বিশ্বে চারজনের মধ্যে একজনেরই স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে মৃত্যুর নিরিখে এটাই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ঘাতক কারণ। এমনিতে যখন মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট জায়গায় রক্ত সঞ্চালিত হয় না, তখন স্ট্রোক হয়। রোজকার জীবনে এমন কিছু অভ্যাস থাকে, যে কারণে সেই স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়তে থাকে। একনজরে দেখে নিন -
খাবারে নুনের মাত্রা বেশি
যাঁরা বেশি নুন খান বা সম্পৃক্ত চর্বি, ট্রান্স ফ্যাট (কেক, কুকিজের মতো বেকড খাবার) এবং কোলেস্টেরল খান, তাঁদের স্ট্রোক এবং হৃদরোগের বেশি সম্ভাবনা থাকে। গুরুগ্রামের ফর্টিস মেমোরিয়াল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের স্নায়ুবিজ্ঞান বিভাগের প্রিন্সিপাল ডিরেক্টর এবং হেড প্রবীণ গুপ্ত বলেন, ‘বেশি নুন এবং নাইট্রেট সংরক্ষণের জিনিস থাকার কারণে বেশি প্যাকেজজাত বা ক্যানে ভরতি জিনিস খেলে স্ট্রোকের ঝুঁকির মাত্রা বেড়ে যায়। বেশি নুন-সহ খাবার খেলে রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়। যা চিরকালীন ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। ঠিকমতো ডায়েট মেনে চললে স্ট্রোকের সম্ভাবনা ৫০ শতাংশ কমে যায়। ’
নিষ্ক্রিয় জীবনযাপন
যাঁরা নিয়মিত শরীরচর্চা করেন না, তাঁদের স্ট্রোকের সম্ভাবনা থাকে। চিকিৎসক গুপ্ত জানিয়েছেন, বসে থাকা এবং স্থূলত্ব হল স্ট্রোকের অন্যতম কারণ। বসে বসে কাজ করলে মোটা হয়ে যাওয়া; রক্তচাপ, কোলেস্টেরল ও ডায়াবেটিস বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যা স্ট্রোকের সম্ভাবনা আরও বাড়িয়ে দেয়। নিয়মিত শরীরচর্চা করলে স্ট্রোকের সম্ভাবনা কমে যায়। তবে সেই শরীরচর্চা মানে যে জিমে যাওয়া রোজ, তেমনটা মোটেও নয়। চিকিৎসক গুপ্ত জানিয়েছেন, সপ্তাহে ১৫০ মিনিট হাঁটলেই স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেকটা কমে যেতে পারে।
মদ্যপান
যদি আপনি প্রচুর মদ্যপান করেন, তাহলে এখনই সামলে নিতে হবে। যদি স্ট্রোক এড়াতে চান, অবিলম্বে মদ্যপানের পরিমাণ কমিয়ে ফেলতে হবে। বেশি পরিমাণ মদ পান করলে রক্তচাপ বেড়ে যায়। যা একধাক্কায় স্ট্রোকের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তোলে। অ্যালকোহলের ফলে ট্রাইগ্লিসারিডের মাত্রা বেড়ে যায়। সেই ট্রাইগ্লিসারিড রক্তে থাকা এক ধরনের ফ্যাট। তার ফলে ধমনী ব্লক হয়ে যায়।
ধূমপান এবং তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার
স্ট্রোকের ধূমপান এবং তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের ফলে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়তে পারে। ধূমপানের ফলে আপনার হৃদপিণ্ড এবং রক্তনালী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যা স্ট্রোকের আশঙ্কা বাড়িয়ে তোলে। গুরুগ্রামের ফর্টিস মেমোরিয়াল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের স্নায়ুবিজ্ঞান বিভাগের প্রিন্সিপাল ডিরেক্টর জানিয়েছেন, সিগারেটে যে নিকোটিন থাকে, তা রক্তচাপ বাড়িয়ে তোলে। আপনার রক্তে যে পরিমাণ অক্সিজেন থাকে, তা কমিয়ে দেয় সিগারেটের কার্বন-মনোক্সাইড। আপনি যদি অন্য কারও খাওয়া সিগারেট নিয়ে ধূমপান করেন, তাহলে স্ট্রোকের ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়। সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের তরফে জানানো হয়েছে, কেউ যদি ধূমপান ছেড়ে দেন, তাহলে পাঁচ বছরের মধ্যে স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা সাধারণ মানুষের মতো হয়ে যায়।
কম ঘুম
ঠিকভাবে ঘুম না হলেও স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। ঘুমের অভাবে একধরনের হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়। যা রক্তচাপ বাড়িয়ে তোলে। প্রভাব পড়ে শরীরে। তাই স্ট্রোকের ঝুঁকি এড়াতে ভালো করে ঘুমানো অত্যন্ত জরুরি।