ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তোলাই কাল হল। টাকা তোলার জন্যেই ভিনরাজ্যে বেঘোরে প্রাণ হারাতে হল বাংলার এক পরিয়ায়ী শ্রমিককে। ৩০ হাজার টাকা ব্যাঙ্ক থেকে তুলেছিলেন পেশায় রাজমিস্ত্রি ওই যুবক। সেটি জানতে পারে তাঁর সঙ্গে কাজ করা দুই শ্রমিক। সেই টাকা হাতিয়ে নিতে মাথায় ভারী বস্তু দিয়ে মেরে ওই পরিযায়ী শ্রমিককে খুন করে নির্মিয়মাণ বহুতলের শৌচালয়ের মেঝেতে পুঁতে দিল তাঁরই দুই বন্ধু।
কেরল পুলিশ মেঝে খুঁড়ে ওই শ্রমিকের দেহ উদ্ধার করেছে। মুম্বই থেকে এক অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অপর অভিযুক্ত এখনও পলাতক। তার খোঁজে তল্লাশি চালানো হচ্ছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত ওই যুবকের নাম ওশিকুল ইসলাম (৩২)। পেশায় রাজমিস্ত্রি ওশিকুল মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘির বাসিন্দা ছিলেন।
জানা গিয়েছে, লকডাউনে কাজ হারান তিনি। কাজের খোঁজে ঘরবাড়ি ছেড়ে কেরলে গিয়েছিলেন ওশিকুল।কেরলের কান্নুর জেলার ইরাক্কু জংশন এলাকায় মিস্ত্রির কাজ জোগাড়ও করে নেন তিনি। আর সেখানেই দুই বন্ধুর হাতে খুন হতে হল ওশিকুলকে। শুধু তাই নয়, প্রমাণ লোপাটের জন্য নির্মীয়মাণ একটি বহুতলের শৌচালয়ের মেঝেতে পুঁতে রাখা হয়েছিল তাঁর দেহ।
শুক্রবার সেই শৌচালয়ের মেঝে খুঁড়ে ওশিকুলের দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওশিকুল তাঁর দুই বন্ধু গণেশ মণ্ডল ও পরেশ মণ্ডলের সঙ্গে সেখানকার একটি বহুতলে থাকছিলেন। গত ২৮ জুন থেকে হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যায় ওশিকুল। ওই সময়ের মধ্যেই এলাকা ছেড়ে চম্পট দেয় গণেশ ও পরেশ।
এরপর ওশিকুলের কোনও খোঁজ না পেয়ে তাঁর বাড়ির লোকেরা ছেলের খোঁজে কেরলে পৌঁছন। সেখানকার স্থানীয় থানায় মিসিং ডায়রি করেন তাঁরা। অভিযোগ পেয়ে তদন্তে নামে পুলিশ। প্রথমেই তদন্তকারীরা ওশিকুলের ফেরার দুই বন্ধু গণেশ ও পরেশের খোঁজে তল্লাশি শুরু করে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত মঙ্গলবার মুম্বই থেকে পরেশকে গ্রেফতার করেছে কেরল পুলিশ। তবে পরেশকে গ্রেফতার করা হলেও গণেশ এখনও পলাতক। তাঁর খোঁজ তল্লাশি চালানো হচ্ছে। ধৃতকে জেরা করতেই সমস্ত ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। পুলিশি জেরায় ওশিকুলকে খুনে নিজের অপরাধের কথা স্বীকার করে নেয় পরেশ।
পুলিশকে সে জানায়, সম্প্রতি ব্যাঙ্ক থেকে ৩০ হাজার টাকা তুলেছিল ওশিকুল। সেই টাকা হাতিয়ে নিতে তাঁকে খুনের ছক কষে গণেশ ও পরেশ। তারপর ঘুমন্ত অবস্থায় ওশিকুলের মাথায় হাতুড়ির বাড়ি মেরে তাঁকে খুন করে দুই অভিযুক্ত। ঘুমের মধ্যে আচমকা মাথায় আঘাত লাগায় ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ওশিকুলের। তারপর তাঁর দেহ ওই বহুতলের একটি বাথরুমের মেঝেতে পুঁতে দেয় তারা। তারপর টাকা হাতিয়ে পালিয়ে যায় দু’জনে।