শিয়া-সুন্নি সংঘাতে আবারও উত্তপ্ত পাকিস্তান। শেষ পাওয়া খবর অনুসারে, উত্তর-পশ্চিম পাকিস্তানে নতুন করে শুরু হওয়া সংঘর্ষের জেরে অন্তত ১৬ জনকে প্রাণ হারাতে হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনিক সূত্রের দাবি, নিহতদের মধ্যে মহিলা রয়েছেন অন্তত তিনজন। সেইসঙ্গে, এই সংঘাত কমপক্ষে দু'টি শিশুর প্রাণ কেড়েছে।
উল্লেখ্য, পাকিস্তানের খাইবার পখতুনখোয়া প্রদেশের কুররাম জেলায় গত কয়েক মাস ধরেই স্থানীয় শিয়া ও সুন্নি গোষ্ঠীর মধ্যে রক্তক্ষয়ী বিবাদ চলছে। যার জেরে ইতিমধ্যেই দুই পক্ষের অসংখ্য মানুষের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু, তারপরও সংঘাত থামার কোনও নাম নেই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কুররামের স্থানীয় প্রশাসনের এক আধিকারিক সংবাদ সংস্থা এএফপি-কে জানিয়েছেন, শনিবার সুন্নি সম্প্রদায়ের একটি কনভয় এই এলাকা দিয়ে যাচ্ছিল। সেই কনভয়ে যাতে কোনও হামলা না হয়, তা নিশ্চিত করতে আধাসেনার পাহারাও ছিল। কিন্তু, তাতেও কোনও লাভ হয়নি। আধাসেনার উপস্থিতিতেই ওই কনভয়ে প্রাণঘাতী আক্রমণ চালানো হয়।
ওই আধিকারিক জানান, 'এই হামলার ফল হয় মারাত্মক। ১৪টি প্রাণের বিনিময়ে এই আক্রমণের মূল্য চোকাতে হয়। নিহতদের মধ্যে তিন মহিলাও রয়েছেন। রয়েছে দু'টি শিশুও। সেইসঙ্গে, আরও ছ'জন গুরুতর জখম হয়েছেন।'
তবে, আধাসেনা এবং পুলিশবাহিনীও এই হামলার জবাব দিয়েছে। যে দুই হামলাকারী নিরস্ত্র সুন্নিদের নিশানা করেছিল, পালটা তাদের নিকেশ করেছে নিরাপত্তাবাহিনী। স্থানীয় প্রশাসনের দাবি, নিহত হামলকারীরা দু'জনই ছিল শিয়া গোষ্ঠীভুক্ত।
উল্লেখ্য, এই ধরনের প্রাণহানি ও রক্ষক্ষয়ী সংঘাত ঠেকাতে কয়েক মাস আগে এই এলাকায় বসবাসকারী গোষ্ঠীগুলি নিজেদের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে। স্থানীয় আদিবাসীদের কাউন্সিল বা 'জিরগা'র তরফ থেকে এই পদক্ষেপ করা হয়।
কিন্তু, তা বাস্তবে কাজে আসেনি। কারণ, তারপরও অবাধে হামলা, পালটা হামলা চলছে তো চলছেই। গত জুলাই এবং সেপ্টেম্বর মাসেও এই এলাকায় একের পর সংঘাত হয়েছে। তাতে দুই পক্ষেরই বহু মানুষের প্রাণ গিয়েছে।
স্থানীয় প্রশাসন চেষ্টা করছে যাতে দুই গোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বিবাদ মেটানো যায়। কিন্তু, তাতে যে কোনও সাফল্য আসেনি, শনিবারের ঘটনা তা আরও একবার প্রমাণ করে দিল।
প্রসঙ্গত, পাকিস্তানে একাধিক গোষ্ঠী, এমনকী বিভিন্ন পরিবারের মধ্যেও রক্তক্ষয়ী সংঘাত নতুন কিছু নয়। কিন্তু, আদিবাসী অধ্য়ুষিত খাইবার পখতুনখোয়ার পরিস্থিতি একেবারেই অন্যরকম।
তথ্য বলছে, এই এলাকার স্থানীয় গোষ্ঠীগুলি অত্যন্ত কট্টরভাবে ইসলামের নানা নিয়ম মেনে চলে বলে দাবি করে। এবং এর জেরেই তারা একে-অপরের ঘোরতর শত্রু। অথচ, তারা সকলেই ইসলাম ধর্মাবলম্বী! এই অঞ্চলে অধিকাংশ খুন, হামলার ঘটনাই ঘটে তথাকথিত সম্মান রক্ষার তাগিদে!