'এক দিন দেখবে, দেশ এই গানে মেতে উঠেছে। সেদিন আমি থাকব না, কিন্তু তুমি দেখে যেতে পারবে।' ‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকার এক কর্মীকে এমনটাই বলেছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। ১৮৮২ সালে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় আনন্দমঠ উপন্যাস রচনা করেন। এই উপন্যাসে বন্দেমাতরম গানটি বারবার ব্যবহার করা হয়। এবার সেই বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত, ভারতের জাতীয় গান ‘বন্দে মাতরম’-র সার্ধশতবর্ষ পালনের ঘোষণা করল কেন্দ্রীয় সরকার। একটি মহলের ধারণা, বাঙালি অস্মিতা নিয়ে যে অভিযোগের মুখ পড়তে হয়, সেই দাগ দূর করার জন্য ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে বড়সড় উদ্যোগ নেওয়া হল।
আরও পড়ুন-H-1B বনাম 'K ভিসা!' বিশ্বের মেধাবীদের টানতে চিনের নয়া অস্ত্র, টার্গেটে কারা?
বুধবার কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রযুক্তিমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব বলেন, 'কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা 'বন্দে মাতরম' গানের ১৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে দেশজুড়ে উদযাপনে অনুমোদন দিয়েছে। তাঁর কথায়, স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় এই গানের ভূমিকার কথা মাথায় রেখে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘আনন্দমঠ’ উপন্যাসের অংশ হিসাবে ‘বন্দে মাতরম’ গানের প্রকাশকাল ১৮৮২ সালে। কিন্তু উপন্যাস লেখার আগেই গানটি রচিত হয়েছিল। ১৮৯৬ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশনে 'বন্দে মাতরম' গানটি প্রথম গাওয়া হয়। গানটি রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেই গাওয়া হয়েছিল। ১৮৮২ সালে আনন্দমঠ প্রথমবার বই হয়ে বেরোনোর সময় গানটির নীচে টীকা ছিল, ‘মল্লার রাগ। কাওয়ালি তাল।’ যদুভট্ট সুর দিয়েছিলেন। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের পছন্দও হয়েছিল। কিন্তু তরুণ কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বন্দে মাতরম-এর স্বরলিপি প্রকাশ করেন ‘দেশ’ রাগে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সুরেও গানটি বেশ মনে ধরেছিল বঙ্কিমচন্দ্রের। আনন্দমঠের পরের সংস্করণেই লেখা হল, দেশ রাগ। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুর পর ১৮৯৬ সালে কলকাতায় কংগ্রেস অধিবেশনে ওই রাগেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গানটি গেয়ে শোনান।
আরও পড়ুন-H-1B বনাম 'K ভিসা!' বিশ্বের মেধাবীদের টানতে চিনের নয়া অস্ত্র, টার্গেটে কারা?
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় 'বন্দে মাতরম' নিয়ে প্রথম থেকেই আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। তিনি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন, গানটি একদিন গোটা দেশ গাইবে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাগ্নি সরলা দেবীকে ঘিরেই বলা যেতে পারে 'বন্দে মাতরম' স্লোগানের জন্ম। স্বদেশি আন্দোলনের সময় ময়মনসিংহের সুহৃদ সমিতি মিছিল করে সরলাকে নিয়ে যায় বক্তৃতামঞ্চে। সেখান থেকে আওয়াজ উঠে ‘বন্দে মাতরম্’। সর্বভারতীয় স্লোগান হয়ে উঠল বন্দে মাতরম। 'বন্দে মাতরম' গানটি ইংরেজিতে অনুবাদ করেন ঋষি অরবিন্দ ঘোষ। প্রফুল্ল চাকি, খুদিরাম বসু, মাস্টারদা সূর্য সেন-সহ বহু বিপ্লবী ফাঁসির মঞ্চে শেষ উচ্চারণ করেন, 'বন্দে মাতরম'। ব্রিটিশ পুলিশের হাতে মৃত্যুবরণের সময় মাতঙ্গিনী হাজরাও শেষ স্লোগান দিয়েছিলেন। বহু স্বাধীনতা সংগ্রামী 'বন্দেমাতরম' ধ্বনি দেওয়ার অপরাধে গ্রেফতার হয়েছিলেন। ১৯৩৭ সালে রবীন্দ্রনাথের পরামর্শেই গানের প্রথম দুটি স্তবককে ‘জাতীয় সঙ্গীত’ বলে উল্লেখ করবে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি। সেই নিয়ে বিস্তর বিতর্ক-বিবাদ হয়েছিল। মুসলিম লিগ গানটি গাইতে অস্বীকার করে। পরবর্তীকালে ১৯৫০ সালে ২৪ জানুয়ারি সংবিধানে 'বন্দে মাতরম'-কে ভারতের জাতীয় গান হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।