৩ কোটি ৪৮ লক্ষ ৬৯ হাজার ৬২১ টাকা, ৩২ গ্রাম সোনা এবং ১.২৪ কেজি রুপো। মাত্র ৩০ দিনে এই বিপুল পরিমাণ অনুদান জমা পড়েছে কর্ণাটকের রায়চুড়ে রাঘবেন্দ্র স্বামী মঠের দানপত্রে। সম্প্রতি মন্দিরের একটি ভিডিও প্রকাশ্যে এসেছে। আর সেই ভিডিও দেখে অবাক হয়েছেন নেটিজেনরা। (আরও পড়ুন: ঢাকায় ঘুরল খেলা! সেনা প্রধানের সাথে বৈঠক নিয়ে উলটো দাবি হাসনাতের বেস্ট ফ্রেন্ডের)
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে হাসিনা বিরোধী ঢেউয়ের বিষয়ে আগে থেকে অবগত ছিল ভারত, বললেন জয়শংকর
মন্দির সূত্রে খবর, ষোড়শ শতকের সাধু রাঘবেন্দ্র স্বামীর জন্মতিথি উপলক্ষে প্রায় ৩০ দিন ধরে সেখানে ভক্তদের সমাগম হয়েছে। সে সময়ই মন্দিরের দানপাত্রে জমা পড়েছে ৩ কোটি ৪৮ লক্ষ ৬৯ হাজার ৬২১ টাকা, ৩২ গ্রাম সোনা এবং ১.২৪ কেজি রুপো। আর সেই মন্দিরের সেই ভিডিও প্রকাশ্যে এসেছে। ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, মেঝেতে সার সার দিয়ে বসে রয়েছেন পুরোহিতেরা। তাঁদের সামনে ছড়িয়ে রয়েছে নোট, মুদ্রার পাহাড়। আর মন দিয়ে সেগুলো গুনছেন মন্দিরের পুরোহিতেরা। সেই ভিডিও দেখে কেউ কেউ চমকে গিয়েছেন, আবার কেউ আপ্লুত হয়েছেন। পুরোহিতরা বসে টাকা গুনছেন, আর মাঝখানে টহল দিচ্ছে পুলিশ, এমন দৃশ্য সচরাচর চোখে পড়ে না বলে মত তাঁদের।এমনিতে বছরভরও মঠে ভক্তদের আনাগোনা লেগে থাকে। ভক্তিভাবে উদ্বেল হয়েই দানবাক্সে কিছু না কিছু দিয়ে যান সকলে। এবার উৎসব উপলক্ষে মুক্তহস্তে দান করে যান তাঁরা।
রায়চুড়ের রাঘবেন্দ্র স্বামী মঠে প্রদত্ত এই দান শুধু ভক্তদের উদারতারই প্রমাণ নয়, বরং এটি এই তীর্থস্থানের প্রতি তাদের অটল বিশ্বাসেরও প্রতিফলন। মঠ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই দান থেকে প্রাপ্ত অর্থ ও সম্পদ দরিদ্রদের জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং অন্যান্য দাতব্য কার্যক্রমে ব্যবহার করা হবে। এছাড়াও, মঠের অবকাঠামো উন্নয়ন এবং ভক্তদের জন্য আরও সুবিধা প্রদানের পরিকল্পনা রয়েছে।স্থানীয়রা এই ঘটনাকে গর্বের সঙ্গে দেখছেন। একজন ভক্ত বলেন, 'এই দান দেখায় যে রাঘবেন্দ্র স্বামীর প্রতি আমাদের ভালবাসা ও বিশ্বাস কতটা গভীর। এই মঠ আমাদের আধ্যাত্মিক আশ্রয়স্থল।' আরেকজন ভক্ত মন্তব্য করেন, 'ভাইরাল ভিডিওটি দেখে মনে হয় যেন আমরা সবাই এই পুণ্যকর্মের অংশীদার।'
দক্ষিণ ভারতে রাঘবেন্দ্র স্বামী মঠ পুণ্যার্থীদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে যাঁরা দ্বৈতবাদে বিশ্বাসী। হিন্দু ধর্মে দ্বৈতবাদের উল্লেখ পাওয়া যায় দ্বৈত বেদান্ত দর্শনে। রাঘবেন্দ্র স্বামী ছিলেন ১৬ শতকের একজন বিখ্যাত বৈষ্ণব সাধক ও দার্শনিক। তিনি দ্বৈত বেদান্তের প্রবক্তা মধ্বাচার্যের শিষ্য পরম্পরার অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তাঁর জীবন ও কাজ ভক্তদের মধ্যে গভীর প্রভাব ফেলেছে। তিনি কেবল একজন আধ্যাত্মিক গুরু হিসেবেই নয়, একজন সমাজ সংস্কারক হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। তাঁর সমাধি মঞ্চলায়মে অবস্থিত, যা আজও লক্ষাধিক ভক্তের তীর্থস্থান। রায়চুড়ের এই মঠটিও তাঁর স্মৃতি ও শিক্ষার একটি প্রতীক হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে।
আরও পড়ুন: ফের রক্ত ঝরল বালোচিস্তানে, গুলি করে হত্যা ৪ পুলিশ সহ ৮ জনকে
গত বছর এই রাঘবেন্দ্র স্বামীর মঠেই গিয়েছিলেন ব্রিটেনের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ও তাঁর স্ত্রী অক্ষতা মূর্তি। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন ইনফোসিসের কো-ফাউন্ডার নারায়ণ মূর্তি ও তাঁর স্ত্রী তথা রাজ্যসভার সাংসদ সুধা মূর্তি। তাঁদের রাঘবেন্দ্র স্বামীর মঠে একসঙ্গে আরতি করতেও দেখা গিয়েছিল। সুধা মূর্তি এবং নারায়ণ মূর্তির মন্দিরে উপস্থিতি আরও বিশেষ করে তুলেছিল।