বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মার শান্তি কামনায় প্রার্থনা করার আবেদন জানিয়ে একটি সরকারি চিঠি বা আবেদনপত্র লেখা হয়েছিল। বাংলাদেশের 'মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন' (২৬ মার্চ, ২০২৫)-এর ঠিক প্রাক্কালে সেই চিঠি সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হতেই বিপাকে পড়লেন দুই মহিলা আধিকারিক। তাঁদের মধ্যে একজনকে সাসপেন্ড করা হল এবং অন্যজনের দফতর ও পদ বদলে গেল। দু'জনকেই পাঠানো হল 'শো কজ নোটিশ'।
বর্তমান বাংলাদেশে ব্রাত্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান! ইতিহাসের পাতা থেকে তাঁর সমস্ত স্মৃতি মুছে ফেলার বিষয়ে বর্তমান অন্তর্বর্তী প্রশাসন থেকে শুরু করে কট্টরপন্থী বিভিন্ন সংগঠন - সকলেই সমান তৎপর। এহেন প্রেক্ষাপটে বুধবার (২৬ মার্চ, ২০২৫) 'মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন' করা হবে বাংলাদেশে।
সেই উপলক্ষে গাজিপুর শহর পুরনিগমের প্রশাসনিক বিভাগের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট সমস্ত আঞ্চলিক দফতরে একটি চিঠি পাঠানো হয়। বাংলাদেশি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, সেই চিঠিতে তারিখ ছিল - ২০ মার্চ, ২০২৫। চিঠির নীচে স্বাক্ষর ছিল - গাজিপুর শহর পুরনিগমের সচিব নমিতা দে-র। আর, সেই চিঠি তাঁকে দিয়ে স্বাক্ষর করিয়েছিলেন - ওই একই দফতরের আধিকারিক হামিদা খাতুন।
চিঠির বয়ানে লেখা ছিল, 'আগামী ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস ২০২৫। সরকারি সিদ্ধান্ত মোতাবেক বিষয়টি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের অংশ হিসেবে ওই দিন সুবিধাজনক সময়ে আপনার মসজিদে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মার মাগফিরাত কামনা, দেশ ও জাতির উন্নতি এবং মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণে বিশেষ মোনাজাত করার জন্য অনুরোধ করা হল।'
আজ (মঙ্গলবার - ২৫ মার্চ, ২০২৫) সেই চিঠি সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়তেই হুলুস্থূল শুরু হয়ে যায়। প্রশাসনিক স্তরেও এ নিয়ে তৎপরতা দেখা যায়। সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হয় সংশ্লিষ্ট দুই আধিকারিকের বিরুদ্ধে। এদিকে, বিতর্কের মুখে 'জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মার মাগফিরাত কামনা' - এই অংশটুকু বাদ দিয়ে বাকি বার্তাটুকু সংশোধিত চিঠি হিসাবে ২০ মার্চ তারিখ দিয়েই ফের ইস্যু করেন নমিতা। কিন্তু, তাতেও শাস্তির খাঁড়া এড়ানো যায়নি।
গোটা ঘটনা নজরে আসার পর নমিতাকে মঙ্গলবার বিকেলেই তাঁর পুরোনো পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। বদলে তাঁকে জনপ্রশাসন মন্ত্রকের ওএসডি পদে নতুন করে দায়িত্ব দেওয়া হয়। নমিতার দাবি, তাঁকে দিয়ে এই চিঠিতে স্বাক্ষর করিয়ে নেওয়া হয়েছে। অনেক কাগজের মাঝে এই চিঠিটি থাকায় তিনি সেটি খেয়াল করেননি।
নমিতার যে বয়ান বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, তা হল - 'প্রশাসনিক কর্মকর্তা হামিদা খাতুন প্রথম চিঠিটি অন্যান্য ফাইলের সঙ্গে গোলমাল পাকিয়ে তাড়াহুড়ো করে স্বাক্ষর করিয়ে নেন। হামিদা খাতুন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। বিষয়টি জানার পর তিনি দ্রুত সংশোধিত চিঠি ইস্যু করেছেন।' নমিতা আরও জানিয়েছেন, তিনি এই ঘটনার জন্য 'অনুতপ্ত' এবং তাঁকে যেন ক্ষমা করে দেওয়া হয়।
এদিকে, এই গোটা ঘটনার জেরে আপাতত সাসপেন্ড করা হয়েছে হামিদা খাতুনকে। ঘটনার দায়ও মূলত তাঁর উপরেই চাপানো হয়েছে। তাঁকে এবং নমিতাকে এ নিয়ে যে শো কজ করা হয়েছে, তিনদিনের মধ্য়ে তার জবাব দিতে বলা হয়েছে।