বাংলা নিউজ > ঘরে বাইরে > ‘ইতিহাসের দৃষ্টিকোণ থেকে সংক্ষিপ্ত মুহূর্ত’, গালওয়ান সংঘর্ষ নিয়ে মত চিনা রাষ্ট্রদূতের

‘ইতিহাসের দৃষ্টিকোণ থেকে সংক্ষিপ্ত মুহূর্ত’, গালওয়ান সংঘর্ষ নিয়ে মত চিনা রাষ্ট্রদূতের

ভারতে নিযুক্ত চিনা রাষ্ট্রদূত সুন ওয়েইডং (ফাইল ছবি, সৌজন্য পিটিআই)

সুন বলেন, ‘প্রতিপক্ষের পরিবর্তে ভারতকে সহযোগী এবং বিপদের পরিবর্তে সুযোগ হিসেবে দেখে চিন।'

রেজাউল লস্কর

গালওয়ানে সংঘর্ষের কারণ হিসেবে এবার ভারত ও চিনের ঐতিহাসিক 'দৃষ্টিভঙ্গি'-কে জুড়ে দিলেন চিনা রাষ্ট্রদূত সুন ওয়েইডং। গত ১৫ জুনের সেই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষকে 'দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা' এবং 'ইতিহাসের দৃষ্টিকোণ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত মুহূর্ত' হিসেবে উল্লেখ করে ভারতে নিযুক্ত ওই চিনা আধিকারিক জানান, 'পার্থক্য বজায় রেখে একটি সাধারণ সিদ্ধান্ত'-এর অনুসন্ধান করা উচিত দু'পক্ষের।

গত ১৮ অগস্ট চিন-ভারত যুব ওয়েবমিনারে সেই মন্তব্য করেছিলেন সুন। তবে মঙ্গলবার তাঁর ভাষণ লিখিত আকারে প্রকাশ করেছে চিনা দূতাবাস। সেই ভাষণে ভারত ও চিনের মধ্যে যে 'ঐতিহাসিক যোগসূত্র' আছে, তার উপর জোর দিয়েছেন সুন। প্রাচীন সভ্যতা হিসেবে কীভাবে একে অপরকে শ্রদ্ধা জানানো এবং একই লক্ষ্যের দিকে অগ্রসর হওয়া উচিত, তাও তুলে ধরেছেন। 

তবে নিজের ভাষণ মাত্র একবারই গালওয়ান সংঘর্ষের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছেন চিনা রাষ্ট্রদূত। যে সংঘর্ষে ২০ জন ভারতীয় জওয়ান মারা গিয়েছিলেন। চিনের তরফেও হতাহতের সংখ্যা কম ছিল না বলে দাবি করেছে ভারত। তবে হতাহত ফৌজির সংখ্যা প্রকাশ করেনি বেজিং। সুন বলেন, ‘খুব একটা আগে নয়, সীমান্ত এলাকায় একটি দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটেছে, যা চিন বা ভারত কোনও দেশই দেখতে চায় না। বিষয়টি উপযুক্তভাবে সামলানোর কাজ করছি আমরা। এটা ইতিহাসের দৃষ্টিকোণ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত মুহূর্ত।’

সীমান্তে উত্তেজনা সত্ত্বেও নয়াদিল্লির প্রতি বেজিংয়ের ‘বন্ধুত্বপূর্ণ’ মনোভাব দিতে সুন দাবি করেন, ‘প্রতিপক্ষের পরিবর্তে ভারতকে সহযোগী এবং বিপদের পরিবর্তে সুযোগ হিসেবে দেখে চিন। আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের একটি উপযুক্ত জায়গায় সীমান্ত সংক্রান্ত বিষয় উত্থাপন করতে হবে, কথাবার্তা ও আলোচনার মাধ্যমে উপযুক্তভাবে মতবিরোধ সামলাতে হবে এবং যত দ্রুত সম্ভব দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আবার আগের মতো করতে হবে।’ তবে চিনা রাষ্ট্রদূতের সেই মন্তব্য নিয়ে বিদেশ মন্ত্রকের তরফে আপাতত কোনও প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয়নি।

‘বন্ধুত্বপূর্ণ’ ওয়েবমিনারে আবার ঘুরিয়ে ‘আত্মনির্ভর ভারত’ কর্মসূচি কতটা বাস্তবের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সুন। ‘আত্মনির্ভর ভারত’ উচ্চারণ না করলেও চিনা রাষ্ট্রদূত বলেন, 'কোনও দেশেই বাকি বিশ্বের থেকে আলাদা হয়ে নিজেই উন্নয়নের রাস্তায় হাঁটতে পারে না। আমাদের শুধু আত্মনির্ভরতা অনুসরণ করলেই হবে না, গ্লোবালাইজেশনের ধারা মেনে বহির্বিশ্বের কাছে উন্মুক্ত হওয়ার বিষয়ে (আমাদের) অনড় থাকতে হবে।' 

দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে একের পর এক ধাক্কা খাওয়ার রেশ ধরে তিনি বলেন, ‘আমার মতে, জোর করে আলাদা করে দেওয়ার পরিবর্তে চিন ও ভারতের অর্থনীতি একে অপরকে চুম্বকের মতো আকর্ষণ করা উচিত।’ একইসঙ্গে সেই পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য একাধিক ‘প্রমাণ’ তুলে ধরেন সুন। সেই চেষ্টার অঙ্গ হিসেবেই তিনি দাবি করেন, ভারতের প্রতি চিনের প্রাথমিক বিদেশ নীতি অপরিবর্তিত আছে। কেন সেই কথা বলছেন, তার স্বপক্ষে আবার তিনটি যুক্তিও খাড়া করেন। তাঁর দাবি, দু'দেশের মৌলিক জাতীয় অবস্থা অপরিবর্তিত আছে। বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতা ও উন্নয়ন যজ্ঞের কোনও পরিবর্তন হয়নি। একইসঙ্গে ‘এক অপরকে ছাড়া চিন ও ভারত যে সাধারণ কাঠামো গড়ে তুলতে পারবে না, তাও অপরিবর্তিত আছে’ বলে দাবি করেন সুন।

সেই পরিপ্রেক্ষিতে দু'দেশের সম্পর্ক আরও জোরদার করার জন্য একাধিক পরামর্শ বাতলে দেন চিনা রাষ্ট্রদূত। তিনি জানান, নিজেদের মধ্যে মতভেদ ঘোচানোর জন্য নয়াদিল্লি এবং বেজিংকে ‘বুদ্ধিদীপ্ত’ এবং ‘ যুক্তিসংগতভাবে’ একে অপরের সমস্যাগুলি বিবেচনা করতে হবে। সুনের মতে, ‘নিজস্ব মতধারার মাধ্যমে লাইন টেনে দেওয়ার মানসিকতা বর্জন’ করা উচিত দুই 'উদীয়মান গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশীর'। পাশাপাশি অপরের ক্ষতিতে নিজের লাভের পুরনো চিন্তাভাবনা ঝেড়ে ফেলে এগিয়ে যেতে হবে। নাহলে ‘ভুল পথে চালিত হবে’ দুই দেশই।

বন্ধ করুন