মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার চিনের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত ১০০ শতাংশ শুল্ক ঘোষণা করেছেন। ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের জেরে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধের দ্বিতীয় সংস্করণ শুরু হয়ে গেল। ট্রাম্প সরকারের এই পদক্ষেপটি ১ নভেম্বর থেকে কার্যকর হবে। বর্তমানে চিনা পণ্যের ওপর যে শুল্ক ধার্য করা আছে, তার ওপরে এই ১০০ শতাংশ শুল্ক চাপতে চলেছে। অর্থাৎ, চিনের বিরুদ্ধে আমেরিকার শুল্কের হার এখন ১৪০ শতাংশে পৌঁছাতে পারে।
জানা গিয়েছে, বিরল খনিজ রফতানির ওপর চিন নিজেদের নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতে চাইছিল। এর জেরেই ট্রাম্প এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন চিনের বিরুদ্ধে। এর আগে রিপোর্টে দাবি করা হয়েছিল, ভারত সহ বহু দেশকে চিঠি লিখে চিন আশ্বাস চেয়েছিল যে সেই দেশগুলি আমেরিকায় বিরল খনিজ পদার্থ পাঠাবে না। চিনের এই পদক্ষেপকে 'নজিরবিহীন আগ্রাসন' ও 'নৈতিক অপরাধ' বলে অভিহিত করেছেন ট্রাম্প। নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে পোস্ট করে ট্রাম্প লেখেন, 'যুক্তরাষ্ট্রে আসা চিনা পণ্যগুলির ওপর শুল্কের হার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করার কথা আমরা বিবেচনা করছি এখন।' ট্রাম্পের অভিযোগ ছিল, আমেরিকার সঙ্গে চিন শত্রুতা করছে এবং ইলেকট্রনিক্স, কম্পিউটার চিপ, লেজার এবং অন্যান্য প্রযুক্তিতে ব্যবহৃত ধাতুগুলির রফতানি নিষিদ্ধ করে বিশ্বকে 'বন্দি' বানাচ্ছে। ট্রাম্পের কথায়, 'আমি প্রেসিডেন্ট শিয়ের সঙ্গে কথা বলিনি, কারণ তার কোনও কারণ ছিল না। এটা শুধু আমার জন্য নয়, বিশ্বের সকল নেতার জন্যই একটি সত্যিকারের বিস্ময় ছিল।' ট্রাম্প আরও জানান, এশিয়া সফরের সময় চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে দেখা করার কোনও কারণ তিনি আর দেখছেন না। উল্লেখ্য, এর আগে ট্রাম্পের এশিয়া সফরের সময় দুই নেতার মধ্যে বৈঠকের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল এবং ট্রাম্প নিজেও এই খবরে সিলমোহর দিয়েছিলেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার চিন বিরল খনিজ এবং সম্পর্কিত সরঞ্জাম রফতানির ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি কিছু লিথিয়াম ব্যাটারি রফতানির উপরও নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা করেছিল। উল্লেখ্য, এই বছরের শুরুতেও দুই দেশ একে অপরের ওপর উচ্চহারে শুল্ক আরোপ করেছিল। বিশ্বের দুটি বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছিল। এই আবহে মার্কিন শুল্ক ঘোষণার পরে ফের এই বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এদিকে ট্রাম্পের ঘোষণার পরপরই বিশ্ব শেয়ার বাজারে 'ধস' দেখা দেয়। নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জে ডাউ জোন্স সূচক ২.৫ শতাংশ কমেছে, নাসডাক ৩ শতাংশেরও বেশি হ্রাস পেয়েছে। বিশ্বব্যাপী, হংকংয়ের হ্যাং সেং সূচক ৪ শতাংশ কমেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন যে চিনা পণ্যের ওপর এই ১০০ শতাংশ শুল্ক আমেরিকান উপভোক্তাদের উপর মুদ্রাস্ফীতির চাপ বাড়িয়ে তুলবে। কারণ, চিন থেকে আসা পণ্য যেমন ইলেকট্রনিক্স, খেলনা এবং সরঞ্জামগুলি ব্যয়বহুল হয়ে উঠবে। ওয়েলস ফার্গো ইকোনমিক্সের মতে, চিনা আমদানির উপর কার্যকর শুল্কের হার বর্তমানে ৪০ শতাংশ, যার মধ্যে ইস্পাত-অ্যালুমিনিয়ামের উপর শুল্ক ৫০ শতাংশ এবং উপভোক্তা পণ্যের উপর শুল্ক ৭.৫ শতাংশ রয়েছে। নতুন ফি এর দ্বিগুণেরও বেশি হতে চলেছে।