দেশের বিভিন্ন আইআইটিতে ক্রমাগত আত্মহত্যার ঘটনা নিয়ে রীতিমতো উদ্বেগজনক পরিসংখ্যান সামনে এল। গত ৫ বছরে দেশের আইআইটিগুলিতে মোট ৩৭ জন আত্মহত্যা করেছেন। এঁদের মধ্যে ৬ জন দিল্লি আইআইটির পড়ুয়া। দেশের ২৩ টি আইআইটির মধ্যে বাকি ১১ টিতে শেষ পাঁচ বছরে ৩১ জন পড়ুয়ার আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। ২০১৯-২০ থএকে ২০২৩-২৪ পর্যন্ত এই পরসংখ্যান নিঃসন্দেহে অত্যন্ত উদ্বেগের।
এক আরটিআই বিষয়ক সমাজকর্মী ড. বিবেক পান্ডে এই করুণ পরিস্থিতি ঘিরে পরিসংখ্যান হাতে পান। কিন্তু এই আত্মহত্যার নেপথ্যে কী কারণ থাকতে পারে? তা নিয়ে রয়েছে, নানান জল্পনা। এই ৫ বছরে দিল্লি আইআইটিতে ৬ জনের আত্মহত্যা ছাড়াও আইআইটি হায়দরাবাদে ও আইআইটি মাদ্রাজের প্রতিটিতে ৭ জনের মৃত্যুর খবর আসে। আইআইটি হায়দরাবাদে ও আইআইটি মাদ্রাজে এই পড়ুয়া মৃত্যু আত্মহত্যার জেরে হয়েছে বলে খবর। গত ৫ বছরে আইআইটি কানপুরে ৩ জন, আইআইটি বিএইচইউতে ৪ জন, আইআইটি খড়গপুরে ৩ জনের আত্মহত্যার খবর আসে। আইআইটি বম্বে ও ধানবাদে ১ টি করে আত্মহত্যার ঘটনা সামনে এসেছে। তবে আইআইটি গোয়া, ভিলাই, জম্মু, পাটনা, যোধপুর, ইন্দোর, মান্ডি, পালাক্কড়ে এমন আত্মহত্যার ঘটনা নেই। ড. বিবেক পান্ডে বলছেন, ‘ এই ৩৭ পড়ুয়ার মৃত্যু ভয়াবহ ক্ষতি। এটি বলে দেয় যে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক উন্নতি ও স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট রিসোর্সের কতটা দরকার।’
গত বছরই সংসদে একটি পরিসংখ্যান পেশ করে তৎকালীন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুভাষ সরকার জানান, ‘পড়াশোনার চাপ, পরিবার, ও ব্যক্তিগত কারণ, মানসিক চাপ এই সমস্ত হল এমন আত্মহত্যার কারণ।’ উল্লেখ্য, ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের আত্মহত্যার সংখ্যা ভারতে সবচেয়ে বেশি। দেখা গিয়েছে, এমন আত্মহত্যার একটা বড় সংখ্যা আসছে আইআইটি, আইআইএম, ও মেডিক্যাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি থেকে। এক আইআইটি পড়ুয়ার মতে, একাকীত্ব এর বড় কারণ হতে পারে। তিনি বলছেনস ভালো পারফর্ম করার চাপও এর একটি দিক। আইআইটি দিল্লির এক অধ্যাপক বলছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বহু পদক্ষেপ হয়েছে, অ্যাকাডেমিক প্রোগ্রেস গ্রুপ গঠন করা হয়েছে। যারা পড়ুয়াদের শিক্ষাগত পারফরম্যান্সের ওপর নজর রাখছে। এইমসের সাইকিয়াট্রি ডিপার্টমেন্টের ড. নন্দকুমার বলছেন, আত্মহত্যা মানসিক স্বাস্থ্যের নিরিখে থেকে একটি বড় দিক হলেও, এটা চিকিৎসক বা স্বাস্থ্য পেশাগত দিকের সঙ্গে যাঁরা জড়িত, তাঁদের দিয়েও সম্পূর্ণ সমাধান হয় না। তিনি বলছেন, এর কারণ হল, বেশ কিছু পরিবেশগত বিষয়। পরিস্থিতি মানিয়ে নেওয়ার একটি স্বাভাবিক প্রবৃত্তি তৈরি করে সমস্যার সমাধান হতে পারে বলে আশা তাঁর।