করোনাভাইরাসের 'সিঙ্গাপুর ভ্যারিয়েন্ট' নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে দিল্লি সরকারের তরজা চরমে উঠল। কেন্দ্রের কড়া জবাবের পালটা দিয়ে দিল্লির উপ-মুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসোদিয়া কটাক্ষ করেন, বিদেশে নিজের ভাবমূর্তির বিষয়ে চিন্তিত বিজেপি সরকার। কিন্তু দেশের শিশুদের পরোয়া করা হয় না।
বুধবার একটি সাংবাদিক বৈঠকে সিসোদিয়া দাবি করেন, করোনাভাইরাসের তৃতীয় ঢেউ নিয়ে রীতিমতো চিন্তিত দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। বিশেষত শিশুদের উপর বেশি প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কাপ্রকাশ করা হচ্ছে। সিঙ্গাপুরের শিক্ষামন্ত্রীও বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন যে শিশুদের মধ্যে সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়ছে। শুধু হেলদোল নেই নরেন্দ্র মোদী সরকারের। উলটে 'নোংরা' রাজনীতি শুরু করেছে বিজেপি। সিসোদিয়া বলেন, ‘বিষয়টা সিঙ্গাপুর নিয়ে নয়। আমাদের দেশের শিশুদের স্বার্থের বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের অভিভাবকরা তাঁদের ছেলেমেয়েদের নিয়ে চিন্তিত, সিঙ্গাপুরের কাছে ভারতের ভাবমূর্তি নিয়ে নয়। একটা পোস্টার পড়লেই খুশি হওয়ার জন্য আমাদের শিশুদের জন্য রাখা করোনা টিকা ওরা (কেন্দ্রীয় সরকার) অন্যান্য দেশে বেচে দিয়েছে। ওরা দেশের শিশুদের নিয়ে চিন্তিত নয়। বিজেপি এবং কেন্দ্রীয় সরকার বিশ্বজুড়ে নিজেদের ভাবমূর্তি নিয়ে চিন্তিত। কিন্তু আমরা আমাদের দেশের শিশুদের বিষয়ে ভাবব।’
মঙ্গলবার হিন্দিতে একটি টুইটবার্তায় কেজরিওয়াল বলেছিলেন, ‘সিঙ্গাপুরে করোনাভাইরাসের যে নয়া প্রজাতি এসেছে, তা শিশুদের জন্য অত্যধিক বিপজ্জনক বলে অনুমান করা হচ্ছে। ভারতে তা তৃতীয় ঢেউ (ওয়েভ) হিসেবে আসতে পারে। কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আর্জি - অবিলম্বে সিঙ্গাপুরের সঙ্গে উড়ান পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হোক এবং অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে শিশুদের টিকাকরণ করা হোক।’
সেই মন্তব্যের রেশ ধরে সিঙ্গাপুরের তরফে কড়া অবস্থান নেওয়া হয়। বিদেশ মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, সিঙ্গাপুরের করোনা ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে যে দাবি করেছেন কেজরিওয়াল, তাতে কোনও ভিত্তি নেই। ‘সিঙ্গাপুর ভ্যারিয়েন্ট’ বলে কিছু নেই। ‘গত কয়েক সপ্তাহে অনেক আক্রান্তের শরীরে যে করোনাভাইরাস প্রজাতির হদিশ মিলেছে, তা হল বি.১.৬১৭.২ ভ্যারিয়েন্ট। যা ভারত থেকে যেটির উৎপত্তি হয়েছে।’ সেইসঙ্গে সিঙ্গাপুরের দাবি, দেশে একাধিক ক্লাস্টারের সঙ্গে সেই বি.১.৬১৭.২ ভ্যারিয়েন্টের যোগের প্রমাণ মিলেছে।
সেখানেই অবশ্য থামেনি সিঙ্গাপুর। বুধবার ভারতীয় হাইকমিশনারকে তলব করে কেজরির মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানায়। পরে ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি টুইটারে বলেন, 'হাইকমিশনার স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে করোনা ভ্যারিয়েন্ট বা অসামরিক বিমান পরিবহনের নীতি নিয়ে বলার কোনও ক্ষমতা নেই দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর।' সেই টুইটের রেশ ধরে আরও কড়া ভাষায় বলেন, ‘যাই হোক, যাঁদের বেশি জানা উচিত যে দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্যের জন্য দীর্ঘদিনের সম্পর্ক খারাপ করে দিতে হবে। তাঁরাই সেটা করেছেন। তাই আমি স্পষ্ট করে দিতে চাই, দিল্লির মু্খ্যমন্ত্রী ভারতের তরফে কথা বলেন না।’