তাঁরা কেউই মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। অথচ, মুক্তিযোদ্ধা কোটার সমস্ত সুবিধা অন্য়ায় এবং অনৈতিকভাবে ভোগ করতে নিজেদের মুক্তিযোদ্ধা বলে দাবি করেছিলেন এবং 'মুক্তিযোদ্ধা সনদ' আদায় করেছিলেন। কেউ আবার মুক্তিযোদ্ধা কোটার অধীনে সরকারি চাকরি আদায় করে সারাটা জীবন সুখে কাটিয়ে দিয়েছেন! এমনই ১২ জন 'ভুয়ো' মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের 'মুক্তিযোদ্ধা সনদ' ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকে আবেদন জানালেন, চাইলেন ক্ষমা!
বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকেই জানা যায়, হাসিনা সরকারের পতনের পরই 'মুক্তিযোদ্ধা সনদ'-এর অনৈতিক ব্যবহার সংক্রান্ত বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রকের দায়িত্বে থাকা উপদেষ্টা ফারুক ই আজম গত বছরের ডিসেম্বর মাসে তাঁর দফতরে একটি অনুষ্ঠান করেন এবং সোজা ভাষায় সমস্ত সুবিধাভোগী ভুয়ো মুক্তিযোদ্ধার উদ্দেশে বিশেষ বার্তা দেন।
সেই সময় ফারুক ই আজম বলেছিলেন, 'মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও অনেকে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম লিখিয়েছেন, গেজেটভুক্ত হয়েছেন এবং সুবিধা নিয়েছেন। এটি জাতির সঙ্গে প্রতারণার শামিল। এটি ছোটখাটো অপরাধ নয়, অনেক বড় অপরাধ।'
এই বিষয়ে ভুয়ো মুক্তিযোদ্ধাদের একটি প্রস্তাবও দিয়েছিলেন তিনি। বলেছিলেন, 'আমরা একটি ইনডেমনিটি (দায়মুক্তি) দেব। যাঁরা অমুক্তিযোদ্ধা হয়েও মুক্তিযোদ্ধা হয়ে থেকেছেন, তাঁরা যাতে স্বেচ্ছায় এখান থেকে চলে যান, তার জন্য। যদি যান, তাঁরা তখন সাধারণ ক্ষমা পেতে পারেন। আর যদি সেটি না হয়, আমরা যেটি বলেছি, প্রতারণার দায়ে আমরা তাঁদের অভিযুক্ত করব। তাঁদের বিরুদ্ধে প্রতারণার দায়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
তথ্য বলছে, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এই কড়া দাওয়াইয়ে কাজ হতে শুরু করেছে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই ১২ জন ভুয়ো মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের সনদ ফেরত দিতে চেয়েছেন। এবং তাঁরা সকলেই নিজেদের কৃতকর্মের জন্য লজ্জা প্রকাশ করে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন।
তবে, সেই ১২ জন কারা, সেটা প্রশাসনের তরফে জানানো হয়নি। তাদের বক্তব্য, যেহেতু ওই ১২ জন স্বেচ্ছায় দোষ কবুল করেছেন, তাই তাঁদের নাম ও পরিচয় প্রকাশ করে আর তাঁদের বিড়ম্বনা বাড়ানো হবে না। মন্ত্রকের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়েছে, এমন আরও যাঁরা রয়েছেন, তাঁরাও যাতে নিজে থেকেই নিজেদের অপরাধ স্বীকার করেন, তার জন্য প্রয়োজনে তাঁদের আরও কিছুটা সময় দেওয়া হবে। কিন্তু, তারপরও যাঁরা ভুয়ো হয়ে আসল মুক্তিযোদ্ধার অভিনয় করে যাবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, এর আগে একই কারণে এর আগে আওয়ামী লিগ জমানার পাঁচজন শীর্ষ সরকারি কর্তার মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল করা হয়েছিল। এছাড়াও, বর্তমানে বিভিন্ন সরকারি দফতর ও নানা মন্ত্রকে কর্মরত - মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি পাওয়া ৮৯ হাজার ২৩৫ জন কর্মী ও আধিকারিকের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তাঁদের সনদের সত্যতা যাচাই করে দেখা হবে।