মাঝে মাত্র একটা মাস। আর তার পরেই এপ্রিল মাসে বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। তার জন্য বাড়িঘর রং করা থেকে শুরু করে সাজানো হচ্ছিল বিভিন্ন ধরনের আসবাবপত্র দিয়ে। ইতিমধ্যেই আমন্ত্রণপত্র চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু, নিয়তির নিষ্ঠুর পরিহাসে তার আগেই সেই স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেল। বিয়ের আগেই জঙ্গি হামলায় নিহত হল দুই সেনা জওয়ান। গত মঙ্গলবার জম্মুর আখনুর সেক্টরে নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছে জঙ্গিদের আইডি বিস্ফোরণে নিহত হন ক্যাপ্টেন করমজিৎ সিং বকশি (২৭) এবং নায়েক মুকেশ সিং মানহাস (২৯)। নতুন জীবনের পথচলা শুরুর আগেই অকালে ঝরে গেল তাদের প্রাণ। এই ঘটনায় চারটি পরিবারে শোকের ছায়া নেমেছে।
আরও পড়ুন: অনুশীলন চলাকালীন দুর্ঘটনা, কামান সংযুক্ত করতে গিয়ে মৃত্যু সেনা জওয়ানের
জানা যায়, নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর তারা যখন টহল দিচ্ছিলেন। সেই সময় বিস্ফোরণ ঘটে। তাতে তাদের মৃত্যু হয়। জানা গিয়েছে, ক্যাপ্টেন করমজিৎ ঝাড়খণ্ডের হাজারিবাগের বাসিন্দা। পারিবারিক সূত্রের খবর, আগামী ৫ এপ্রিল তাঁর বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। মাত্র ১০ দিন আগেই তিনি বাড়ি গিয়েছিলেন। আর্মি মেডিক্যাল কর্পসের একজন মহিলা ডাক্তারের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। বাগদানও আগেই হয়ে গিয়েছিল। তাঁর বাবা সর্দার অজিন্দর সিং বকশি একটি রেস্তোরাঁর মালিক। বাড়ির মেরামতের কাজ দেখাশোনা করছিলেন। তাঁর মা নীলু বকশি বিয়ের জন্য জিনিসপত্র আলাদা করে রাখতে শুরু করেছিলেন। করমজিৎ ছিলেন তাদের একমাত্র ছেলে। কিন্তু, বিয়ের অতিথিদের পরিবর্তে এখন তাঁদের বাড়িতে আসছে শোক বার্তা। বৃহস্পতিবার রাতে তাঁর কফিন বন্দি দেহ বাড়িতে আসবে। আরও জানা গিয়েছে, মাত্র পাঁচ বছর আগে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন করমজিৎ। তাঁর কাকা সর্দার দেবেন্দর সিং জানান, আগে তিনি পাঞ্জাব রেজিমেন্টাল সেন্টারে যুক্ত ছিলেন।
এদিকে, মুকেশ জম্মু ও কাশ্মীরের সাম্বার সীমান্তবর্তী গ্রাম ব্রি কামিলার বাসিন্দা। তাঁরও বিয়ে হওয়ার কথা ছিল ২০-২১ এপ্রিল। পরিবার এরজন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তিনি ২৮ জানুয়ারি বাড়ি গিয়েছিলেন। তাঁর বাবা একজন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মী।।মুকেশ এর আগে সিয়াচেন, পঞ্জাবে ছিলেন। তিনি জানান, মুকেশ গ্রামের তরুণদের খেলাধুলা করতে উৎসাহিত করতে হবে। এমনকী তাদের ক্রিকেট এবং ভলিবলের সরঞ্জামও দিয়েছিল।
জানা গিয়েছে, মুকেশ ২০১৪ সালে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন। তাঁর ছোট ভাইও সেনাবাহিনীতে রয়েছেন। মুকেশের বাবা জানান, এখানকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই যুবকরা সশস্ত্র বাহিনীতে রয়েছেন। এটি একটি ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। কিন্তু কিছু ত্যাগ অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি। এখন দুটি প্রাণ ঝরে যাওয়া তাদের বিয়ের কার্ড অপ্রকাশিতই থেকে যাবে। বিয়েবাড়ির আনন্দের পরিবর্তে শোকের ছায়া দুটি পরিবারে।