তিনি মহারানি। রাজপ্রাসাদে পর্দার আড়ালে থাকাই ছিল তখন নিয়ম। কিন্তু সমাজের ঠিক করে দেওয়া ছকে বাঁধা জীবন থেকে বরাবরই আলাদা পথে যাওয়ার স্বভাব ছিল তাঁর। চলতে চলতে তৈরি করেছেন ইতিহাস। আর সেই কারণেই হয় তো আজকের সমাজেও সমানভাবে অনুপ্রেরণার প্রতীক গায়ত্রী দেবী। তাঁর সৌন্দর্য্য ও ব্যক্তিত্ব আজও জাগায় বিস্ময় ও শ্রদ্ধা।
১৯১৯ সালে ২৩ মে লন্ডনে জন্মগ্রহণ করেন কোচবিহারের রাজকন্যা গায়ত্রী দেবী।১৯৪০ সালের ৯ মে তাঁর সঙ্গে জয়পুরের মহারাজা দ্বিতীয় সাওয়াই মান সিং বাহাদুরের বিয়ে হয়।
বিয়ের পরে সেই সময়ে রাজপরিবারের মহিলাদের পর্দানসীন থাকারই চল ছিল। কিন্তু, সেই নিয়মের বেড়াজালে কোনওদিনই বন্দি হননি তিনি। ঘোড়ায় চড়ে পোলো খেলা থেকে গাড়ি চালানো, সবেতেই সমান পারদর্শী ছিলেন মহারাণী গায়ত্রী দেবী।
১৯৬২ সালে সক্রিয় রাজনীতির জগতে প্রবেশ। লোকসভা নির্বাচনে স্বতন্ত্র দলের হয়ে লড়ে রেকর্ড ভোটে জয়লাভ করেন তিনি। গিনেস বুক অফ রেকর্ডস অনুযায়ী ২,৪৬,৫১৬ ভোটের মধ্যে ১,৯২,৯০৯ ভোট পান তিনি। ১৯৬৭-১৯৭১ সাল পর্যন্ত সাংসদ ছিলেন তিনি। ইন্দিরা গান্ধীর আরোপিত ইমার্জেন্সির বিরুদ্ধেও গর্জে ওঠেন তিনি। মনোবল যোগান প্রতিবাদীদের।
নারীদের উন্নতিতে এগিয়ে আসতে হবে নারীদেরই। আর তার জন্য প্রয়োজন নারীশিক্ষার প্রসার। এমনটাই মনে করতেন গায়ত্রী দেবী। মেয়েদের পড়াশোনার জন্য একাধিক উদ্যোগ, প্রচারের মুখ ছিলেন। ১৯৪৩ সালে জয়পুরে স্থাপন করেন মহারাণী গায়ত্রী দেবী গার্লস পাবলিক স্কুল।
তাঁর অপরূপ সৌন্দর্য্য আজও মুগ্ধ করে বিশ্বকে। ১৯৬০ সালে ব্রিটেনের ভোগ(Vogue) ম্যাগাজিনের বিশ্বের সুন্দরীতম ১০ মহিলার তালিকায় তাঁর নাম উল্লেখ করা হয়।
সেই সময়ে জাঁকজমকপূর্ণ সাজই বেশি প্রচলিত ছিল মধ্য, উত্তর ভারতের মহিলাদের মধ্যে। বিশেষত উজ্জ্বল রঙিন শাড়ি, ভারি সুতো বা পাথরের কাজ, ভারী সোনার অলঙ্কারই ছিল মহিলাদের প্রিয়।
কিন্তু গোটা একটা প্রজন্মের ট্রেন্ডই যেন পাল্টে দেন মহারানি। হাল্কা প্যাস্টেল শেডের শিফন শাড়ি, গলায় মুক্তোর হার আর ওভারসাইজড সানগ্লাসেসকে করে তোলেন ট্রেন্ডি। আজও ১৯৬০ সালের মহিলাদের ফ্যাশনের ইতিহাস লেখা হলে তাঁর নাম অবশ্যই উল্লেখ করা হয়।
২০০৯ সালের ২৯ জুলাই পরলোক গমন করেন মহারাণী গায়ত্রী দেবী।