বিপদ কখনও বলে আসে না। একটি সামান্য দুর্ঘটনাও কীভাবে সারাজীবনের মতো দুঃস্বপ্নে পরিণত হতে পারে তার সাক্ষী রইল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি ঘটনা। বন্ধুদের সঙ্গে ক্যাম্পিংয়ে গিয়ে রান্না করার সময় এক ব্যক্তির পায়ের বুড়ো আঙুল সামান্য পুড়ে গিয়েছিল। কিন্তু, তাতে পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে, দুটি পা-ই কেটে বাদ দিতে হল ওই ব্যক্তির। এর ফলে স্বাভাবিকভাবে সারা জীবনের মতো হাঁটাচলা করতে অক্ষম হয়ে গেলেন ওই ব্যক্তি। যা তার কাছে দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। ওই ব্যক্তির নাম ম্যাক্স আর্মস্ট্রং (৪০)। ঘটনাটি ঘটেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডোতে।
আরও পড়ুন: ‘অপারেশন থিয়েটারের বাইরে বাধ্যতামূলক ক্যামেরা’, স্যালাইন কাণ্ডে নির্দেশ মমতার
মার্কিন সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, গতবছরের ডিসেম্বরে ওই ব্যক্তি প্রকৃতির কোলে সময় কাটানোর জন্য বন্ধুদের সঙ্গে ক্যাম্পিংয়ে গিয়েছিলেন কলোরাডোতে। সেখানে রাতের খাবারের জন্য পাস্তা রান্না করছিলেন। সেই সময় ঘটে বিপত্তি। রান্নার গরম পাত্রে তার বাঁ পায়ের বুড়ো আঙুল পুড়ে যায়। তবে এই ঘটনা তাকে খুব বেশি ভাবায়নি। কিন্তু, কয়েকদিন হয়ে যাওয়ার পরেও ক্ষতস্থান কিছুতেই ভালো হচ্ছিল না উল্টে তাঁর পা ক্রমেই ফুলতে শুরু করে এবং পায়ের নখ বেগুনি রঙের হয়ে যায়। ঘটনায় এক সপ্তাহ পর তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকরা পরীক্ষার পর জানতে পারেন, পোড়া জায়গাটি ব্যাকটেরিয়ায় সংক্রমিত হয়েছে। যার ফলে এটি সেপসিসে পরিণত হয়েছে। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন এ ধরনের ক্ষেত্রে সঠিকভাবে চিকিৎসা না করালে তাতে জীবনহানি পর্যন্ত ঘটতে পারে।
এদিকে, এই ঘটনায় সংক্রমণ এতটাই বেড়ে যায় যে চিকিৎসকরা শেষ পর্যন্ত ম্যাক্সের অস্ত্রোপচার করার সিদ্ধান্ত নেন। সেইমতো পরিবারের সঙ্গে কথা বলে তার দুটি পা কেটে বাদ দিতে বাধ্য হন চিকিৎসকরা। এই ঘটনায় অস্ত্রপোচারের জন্য ম্যাক্সকে ৬ দিনের জন্য অজ্ঞান করে রাখা হয়েছিল। তিন ঘন্টার অস্ত্রোচারের পর তার দুটি পা-ই কেটে ফেলা হয়। জ্ঞান ফিরতেই যেন জীবনটা দুঃস্বপ্নে পরিণত হয় ম্যাক্সের কাছে। হাসপাতালে এক মাস সুস্থ হয়ে ওঠার পর তিনি বাড়ি যেতে সক্ষম হন। কিন্তু, আর তিনি হাঁটাচলা করতে পারবেন না। হুইলচেয়ারের ওপরেই তাঁকে নির্ভর করতে হবে বাকি জীবন।
ভয়ঙ্কর এই অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা দিয়ে ম্যাক্স বলেন, ‘বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে রান্না করার সময় তিনি রান্নার পাত্র ভুলভাবে ধরেছিলেন। তাতে আমার বুড়ো আঙুল সামান্য পুড়ে যায়। আমি এটি নিয়ে খুব বেশি ভাবিনি। কারণ অনেক ভ্রমণের সময় আমার সঙ্গে এরকম বেশ কয়েকবার হয়েছে। রাতের খাবারের পরে আমি পোড়া জায়গাটি পরিষ্কার করেছিলাম এবং ব্যান্ডেজ করে রেখেছিলাম।’
তিনি হাসপাতালে জ্ঞান ফেরার পর হতবাক হয়ে যান। ম্যাক্স বলেন, ‘প্রথমে যখন আমি জেগে উঠি, তখন আমার মনে হয়েছিল আমার পা এখনও আছে এবং তারপর আমি বুঝতে পারি যে পা দুটি আর নেই। আমি নার্সকে জিজ্ঞাসা করি এবং তিনি জানান, যে আমার পা কেটে ফেলা হয়েছে। তিনি আমাকে বলেছিলেন যে আমার পরিবার আমার জন্য অপেক্ষা করছে।’