জর্জিয়ার গুদাউরিতে একটি রিসর্টে ঘুমন্ত অবস্থায় রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হল ১২ জনের। তার মধ্যে ১১ জনই হলেন ভারতীয়। প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে কার্বন মনক্সাইডের বিষক্রিয়ার কারণেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনায় পরিবারে শোকের ছায়া নেমেছে তাদের মৃতদেহ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।
আরও পড়ুন: ঘুমন্ত অবস্থায় বাড়ি ভেঙে দুই বোনকে পিষে দিল হাতি, মর্মান্তিক ঘটনা ওড়িশায়
কীভাবে কার্বন মনোক্সাইডে ভর্তি হল ঘর সে বিষয়টি এখনও স্পষ্ট নয়। তবে প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে জেনারেটর চালানো হয়েছিল। তার কারণেই জেনারেটর থেকে নির্গত কার্বন মনোক্সাইডে ভরে গিয়েছিল ঘর। মৃতদের মধ্যে রয়েছেন পঞ্জাবের মোগা জেলার গল কালান গ্রামের বাসিন্দা গগনদীপ সিং। তিনি দুবাইয়ে এক বছরেরও বেশি সময় কাজ করার পর মাত্র চার মাস আগে জর্জিয়ায় গিয়েছিলেন। তাঁর বাবা গুরমুখ সিং জানান, শ্রমিকরা যে ঘরটিতে ঘুমোচ্ছিলেন সেই ঘরটিতেই জেনারেটর ছিল।গুরমুখ জানান, তিনি ছেলেকে বিদেশে পাঠানোর জন্য ৫ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। এখন ছেলেকে হারানোর পর শোকে পাথর হয়ে গিয়েছেন তিনি।
নিহতদের মধ্যে রয়েছেন, জলন্ধরের কোট রামদাসের বাসিন্দা রবিন্দর কালা। তিনি সাত বছরেরও বেশি সময় ধরে বিদেশে রয়েছেন। প্রথমে দুবাই এবং পরে জর্জিয়াতে কাজ করেছিলেন। তাঁর স্ত্রী কাঞ্চন জানান, তিনি আগের দিন রাত সাড়ে ৮টার দিকে বাড়িতে ফোন করেছিলেন এবং মেয়েদের সাথে কথা বলেছিলেন। এখন স্বামীর মৃত্যুর পর তাঁর এবং সন্তানদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত।
তিনি জানান, তাঁর সাত বছর বয়সি একটি ছেলে রয়েছে। রবিন্দর দুবাই চলে যাওয়ার পরে জন্মেছিল সে। তবে সেই ছেলে কখনই তার বাবাকে দেখেনি। তিনি স্বামীর মৃতদেহ দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারকে সাহায্য করার জন্য আবেদন জানান। এছাড়াও মৃতদের মধ্যে রয়েছেন রবিন্দর সিং এবং গুরবিন্দর কৌর। তারা সাংগরুর জেলার বাসিন্দা। রবিন্দর, একজন কাঠমিস্ত্রি। উন্নত জীবনের জন্য জর্জিয়ায় গিয়েছিলেন। বিবাহ বার্ষিকীর আগের রাতেই তাঁর মৃত্যু হয়। রবিন্দরের বাবা আমরিক সিং একজন কৃষক। তিনি বর্তমানে শারীরিক অসুস্থতার কারণে শয্যাশায়ী রয়েছেন। রবিন্দরের কাকা কুলদীপ সিং বাওয়া বলেন, তিনি রিসর্টে চাকরি পেয়েছিল। তাঁর অকাল মৃত্যুতে পরিবারের শোকের ছায়া নেমেছে।
জর্জিয়ার ভারতীয় দূতাবাসের তরফে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় শোকপ্রকাশ করা হয়েছে। বিবৃতি জারি করে তারা জানিয়েছে, জর্জিয়ার ভারতীয় দূতাবাস গুদাউরিতে ১১ জন ভারতীয়ের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে। মৃতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে দূতাবাস। একই সঙ্গে দেহগুলি দ্রুত ভারতে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলেও জানানো হয়েছে।