২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে দিল্লির ৭টি আসনের সবকটিতেই বাজিমাত করেছিল বিজেপি। তবে ২০২০ সালের বিধানসভা ভোটে দিল্লিতে ডাবল ফিগারেও যেতে ব্যর্থ হয়েছিল গেরুয়া শিবির। তার আগে ২০১৪ সালের মোদী ঝড়েও দিল্লির বিধানসভা ভোটে আপের খুঁটি নাড়াতে ব্যর্থ হয়েছিল। তবে ২০২৫ সালে আম আদমি পার্টি হেরে গেল বিজেপির কাছে। এই আবহে কোন পাঁচটি কারণ বিজেপিকে দিল্লি জয়ে সাহায্য করে থাকতে পারে? (আরও পড়ুন: দিল্লির প্রভাব কি পড়বে বাংলায়? ছাব্বিশের ভোটে TMC-র আসন সংখ্যা বলে দিলেন কুণাল)
- আম আদমি পার্টির জন্ম হয়েছি মধ্যবিত্তের বিরক্তি থেকে। তবে বিগত বছরগুলিতে আম আদমি পার্টির জনকল্যাণমূলক সব প্রকল্পই গরিবদের জন্যে ছিল। মধ্যবিত্তের সংজ্ঞা বিভিন্ন ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা হতে পারে। তবে ২০২২ সালের 'পিপল রিসার্চ অফ ইন্ডিয়াস কনজিউমার ইকোনমির' রিপোর্ট অনুযায়ী, দিল্লির মোট জনসংখ্যার ৬৭.১৬ শতাংশই মধ্যবিত্তি।
- এদিকে বিজেপি বারবার করে দাবি করেছে, তারা ক্ষমতায় এলে আম আদমি পার্টির কোনও জনমুখী প্রকল্প বন্ধ হবে না। শুধু তাই নয়, তারা মহিলাদের ২৫০০ টাকা করে মাসিক ভাতা দেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল দিল্লিতে। এর আগে মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যে মহিলাদের ভাতা দেওয়ার প্রকল্প চালিয়ছে বিজেপি।
- আম আদমি পার্টি ক্ষমতায় থাকাকালীন দিল্লির রাস্তার বেহাল দশা নিয়ে বারবার আক্রমণ শানিয়েছে বিজেপি। এদিকে দিল্লি পুরসভাও এখন আম আদমির পার্টির হাতে। এই আবহে তারা রাস্তার এই বেহাল দশার জন্যে বিজেপিকে দোষী সাব্যস্ত করতে পারেনি। অপরদিকে বিজেপির কেন্দ্রীয় সরকার বিগত দিনে দেশের নানান জায়গায় যে পরিকাঠামোগত উন্নয়ন করেছে, তা নিশ্চয় নজর এড়িয়ে যায়নি দিল্লিবাসীর।
- এদিকে দুর্নীতির কারণে আম আদমি পাটির শীর্ষ স্থানীয় নেতারা জেলে গিয়েছেন বিগত দিনে। কেজরিওয়াল নিজে জেলে গিয়েছেন। এরই মাঝে দিল্লির আপ সরকারের সঙ্গে ক্রমাগত দ্বন্দ্ব চলে আসছিল লেফটেন্যান্ট গভর্নরের। এই আবহে বিজেপি 'ডাবল ইঞ্জিন সরকার' গঠনের স্বপ্ন দেখতে সফল হয়েছে।
- ২০১২ সালে গঠন করা হয়েছিল আম আদমি পার্টি। এরপর ২০১৩ সাল থেকে আপ ছাড়া অন্য কোনও দল দিল্লি সরকারের গদিতে বসেনি। এই আবহে আম আদমি পার্টির বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার হাওয়া ছিলই। এই আবহে অনেক বিধায়ককেই এলাকার মানুষ পেতেন না বলে অভিযোগ উঠেছিল। সেই সব অসন্তোষের লাভ পেয়েছে বিজেপি।
উল্লেখ্য, বিগত একদশকে দিল্লির গদিতে ছিল কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি। ২০১৫ এবং ২০২০ সালের ভোটে তো কার্যত ঝাড় ঝড় তুলেছিল তারা। তবে ২০২৫ সালের নির্বাচনের আগে একাধিক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছিল কেজরিকে। নিজে তিনি আবগারি দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত। এর জন্যে তিনি জেলে পর্যন্ত গিয়েছেন। এর আগে দুর্নীতির দায়ে আপ হেভিওয়েট মণীশ সিসোদিয়া, সত্যেন্দ্র জৈনরা জেলে গিয়েছিলেন। যে আপ দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্যে জন্ম নিয়েছিল, তারাই দুর্নীতির অভিযোগে জর্জরিত হয়ে পড়েছিল। এই আবহে এই নির্বাচনে পদ্মপাঁকে আটকে যায় ঝড় থেমেছে ঝাড়ুর। (আরও পড়ুন: বাংলাদেশেই নেই ইউনুসের ‘কথার দাম’, তাঁর প্রেস সচিব আবার আঙুল তুললেন ভারতের দিকে)
আরও পড়ুন: CM হবেন কি না ঠিক নেই, তবে দিল্লিতে BJP সরকারের 'অগ্রাধিকার' জানালেন পরবেশ
শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, বর্তমানে বিজেপি দিল্লির ৫০টি আসনে এগিয়ে আছে, যা কি না ম্যাজিক ফিগারের থেকে ১৪টি আসন বেশি। এদিকে আম আদমি পার্টি এগিয়ে ২০টি আসনে। কংগ্রেস শূন্যে দাঁড়িয়ে। আম আদমি পার্টির হেভিওয়েট নেতা - সৌরভ ভারদ্বাজ, সত্যেন্দ্র জৈন, মণীশ সিসোদিয়ারা হেরেছেন নিজেদের আসনে। অরবিন্দ কেজরিওয়াল নিজে নয়াদিল্লি আসন থেকে হেরে গিয়েছেন। উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের নির্বাচনে এই নয়াদিল্লি আসনেই তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিতকে হারিয়েছিলেন কেজরিওয়াল। সেই আসনে তিনি নিজে হারলেন এবারে। এই আবহে বিজেপি ২৭ বছর পর ফের একবার দিল্লিতে ক্ষমতা দখল করতে চলেছে।