১৯৭১ সালে এই দিনে ৯৩ হাজার পাক সেনা আত্মসমর্পণ করেছিল ভারতীয় বাহিনীর কাছে। জন্ম হয়েছিল বাংলাদেশের। সেই দিনটিকে প্রতি বছর বিজয় দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
এবার বিজয় দিবসের পঞ্চাশ বছর পূর্তি। এদিন সেই ভারত-পাক যুদ্ধে শহিদদের জাতীয় যুদ্ধ সৌধে গিয়ে স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। এই উপলক্ষ্যে সেনা থেকে সোশ্যাল মিডিয়াতেও বিভিন্ন পোস্ট শেয়ার করা হচ্ছে। একটিতে দেখা যাচ্ছে ভারতের ফিল্ড মার্শাল স্যাম মানেকশ অন্য সেনাকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করছেন। ছবিতে ক্যাপশন দেওয়া হয়েছে যে আপনারা সারেন্ডার না করলে ধ্বংস করে দেওয়া হবে। এই ভাবেই ১৩ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে পাক ফৌজকে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন স্যাম মানেকশ। তবে হার অবধারিত বুঝে ৯৩ হাজার পাক সেনা অস্ত্র নামিয়ে রেখেছিল তার তিন দিনের মাথায়।
১৯৭১-এর যুদ্ধে একদিকে ছিল নিয়াজির পাক সেনা। অন্যদিকে বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় সেনা। ১৯৭০ সালে আওয়ামি লিগ অবিভক্ত পাকিস্তানে ভোটে জেতে। কিন্তু তাদের জয়কে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। তখনই মুজিবর রহমান দেশব্যাপী ধর্মঘট ডাকেন। তখন মুজিবরকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে লাহোরে জেলে পুরে দেওয়া হয়।
এরপর তৎকালীন পাক প্রধানমন্ত্রী ইয়াহইয়া খান ঢাকায় পাঠান জেনারেল টিক্কা খানকে বিক্ষোভের ওপর কাবু পেতে। কিন্তু টিক্কা খান এসে যেভাবে তৎকালীন পূর্ব পাতিস্তানে রাজনৈতিক নেতা, পড়ুয়া ও সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার করেন, তাতে আরও তীব্র হয় স্বাধীনতার আন্দোলন।
তেসরা ডিসেম্বর পাক বায়ু সেনা উত্তর ও পশ্চিম ভারতের একাধিক এয়ার বেসে আক্রমণ করে। সেই আক্রমণকে প্রতিহত করে ভারত ও তারপরেই পূর্ব পাকিস্তানে ফৌজ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। দায়িত্ব ছিলেন স্যাম বাহাদুর। তিনি ও তাঁর ফৌজ মুক্তিবাহিনীর সাহায্য নিয়ে খুব সহজেই পাকিস্তানের প্রতিরোধকে জয় করেন। একের পর এক শহর পাক সেনার হাতছাড়া হয়। ১৪ ডিসেম্বরের মধ্যে এটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে পাক সেনার দম শেষ। আত্মসমর্পণ করা ছাড়া উপায় নেই। সেই অনুযায়ী নিয়াজির নেতৃত্বাধীন ৯৩ হাজার পাক সেনা বিনা শর্তে হার স্বীকার করে নেন। জন্ম নেয় বাংলাদেশের, ক্ষমতায় আসীন হন বঙ্গবন্ধু মুজিবর রহমান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এক লপ্তে এত সেনা কোথাও আত্মসমর্পণ করেনি যেই রেকর্ড হয়েছিল ভারত-পাক যুদ্ধে।