অর্থনৈতিক প্যাকেজের দাবি উঠেছিল সমাজের প্রায় সবস্তর থেকেই। রাহুল গান্ধী বলেছিলেন জিডিপি-র ৫ শতাংশ প্যাকেজ হিসাবে ঘোষণা করা উচিত। প্রায় কুড়ি মিনিট ধরে সাসপেন্স রেখে শেষ পর্যন্ত বড় খবরটি দিলেন প্রধানমন্ত্রী। ২০ লক্ষ কোটি টাকা অর্থাত্ জিডিপি-র দশ শতাংশ ব্যয় করা হবে অর্থনীতিকে স্বনির্ভর করার জন্য। আগামী দিনে এর বিস্তারিত হিসাব দেওয়া হবে। কিন্তু আজকের জন্য কার্যত বাকশূন্য অতি বড় সমালোচকরা।
করোনা মহামারীর জন্য এটা যে আপত্কালীন ত্রাণ নয়, কার্যত তিনি যে দেশের ভাবনা চিন্তাকে বদলাতে চাইছেন, এদিন বারবার তাঁর বক্তব্যে উঠে এল সেটি। তাই বারবার স্বনির্ভর হওয়ার ডাক, বিশ্বের বাজারে নিজেকে তুলে ধরার আবেদন। প্রধানমন্ত্রী বলেন আগের প্যাকেজ ও আরবিআই যা ঘোষণা করেছে, সেগুলিকে মিলিয়ে মোট ২০ লক্ষ কোটি টাকার প্যাকেজ দেওয়া হবে ও সেটা জমি, শ্রম, অর্থের জোগান ও ক্ষতি-চারটি বিষয় নিয়েই সমাধান দেবে।
কৃষি, চাষী, মধ্যবিত্ত, ব্যবসায়ী- সবার জন্যেই এই প্যাকেজ বলে জানান মোদী।এমএসএমই ও কুটির শিল্প, যেগুলি আত্মনির্ভর ভারতের বুনিয়াদ গড়ে, সেগুলির কথা বিশেষ করে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন আত্মনির্ভর হওয়ার জন্য অর্থনীতি, পরিকাঠামো, প্রযুক্তির সাহায্যে চালানো প্রক্রিয়া, ডেমোগ্রাফি ও চাহিদা-এই পাঁচটি স্তম্ভের ব্যবহার করতে হবে।
কৃষির ক্ষেত্রে পুরো সাপ্লাই চেনটি ঢেলে সাজাবার কথা বলেন তিনি। মোদী বলেন সংস্কার এমন ভাবে করা হবে যেখানে কর পদ্ধতি বদলাবে, আইনে সরলীকরণ আসবে, বিশ্বমানের প্রযুক্তি গড়া হবে, সক্ষম মানবসম্পদ থাকবে ও মজবুত আর্থিক ব্যবস্থা থাকবে।
মেক ইন ইন্ডিয়াকে খুব বড় ভাবে প্রমোট করা হবে, সেই কথাও বলেন তিনি। চিনের নাম না করেও মোদী ঘুরিয়ে বলেন নয়া অর্থনৈতিক শক্তি হয়ে আত্মপ্রকাশ করতে হবে ভারতকে। এরজন্য বিশ্বমানের মাল বানাতে হবে, সাপ্লাই চেইন ঠিক করতে হবে।
তিনি বলেন প্রথম স্তম্ভ অর্থনীতির ক্ষেত্রে ছোটোখাটো পরিবর্তন করলে চলবে না, বড় বদল দরকার। দ্বিতীয় স্তম্ভ পরিকাঠামোই আধুনিক ভারতের পরিচয় হবে বলে আশা করেন মোদী। তৃতীয় পিলার হিসাবে তিনি বলেন যে এখন আর আগের পদ্ধতি ফলো করা যাবে না, এমন সিস্টেম চাই যেগুলি প্রযুক্তির দ্বারা করা যায়। তিনি বলেন যে দেশের জনবিন্যাস চতুর্থ স্তম্ভ। এটিই হবে আত্মনির্ভর ভারতের উত্স, বলেন মোদী। পঞ্চম স্তম্ভ চাহিদাকে বৃদ্ধি করার জন্য সাপ্লাই চেন, অর্থাত্ যোগানোর পথ সুগম করতে হবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
স্বনির্ভর হওয়ার প্রসঙ্গে মোদী কীভাবে দেশে পিপিই কিট ও এন ৯৫ মাস্ক প্রস্তুত হওয়া শুরু হয়েছে, সেই প্রসঙ্গটি তোলেন। সারা বিশ্বে ভারত যেভাবে ওষুধ পৌঁছে দিচ্ছে, তারও উল্লেখ করেন মোদী। তিনি বলেন যে এই সংকটকে ব্যবহার করেই এই শতাব্দীকে ভারতের করে তুলবে দেশবাসী। সেই কারণেই এই অর্থনৈতিক প্যাকেজ, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন আর্থিক প্যাকেজে প্রান্তিক শ্রেণির মানুষ, পরিযায়ী, গরীব মানুষদের জন্য বিশেষ সুবিধা থাকে। এদিন মোদী বলেন লোকাল সম্বন্ধে ভোকাল হতে হবে। অর্থাত্ স্থানীয় জিনিস শুধু কিনলেই হবে না, সেটা গর্ব করে সবাইকে বলতে হবে। এই প্রসঙ্গে তিনি তাঁর খাদি কেনার ডাকে দেশবাসীর ইতিবাচক সাড়ার কথা বলেন।
কচ্চতে ভূমিকম্পের পর মনে করা হয়েছিল সব কিছু শেষ। কিন্তু আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে তাঁরা।সেই উদাহরণ দিয়ে দেশবাসীর মনোবল বৃদ্ধি করেন তিনি। একই সঙ্গে লকডাউন ৪-এর ঘোষণা করেন তিনি। তবে মোদী বলেন যে লকডাউনের চতুর্থ সংস্করণ আসবে নয়া নিয়ম ও নতুন রূপে। ১৮ মে-র আগেই সেটা জানিয়ে দেওয়া হবে বলেন প্রধানমন্ত্রী।
আগামী দিনে দেশে যে আর্থিক কর্মযজ্ঞ শুরু করতে চাইছে ভারত, এদিন তার ইঙ্গিত দেন প্রধানমন্ত্রী। এত টাকার আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করে যে রাজনৈতিক ভাবে মাস্টারস্ট্রোক দিয়েছেন মোদী, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।