বিগত বেশ কয়েকদিন ধরেই ভারতে অনুপ্রবেশের চেষ্টার সময় ধরা পড়েছেন বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি। এরই মাঝে আবার গত কয়েকদিনে শীত বেড়েছে। তারই সঙ্গে ভোরে কুয়াশাও বেড়েছে। যার ফলে অনুপ্রবেশকারীদের সুবিধা হচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। এই সবের মাঝেই আশঙ্কা করা হচ্ছে, বেআইনি ভাবে আরও বেশি সংখ্যক বাংলাদেশিরা অনুপ্রবেশের চেষ্টা করতে পারেন ভারতে। এহেন পরিস্থিতিতে এবার দিল্লিতে অবৈধ ভাবে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের চিহ্নিত করতে অভিযান শুরু হল। একেই দিল্লিতে বিধানসভা নির্বাচন আসন্ন। ওপর থেকে পড়শি দেশের অস্থির অবস্থা। এই আবহে দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নরই পুলিশকে বেআইনি অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করার জন্যে নির্দেশ দিয়েছিলেন।
রিপোর্ট অনুযায়ী, অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করার এই অভিযান চলাকালীন বৃহস্পতিবারেই ২০ জন বাংলাদেশিকে চিহ্নিত করেছে দিল্লি পুলিশ। পূর্ব দিল্লির সীমাপুরিতে বাস করছিলেন এই বাংলাদেশি অনুপ্রেশকারীরা। জানা গিয়েছে, দিল্লির কালিন্দি কুঞ্জ, শহিরবাগ, জামিয়া নগরেও একই ধরনের অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। সেখনে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাসিন্দাদের আইডি কার্ড ও আধার পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার চালু হওয়া এই অভিযান ২ মাস ধরে চলার কথা।
এর আগে বাংলাদেশের তেঁতুলিয়া সীমান্ত দিয়ে ভারতে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করার সময় চার হিন্দুকে গ্রেফতার করা হয় গত বুধবার। প্রথম আলোর রিপোর্ট অনুযায়ী, দেবনগড় ইউনিয়নের সুকানী সীমান্তের ৭৪০ নম্বর মেইন পিলারের ৩ নম্বর সাব–পিলার এলাকা থেকে একই পরিবারের ৩ সদস্য সহ মোট ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতরা সকলেই বাংলাদেশি নাগরিক বলে জানা গিয়েছে। তাঁদের নাম - মণিরাম বর্মণ (৫২), তাঁর স্ত্রী হীরা রানি বর্মণ (৩৫), মণিরামে প্রথম স্ত্রীর ছেলে (প্রথম স্ত্রীর) রিপন বর্মণ (২১) এবং প্রতিবেশী নিমাই চন্দ্র বর্মণ। ধৃতরা ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ধোন্দগাঁও এলাকার বাসিন্দা বলে জানা গিয়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, ঠাকুরগাওঁয়ের এক দালালচক্রের সাহায্যে ভারতে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছিলেন এই চার বাংলাদেশি। সেই সময় বিএসএফ সদস্যরা তাঁদের দেখে ফেলে এবং বিজিবিকে অবগত করে। তখন বিজিবি তাঁদের গ্রেফতার করে।
অপর এক ঘটনায় বাংলাদেশের পঞ্চগড়ের এক নাবালিকা এপারে চলে এসেছেন এবং তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, আতঙ্কে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে ভারতে চলে আসেন ১৭ বছর বয়সি এক নাবালিকা। তবে এপারে এসে বিএসএফের হাতে ধরা পড়েছেন সেই তরুণী। পরে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের হাতে সেই তরুণীকে তুলে দেয় বিএসএফ। ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর দিনাজপুরে। ধরা পড়ার পরে সেই তরুণী দাবি করেছেন, তাঁকে এবং তাঁর পরিবারকে বিগত বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরেই মৌলবাদীরা প্রতিনিয়ত হুমকি দিয়ে যাচ্ছিল। তবে সম্প্রতি তাঁকে অপহরণ করার হুমকি দেওয়া হয়। এরপরই বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে আসার পরিকল্পনা করে সেই নাবালিকা। তবে আইনি পথে ভিসা নিয়ে ভারতে আসতে কতদিন লাগতে পারে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিল। তাই পায়ে হেঁটে সীমান্ত পার করেন তিনি। আর তখনই বিএসএফের হাতে ধরা পড়েন সেই তরুণী।
পুলিশের কাছে সেই তরুণী দাবি করেন, তাঁর আত্মীয়রা ভারতে থাকেন। তাঁদের কাছেই যাওয়ার চেষ্টায় ছিলেন তিনি। সেই নাবালিকা সম্পর্কে পুলিশ আরও জানিয়েছে, ধৃত নাবালিকা বাংলাদেশের পঞ্চগড় জেলার বাসিন্দা। পায়ে হেঁটেই সীমান্ত পার করেছিলেন তিনি। উত্তর দিনাজপুরের চোপড়া ব্লকের ফতেহপুর আউটপোস্টের পাশ দিয়ে ভারতে প্রবেশ করে সেই নাবালিকা। তখন বিএসএফের নজরে পড়েন তিনি। এদিকে বার্তাসংস্থা পিটিআইকে সেই তরুণীর ভারতীয় এক আত্মীয় বলেন, 'সেই নাবালিকা এবং তাঁর পরিবার ইসকনের ভক্ত। বাংলাদেশের মৌলবাদীরা তাঁকে অপহরণ করার হুমকি দিয়েছিল। এছাড়া তাঁর পরিবারকেও খুন করার হুমকি দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সেই নাবালিকাকে ভারতে পাঠানোর পরিকল্পনা করেছিল তাঁর পরিবার। তবে ঠিক কবে তাঁকে পাঠানো হবে, তা আমরা জানতাম না।' জলপাইগুড়িতে থাকা সেই নাবালিকার আত্মীয় আরও জানান, বাংলাদেশে মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভের কাজ করতেন সেই নাবালিকার বাবা। তবে বিগত বহুদিন ধরেই তিনি অসুস্থ।