মারণ করোনা ভাইরাসের প্রকোপ আজও ভোলেনি বিশ্ব। এরই মধ্যে আতঙ্কের সেই স্মৃতি ফেরাতে শুরু করে দিয়েছে মারবার্গ ভাইরাস। যাকে 'ব্লিডিং আই' (রক্তাক্ত চক্ষু) ভাইরাসও বলা হচ্ছে।
তথ্য বলছে, ইতিমধ্যেই এই ভাইরাসের কবলে পড়ে অন্তত ১৫ জনের প্রাণ গিয়েছে। মৃতরা সকলেই রুয়ান্ডার বাসিন্দা ছিলেন। সেদেশের আরও কয়েকশো মানুষ এই ভাইরাসে এখনও আক্রান্ত হয়ে রয়েছেন!
চিন্তার বিষয় আরও আছে। শোনা যাচ্ছে, গত দু'মাসের মধ্যেই এই ভাইরাস আফ্রিকার ১৭টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।
বিষয়টি নিয়ে নড়েচড়ে আন্তর্জাতিক মহল। ব্রিটেনে স্বাস্থ্য দফতরের তরফ থেকে বিশেষ অ্যাডাইজরি ইস্যু করা হয়েছে। তাতে ব্রিটেনবাসীকে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ - রুয়ান্ডা, বুরুন্ডি, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, কঙ্গো, ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গো, গ্যাবন, কেনিয়া, উগান্ডার পাশাপাশি দক্ষিণ আমেরিকার একাধিক রাষ্ট্র - বলিভিয়া, ব্রাজিল, কলম্বিয়া, কিউবা, ডমিনিকান রিপাবলিক, একুয়েডর, গুয়েনা, পানামা এবং পেরুতে যাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে।
কী এই 'ব্লিডিং আই'?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা হু-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মারবার্গ ভাইরাসের প্রভাবে রক্ষরণজিত জ্বর হয়। যার ফলে মানবদেহের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। এমনকী, আক্রান্তের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
রুসেটাস এজিপসাকাস (Rousettus aegyptiacus) নামে এক বিশেষ প্রজাতির বাদুড়, যা টেরোপডিডাই বা টেরোপডিডি (Pteropodidae) শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত, তারাই হল এই মারণ মারবার্গ ভাইরাসের প্রকৃত বাহক।
উপসর্গ:
হু-এর তরফে যে তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে, সেই অনুসারে, কেউ যদি এই ভাইরাসের কবলে পড়েন, তাহলে দুই থেকে ২১ দিন পর্যন্ত তার প্রভাব শরীরে থাকতে পারে।
মারবার্গ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে জ্বর (হাই ফিভার), তীব্র মাথাব্যথা এবং শরীরে অস্থিরতা দেখা দিতে পারে। এছাড়াও, শরীরের নানা অংশে এবং মাংসপেশীতে ব্যথা হতে পারে। সেইসঙ্গে, ডায়ারিয়া, পেট ব্যথা, পেট খামচে ধরার মতো অনুভূতি ও বমি-বমি ভাব হতে পারে। সাধারণত, ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার তিনদিনের মাথায় এই উপসর্গগুলি একে একে সামনে আসতে শুরু করে।
ভাইরাস হানার পঞ্চম দিন থেকে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে শুরু করে। রোগীর রক্তবমি হতে পারে। তাঁর মলের মাধ্যমে রক্ত বের হতে পারে। সেইসঙ্গে, রোগীর চোখ, নাক, কান, মুখ, মাড়ি এবং মহিলাদের যোনি থেকে রক্তক্ষরণ শুরু হতে পারে।
পুরুষদের ক্ষেত্রে একটি বা দু'টি অণ্ডকোষেই প্রদাহ শুরু হতে পারে। তবে, সেটা ভাইরাস প্রকোপে পড়ার অনেকটা পর শুরু হয়। এবং সেটা সকলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্যও নয়।
যদি ভাইরাসের প্রকোপ মারাত্মক হয়, তাহলে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এবং সেটা ঘটে ভাইরাসের আক্রমণ হওয়ার পর অষ্টম কিংবা নবম দিনের মাথায়। রোগীর শরীর থেকে রক্তক্ষরণের মাত্রা যদি অত্যন্ত বেশি হয় এবং রোগী যদি তার জেরে 'শক'-এ চলে যান, তাহলে অপমৃত্যুর আশঙ্কা বাড়ে বলে দাবি হু কর্তৃপক্ষের।
সংক্রমণ:
আক্রান্ত রোগীর সরাসরি সংস্পর্শে এলে এই ভাইরাস এক শরীর থেকে অন্য শরীরে ছড়াতে পারে। রোগীর রক্ত, দেহরস থেকে সংক্রমণ ঘটতে পারে। তাই, রোগীর ব্যবহৃত কোনও জিনিস অন্য কারও ব্যবহার করা চলবে না।
এই কারণেই চিকিৎসা পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা এই ভাইরাস দ্বারা সবথেকে বেশি আক্রান্ত হন। কারণ, তাঁরা অন্য রোগীদের চিকিৎসা ও সেবা করেন। এছাড়া, যাঁরা এই ভাইরাসে মৃত ব্যক্তিদের শেষকৃত্য করেন, তাঁরাও একইভাবে আক্রান্ত হতে পারেন।
চিকিৎসা:
হু-এর দাবি এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, এখনও পর্যন্ত এই ভাইরাসের কোনও প্রতিষেধক বা ভ্যাকসিন আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি। এর জন্য নির্দিষ্ট করে কোনও অ্যান্টি-ভাইরাল চিকিৎসাও হয় না।
কিন্তু, ভাইরাসের কবলে পড়ার পরই যদি অন্যান্য সহযোগী চিকিৎসা শুরু করা হয়, তাহলে রোগী সেরে ওঠেন।