কেন্দ্র ও কৃষক সংগঠনের পাঁচ দফার বৈঠকেও কোনও সমাধানসূত্র বেরোয়নি। আগামিকাল (মঙ্গলবার) ভারত বনধেরও ডাক দিয়েছে কৃষক সংগঠনগুলি। তারইমধ্যে ঘুরিয়ে নয়া কৃষি আইনের স্বপক্ষে ব্যাট ধরলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দাবি করলেন, পুরনো আইন-কানুন দিয়ে নয়া শতক গড়ে তোলা যায় না।
সোমবার ভার্চুয়ালি আগ্রা মেট্রো প্রকল্পের উদ্বোধন করেন মোদী। সেখানে সংস্কারেরর তিনি বলেন, ‘উন্নয়নের জন্য সংস্কারের প্রয়োজন আছে। নয়া শাসন এবং নয়া পরিকাঠামো প্রদানের জন্য সংস্কার অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। আগের শতকের আইন নিয়ে আমরা নয়া শতক গড়তে পারি না।’
গত মাসের শেষ থেকেই দেশে ক্রমশ জোরালো হয়েছে কৃষক বিক্ষোভ। যে বিক্ষোভের শুরুটা মূলত পঞ্জাব, হরিয়ানা থেকে হয়েছিল, তা ক্রমশ দেশের অন্যান্য প্রান্তেও ছড়িয়ে পড়েছে। দিল্লির বিভিন্ন সীমান্তে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে একাধিক কৃষক সংগঠন। তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিত অনড় কৃষকরা। কেন্দ্রের সঙ্গে বৈঠকেও নিজেদের অবস্থান অনড় থেকেছেন কৃষক সংগঠনের প্রতিনিধিরাও। পাঁচ দফায় বৈঠক করেও কৃষকদের টলাতে পারেনি কেন্দ্র। ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের (এমএসপি) আশ্বাস দিয়েও কৃষকদের ক্ষোভ প্রশমন করতে পারেনি নরেন্দ্র মোদী সরকার। বরং চতুর্থ এবং পঞ্চম দফার বৈঠকে খাবার নিয়ে গিয়ে নিজেদের কঠোর অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছেন কৃষক প্রতিনিধিরা।
তারইমধ্যে সার্বিক সংস্কারের আশ্বাস দিয়ে মোদী বলেন, ‘গত শতকে কয়েকটি আইন ভালো ছিল। কিন্তু বর্তমান শতকে তা বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।’ কংগ্রেস জমানাকে দুষে তিনি বলেন, ‘আগে ঢিমেতালে বা কয়েকটি ক্ষেত্র এবং দফতরকে মাথায় রেখে সংস্কার হত।’
তবে কৃষকদের ক্ষোভ প্রশমনে এই প্রথম মোদী চেষ্টা করলেন না, গত মাসের ‘মন কি বাত’-এ সরাসরি কৃষি আইনের সুবিধা ব্যাখ্যা করেছিলেন। দাবি করেছিলেন, কৃষিক্ষেত্রে সংস্কারের ফলে চাষিরা নয়া সুযোগ পেয়েছেন। মোদী বলেছিলেন, ‘ভারতের কৃষি এবং সেই সংক্রান্ত কাজের ক্ষেত্রে নয়া দিক যোগ হচ্ছে। গত কয়েকদিনে কৃষিক্ষেত্রে যে সংস্কার হয়েছে, তা আমাদের চাষিদের জন্য সম্ভাবনার নয়া দিগন্ত উন্মোচন করেছে।’
মোদী দাবি করেছিলেন, দশকের পর দশক ধরে চাষিদের দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়ে এসেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলি। আদতে তা হয়নি। কিন্তু যাবতীয় খুঁটিনাটি বিবেচনার পর সংসদে নয়া কৃষি আইন পাশের মাধ্যমে কৃষকদের সেই দাবি পূরণ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘এই সংস্কারের ফলে শুধুমাত্র কৃষকদের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করেনি, তাঁদের নয়া অধিকার এবং সুযোগও এনে দিয়েছে। কৃষকরা যে সমস্যার সম্মুখীন হতেন, তা স্বল্প সময়ের মধ্যেই সমাধান করেছে এই অধিকারগুলি।’
মহারাষ্ট্রের কৃষক জিতেন্দ্র ভৌজির কাহিনি তুলে ধরে মোদী দাবি করেছিলেন, এতদিন যে টাকা পাচ্ছিলেন না, নয়া কৃষি আইনের মাধ্যমে তা আদায় করতে পেরেছেন তিনি। চার মাস আগে ফসল বিক্রি করলেও তিনি পুরো টাকা পাননি। কিন্তু নয়া আইনের আওতায় সেই টাকা ফেরত পেয়েছেন জিতেন্দ্র। যে আইন অনুযায়ী, শস্য কেনার তিনদিনের মধ্যে বাধ্যতামূলকভাবে চাষিদের টাকা মিটিয়ে দিতে হবে। মোদী বলেছিলেন, ‘যদি টাকা মেটানো না হয়, তাহলে কৃষক অভিযোগ করতে পারেন। নয়া আইন অনুযায়ী, এক মাসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট এলাকার এসডিএমকে সেই অভিযোগের সমাধান করতে হবে। নয়া আইনের মাধ্যমে কৃষকরা যে ক্ষমতা পেয়েছেন, তার মাধ্যমে যে কোনও সমস্যার সমাধান হবেই। উনি অভিযোগ দায়ের করেছিলেন এবং কয়েকদিনের মধ্যেই নিজের বকেয়া টাকা পেয়ে গিয়েছেন। আইনের বিষয়ে সম্যক জ্ঞান থাকা জরুরি এবং সঠিক তথ্য থাকাও প্রয়োজনীয়।’
কিন্তু সেই আশ্বাসেও যে চিঁড়ে ভেজেনি, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। যা নিয়ে মোদী সরকারকে ভালোমতোই চাপ অনুভব করছে বলে মত রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের।