আমাদের জীবনে সাপের গুরুত্ব সম্পর্কে গ্রামীণ ও শহুরে উভয় এলাকার মানুষকে সচেতন করার উদ্যোগ নিয়েছে ‘সেভিং টাইগার’ সংস্থা। বিবেক মন্ডল, ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্ত, বিশ্বজিৎ কয়াল ও তাঁদের সঙ্গীরা মিলে চলছে এক ইতিবাচক কর্মযজ্ঞ। সংস্থার পক্ষ থেকে বিবেক মন্ডল হিন্দুস্থান টাইমস বাংলাকে বললেন, ‘সাপকে ভালোবাসুন। ওরা ক্ষতিকারক নয়’। এর পাশাপাশি জানালেন তাঁদের কাজের বিষয় এবং আগামী কিছু পদক্ষেপের কথা।
সাপ, নামটা শুনলেই আমাদের মনের ভেতরে লুকিয়ে থাকা একটা অজানা ভয় কেমন যেন নাড়া দিয়ে ওঠে। এর জন্য দায়ী আমাদের ছোটবেলার কিছু ভুল গাইডেন্স। রূপকথার গল্পেই হোক, বা পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির কারণেই হোক, সাপ মানেই আতঙ্ক! অতএব প্রাণীটিকে দেখলেই মেরে ফেলা হোক। এমনই ঘটে চলেছে বহু যুগ থেকে। আজও তার বিরাম নেই! তাছাড়া কুসংস্কার, হিংসা, ভয় ইত্যাদি তো রয়েছেই। ফলত প্রথম থেকেই এই জীবটাকে আমরা ভুল বুঝেছি এবং তার ওপর অন্যায় করেছি।
তিনি বলেন, ‘ ভুললে চলবে না যে এই পৃথিবী কেবল মানুষের বাসস্থান নয়, পশু পাখি, প্রাণী, জীবজন্তু উদ্ভিদেরও। তাদেরও সমান অধিকার রয়েছে এই ভুবনে। আমরা মানুষরা সভ্যতার আস্ফালনে জঙ্গল কেটে সাফ করছি প্রতিনিয়ত। তাহলে ওরা যাবে কোথায়? এছাড়াও আরও একটা বড় সমস্যা রয়েছে, যে সকল মানুষরা জঙ্গল সংলগ্ন এলাকায় থাকেন বা জীবিকার সন্ধানে প্রায়ই জঙ্গলে এবং জলাভূমিতে কাজে যান অনেক সময় তাঁদেরও সাপের মুখোমুখি হতে হয়। সেক্ষেত্রে ভয় পেয়ে প্রাণীটার ওপর আক্রমণ না করে, বা না ঘাবড়ে তার হাত থেকে অতি সাবধানে নিজেকে বাঁচানো যায়। তার জন্যই সেভিং টাইগার সংস্থার পক্ষ থেকে আমরা কিছু উদ্যোগ নিয়েছি’।
আমাদের সংস্থার এক্সপার্ট ট্রেনাররা মূলত ফরেস্ট ডিপার্ট্মেন্টের কর্মীদের সাপ ধরা এবং সাপটিকে উদ্ধার করে তার নিজের জায়গায় ফিরিয়ে দেওয়ার যে পদ্ধতি সেটাই শিখিয়ে থাকেন। এই মুহূর্তে আমরা ভারতবর্ষের বিভিন্ন বনাঞ্চলে কাজ করে সফলতা পেয়েছি। কোথাও সাপ দেখতে পাওয়া গিয়েছে এই খবর পেলে বন দপ্তরের কর্মীরা সেই সাপটিকে খুবই যত্ন সহকারে ধরে এনে আবার জঙ্গলে ফিরিয়ে দিতে পারছেন সেটাই আনন্দের। মূলত মধ্য প্রদেশে, আসাম এবং আমাদের সুন্দরবন অঞ্চলে আমরা এখনও পর্যন্ত অনেকটাই সফলতার সঙ্গে কাজ করে এগোতে পেরেছি। খোলা হয়েছে অসুস্থ সাপ ও প্রাণীদের চিকিৎসা কেন্দ্র।
তিনি বলেন, ‘ফরেস্ট এলাকা সংলগ্ন যে সব গ্রাম রয়েছে সেখানে আমরা প্রতিনিয়ত নিয়ম করে যাচ্ছি এবং সেখানকার মানুষদের সচেতনতা মূলক কিছু ওয়ার্কশপ করাচ্ছি। পাশাপাশি যদি সাপ কাউকে ছোবল মারে সে ক্ষেত্রে প্রাথমিক চিকিৎসা কেমন ভাবে করবেন সে সম্বন্ধেও শেখানো হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি ওই সব এলাকার মানুষদের যাতে জঙ্গলে যাওয়ার প্রয়োজন না হয়, তাঁরা যেন অন্য কোনও জীবিকার সাহায্যে জীবন ধারণ করতে পারেন সেই ব্যবস্থাও করছি। সেই মতো তাঁদের আমরা অন্যান্য কাজে যুক্ত করার চেষ্টা করছি। বাচ্চাদের জন্যেও স্কুল খোলা হয়েছে কিছু এলাকায়। সেখানে পড়াশোনার পাশাপাশি পরিবেশ বন্ধু হওয়ার শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে শিশুদের। তবেই তো আগামী প্রজন্ম সচেতন হবে। কুসংস্কার মুক্ত সমাজ গড়ে উঠবে’।