খনন কাজ চালাতে গিয়ে মাটির নিচ থেকে দশম শতাব্দীর বুদ্ধ বিহারের খোঁজ পেল আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া (এএসআই)। এই নিয়ে রীতিমতো শোরগোল পড়ে গিয়েছে। মঙ্গলবার প্রত্নতত্ত্ব দফতরের এক আধিকারিক জানান, রাঁচি থেকে ১১০ কিলোমিটার দূরে হাজারিবাগ জেলার সদর ব্লকের জুলজুল পাহাড়ের পাদদেশে খননের কাজ চলাকালীনই এই ছোটো বুদ্ধ বিহারের খোঁজ মিলেছে। ২০২০ সালেও তিনটে মাটির ঢিবি ওই পাহাড়ের নিচেই আবিষ্কার হয়েছিল। সেখানে খোদাই করতেই মাটির দু'মিটার নিচে আরও দুটো মাজারের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে।
কিন্তু তারপর? জানা গিয়েছে, তারপর করোনাভাইরাসের পরিস্থিতিতে লকডাউনের জেরে গত দু'মাস ধরে খনন কাজ বন্ধ রাখা হয়। ওই আধিকারিক জানান, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে দ্বিতীয় পর্যায়ের খনন কাজ শুরু হয়। মাঝখানে যে মাজারটি রয়েছে, তার প্রথম ঢিবি থেকে দ্বিতীয় ঢিবির দূরত্ব ৪০ মিটার। সেখানেই খনন কাজ করতে গিয়ে এই বুদ্ধ বিহারের পরিকাঠামো আবিষ্কার করা হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, সাম্প্রতিক দেশের পরিস্থিতিতে সর্বধর্ম সমন্বয়ের বার্তাই ঈশ্বর এভাবে দিলেন।
এই বিষয়ে এএসআইয়ের সহ–প্রত্নতাত্ত্বিক নীরজ মিশ্র বলেন, ‘আমরা জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে খনন কাজ শুরু করি। প্রথমে সেখানে প্রচুর পরিমাণে ঢিবির পরিকাঠামোর সন্ধান পাওয়া যায়। তারপরেই ওই পরিকাঠামোর তিনটি ঘরের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। দক্ষিণ দিকে ওই তিনটি ঘরে বসা অবস্থায় মোট পাঁচটি গৌতম বুদ্ধের মূর্তি উদ্ধার হয়েছে। আরও একটি তারার মূর্তিও উদ্ধার হয়েছে।’ ওই আধিকারিকের কথায়, ‘এই তারার মূর্তিটি বজ্রায়নের মাঝখানে অবস্থিত ছিল। গৌতম বুদ্ধের ও তারার মূর্তিগুলি ৫০ মিটার দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের এলাকায় ছড়ানো ছিল। এই তিনটে ঘরের প্রতিকৃতিগুলি মহিলাদের বুদ্ধধর্মে দীক্ষিত হওয়ার প্রমাণ হিসেবে দেখা দিয়েছে। মিশ্র বাবু আরও জানান, এখান থেকে যে তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গিয়েছে, তাতে পরিষ্কার হয়েছে এই পরিকাঠামোগুলি পাল বংশের জমানায় তৈরি হয়েছিল। খনন কাজের সময় একটি পাথরের উপর লিপি খোদাই করা স্ল্যাবও উদ্ধার করা হয়েছে। সেই লিপি নির্দেশ করছে, এটা দশম শতাব্দীতে পাল জামানায় তৈরি হয়েছে।
একসময় এটা বৃহৎ ধার্মিক কেন্দ্র ছিল বলে মনে করা হচ্ছে। এই পরিকাঠামো ওল্ড গ্র্যান্ড রোডের ধারে অবস্থিত রয়েছে। এখানেই উত্তরপ্রদেশের সারনাথ থেকে বিহারের বুদ্ধগয়া যুক্ত রয়েছে। যেখান থেকে বুদ্ধের অবতারণা হয়েছিল। তিনি জানান, ২০২০ সালে এই মাজার ও আরও দুটো মজার ৩০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৫০ মিটার প্রস্থ এলাকায় ছড়িয়ে থাকা অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল। সেটা একসময় একতলা মন্দির ছিল, যেখানে প্রবেশদ্বারের পাশাপাশি সিঁড়িও খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল।
ইতিহাসবিদ ও প্রত্নতাত্বিকরা ঝাড়খণ্ডের এই সভ্যতাকে ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তাঁরা এর ইতিহাস বোঝার চেষ্টা করছেন। রাঁচি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞানের ডিন তথা ইতিহাসবিদ ড. ডি এন ওঝা বলেন, ‘পৌরাণিক ইতিহাস বলছে, বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের এখানে আসা যাওয়া ছিল। পাশাপাশি বৌদ্ধধর্মের প্রচার ও প্রসার এই রাজ্য পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। যদিও তা নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে। কিন্তু হাজারিবাগের সাম্প্রতিকতম এই আবিষ্কার বৌদ্ধ ধর্মের প্রচার ও প্রসার এবং বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের আগমনের সাক্ষ্য বহন করছে।’