাবে না!
ওদিকে রাশিয়া-ইউক্রেনের মারকাটারি রক্তলীলা থামার লক্ষণ নেই। সামনের শীতে সুদূর সাইবেরিয়ার পাখিরা ভারতে আসবে কি না, ভবিষৎই বলবে।