বাংলাদেশের ইতিহাস থেকে কি মুক্তিযুদ্ধের সমস্ত প্রমাণ মুছে ফেলতে উদ্যোগী হয়েছে মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার? বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত একাধিক প্রতিবেদনের জেরে বারবার এই প্রশ্ন উঠছেই।
তেমনই কিছু প্রতিবেদন সূত্রে জানা যাচ্ছে, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সামিল হওয়ায় বহু বুদ্ধিজীবীকে নৃশংসভাবে খুন করেছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী (তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তান)। সেই কুকীর্তিতে যোগ্য সঙ্গত দিয়েছিল স্থানীয় কট্টরপন্থী ও দুষ্কৃতীরা।
এর আগে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রকের তরফে স্থির করা হয়েছিল, নিষ্ঠুর, নির্মমভাবে খুন হওয়া ওই বুদ্ধিজীবীদের একটি সামগ্রিক তালিকা তৈরি করা হবে। কিন্তু, এখন শোনা যাচ্ছে, আপাতত সেই তালিকা তৈরির প্রক্রিয়া বিশ বাঁও জলে। বস্তুত, আবার কবে সেই তালিকা তৈরি করা হবে, কিংবা আদৌ আর কখনও সেই তালিকা তৈরি করা হবে কিনা, সেটাও স্পষ্ট নয়।
এই উদ্যোগ শুরু করা হয়েছিল ২০২০ সালে। কারণ, স্বাধীনতার পর প্রায় পাঁচ দশক কেটে গেলেও বাংলাদেশের ঠিক কতজন কৃতী সন্তানকে মুক্তিযুদ্ধের জন্য আত্মবলিদান দিতে হয়েছিল, তার কোনও পূর্ণাঙ্গ তালিকা ছিল না। সেই কারণেই এই তালিকা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। সেই কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল চলতি বছরের ১৬ ডিসেম্বর।
এর আগে গত চার বছরে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের তরফ থেকে চারটি গেজেট প্রকাশ করা হয়। তাতে মোট ৫৬০ জন শহিদ বুদ্ধিজীবীর নাম নথিভুক্ত করা হয়েছিল। জাতীয় কমিটির প্রস্তাব অনুসারে ওই নামগুলি তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল। সেই তালিকা স্ক্রুটিনি করার দায়িত্ব ছিল জাতীয় কমিটির অধীনস্ত একটি উপ-কমিটির উপর।
জাতীয় কমিটি এবং উপ-কমিটি এই ইস্যুতে শেষবার বৈঠকে বসেছিল যথাক্রমে চলতি বছরের ১৮ মার্চ এবং ১ জুলাই। দুই কমিটিরই সদস্যপদ রয়েছে, এমন এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, 'তারপর থেকে আজ পর্যন্ত আমরা এই বিষয়ে প্রশাসনের তরফে কোনও নির্দেশ পাইনি। আমার মনে হয় না, এই প্রয়াস আর কোনও দিন বাস্তবায়িত হবে।'
সূত্রের দাবি, অশান্ত বাংলাদেশে যাতে নতুন করে কোনও বিতর্ক তৈরি না হয়, তা নিশ্চিত করতেই আপাতত এই তালিকা তৈরির কাজ স্থগিত রেখেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রক।
মন্ত্রকের সচিব তথা সংশ্লিষ্ট জাতীয় কমিটির প্রধান ইশরাত চৌধুরী জানিয়েছেন, 'যেহেতু কোনও কমিটিই আর কাজ করছে না, তাই তালিকা নির্মাণের প্রক্রিয়া স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে। যদি আবার নতুন করে কমিটি তৈরি করা হয়, তাহলে হয়তো মুক্তিযুদ্ধের সময়কার শহিদ বুদ্ধিজীবীদের নামের তালিকা তৈরির কাজ নিয়ে ফের ভাবনা-চিন্তা করা হতে পারে।'