শিশির গুপ্ত
আর পাঁচটা গুলির লড়াই নয়। বরং বড়সড় হামলার পরিকল্পনা ছিল জম্মু এবং কাশ্মীরের নাগরোটায় মৃত জঙ্গিদের। সীমান্তের ওপারের (পাকিস্তান) জইশ-ই-মহম্মদের বড় চাঁইদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। যারা সেই হামলার ছক কষেছিল বলে ধারণা গোয়েন্দাদের।
বিষয়টির সঙ্গে অবহিত গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, জঙ্গিদের থেকে উদ্ধার হওয়া একটি জিপিএস এবং চারটি মোবাইল থেকে প্রাথমিকভাবে যে তথ্য পাওয়া গিয়েছে, তাতে স্পষ্ট যে জইশের অপারেশনাল কমান্ডার মুফতি রউফ আসঘার এবং কারি জারারের সঙ্গে জঙ্গিদের যোগাযোগ ছিল। যে আসঘার হচ্ছে জইশ প্রধান মাসুদ আজহারের ছোটো ভাই এবং রাষ্ট্রপুঞ্জের নির্ধারিত জঙ্গি।
গত বৃহস্পতিবার সকালে নাগরোটার বান টোলপ্লাজার কাছে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে জঙ্গিদের গুলির লড়াই শুরু হয়। তাতে চার জঙ্গিকে খতম করা হয়। গুলির লড়াই শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই ভোর ৪ টে ৫০ মিনিট নাগাদ জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালকে সে বিষয়ে জানানো হয়েছিল। পরে শুক্রবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, বিদেশসচিব হর্ষ স্রিংলা এবং দুই গোয়েন্দা প্রধানের উপস্থিতিতে পুরো অভিযানের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে জানান ডোভাল।
গোয়েন্দা সূত্রে খবর, জইশের মতো সংগঠনের আত্মঘাতী জঙ্গিদের মাধ্যমে ভারতে হামলা চালানোর চেষ্টা করছে পাকিস্তান। বিশ্বস্ত সূত্রে ‘হিন্দুস্তান টাইমস’ জানতে পেরেছে, বালাকোটে জঙ্গি প্রশিক্ষণের যে শিবির ছিল, তা জইশের হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাকিস্তানের এজেন্সিগুলি। যে শিবিরে বছর দেড়েক আগে বোমা ফেলেছিল ভারতীয় বায়ুসেনার যুদ্ধবিমান।
প্রাথমিক তদন্ত অনুযায়ী, চার জঙ্গিরই বাড়ি পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশে। তারা শাকারগড় থেকে সাম্বা সেক্টর দিয়ে ভারতে ঢুকেছিল। জঙ্গিদের সম্ভাব্য নিশানা কী ছিল এবং কী পরিকল্পনা ছিল, তা জানতে তদন্ত চালাচ্ছেন উচ্চপদস্থ গোয়েন্দারা। তবে জঙ্গিদের থেকে উদ্ধার হওয়া অস্ত্র, গোলাবারুদ, গ্রেনেড এবং বিস্ফোরক (আরডিএক্স) থেকে স্পষ্ট যে উপত্যকায় বড়সড় হামলা চালানোর ছক ছিল। জঙ্গিদের থেকে ১১ টি একে-সিরিজের রাইফেল, ৩০ টি চিনা গ্রেনেড, ১৬ টি একে ধরনের গোলাবারুদ এবং ২০ কিলোগ্রাম আরডিএক্স উদ্ধার করা হয়েছে। জঙ্গিরা এতটাই প্রশিক্ষিত ছিল যে নিরাপত্তা বাহনী নিদেনপক্ষে একজনকে জীবিত অবস্থায় ধরার চেষ্টা করলেও তা সম্ভব হয়নি।
গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, জেলা উন্নয়ন পর্ষদের ভোট প্রক্রিয়া বানচাল করার পাশাপাশি নিজেদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি থেকে নজর ঘোরানোর জন্যও হামলার ছক করতে পারে পাকিস্তানের সেনা এবং আইএসআই। বিরোধীদের চাপ থেকে বাঁচতে কাশ্মীরের দিকে আবারও নজর ঘোরাতে চাইছে ইমরান খান প্রশাসন।