একবিংশ শতাব্দীতেও চূড়ান্ত অন্ধবিশ্বাস! যার জেরে চরম অমানবিক নির্যাতন ভোগ করতে হল ৫০ বছরের এক মহিলাকে। ঘটনাটি ঘটেছে রাজস্থানের বুন্দি জেলায়।
শুক্রবার স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের তরফ থেকে জানানো হয়, এক স্বঘোষিত তান্ত্রিক ওই মহিলাকে 'ডাইনি' বলে দেগে দেয়। তারপর সেই মহিলার শরীর থেকে 'অশুভ আত্মা'কে দূর করতে শুরু হয় অমানুষিক অত্যাচার।
ওই তান্ত্রিক প্রথমে মহিলাকে একটি গাছের সঙ্গে বেঁধে দেয়। তারপর তাঁর মাথার সমস্ত চুল কেটে দেওয়া হয়। মুখে কালি লেপে দেওয়া হয়। সবশেষে একটি লোহার রড আগুনে তাতিতে সেই তপ্ত লোহা দিয়ে চলে মার!
বুন্দির পুলিশ সুপার রাজেন্দ্র কুমার মীনা জানিয়েছেন, আক্রান্ত মহিলা আদতে সাহাপুরা জেলার বাসিন্দা। টানা দু'দিন তাঁকে ডাইনি অপবাদ দিয়ে, তাঁর উপর এই পৈশাচিক নির্যাতন চালানো হয়।
নারকীয় এই ঘটনাটি ঘটে হিন্দোলি থানা এলাকার গুদাগোকুলাপুরা গ্রামের কাছেই অবস্থিত একটি জায়গায়। স্থানীয় বাসিন্দারা সেখানে কোনও এক আঞ্চলিক দেবতা বা দেবীর পুজো করেন। সেই উপাসনাস্থলেই ওই মহিলাকে চরম হেনস্থা ও নির্যাতনের শিকার হতে হয়।
পুলিশ সুপার আরও জানিয়েছেন, আক্রান্ত মহিলার ভাগ্নী স্থানীয় গ্রামের বাসিন্দা। সেখানেই তাঁর শ্বশুরবাড়ি। দাবি করা হচ্ছে, আক্রান্ত মহিলার উপর 'অশুভ আত্মার প্রভাব' থাকায় তাঁর ভাগ্নীর জীবনে নাকি অশান্তি নেমে এসেছে!
সেই কারণেই, ভাগ্নীর সংসারে সুখ আনতে মাসির 'ভূত ছাড়ানোর' ব্যবস্থা করা হয়!
পুলিশের দাবি, এই ঘটনার খবর তাদের কাছে পৌঁছানোমাত্রই তারা সেখানে পৌঁছে যায়। মহিলাকে উদ্ধার করে এবং বাবুলাল নামে স্বঘোষিত ওই তান্ত্রিক ও তার দুই চ্যালাকে গ্রেফতার করা হয়। এই ঘটনা ঘটে শুক্রবার। পুলিশ জানিয়েছে, আক্রান্ত মহিলার বয়ানের ভিত্তিতেই ওই তিনজনকে পাকড়াও করা হয়েছে।
অন্যদিকে, আক্রান্ত মহিলার পরিবারের সদস্যরা দাবি করছেন, নির্যাতনের এই ঘটনাটি নাকি বেশ কয়েক দিন আগে ঘটেছিল। যার জেরে গত ২৭ নভেম্বর তাঁরাই পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলেন। কিন্তু, পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে কোনও পদক্ষেপ করেনি।
পরিবারের সদস্যদের আরও দাবি, তাঁদের কাছে একটি এক মিনিট লম্বা ভিডিয়ো রেকর্ডিং রয়েছে। যা থেকে প্রমাণ হয়ে যায় যে এই ঘটনার নেপথ্যে এলাকার কিছু বাসিন্দা রয়েছেন। যাঁদের সাহায্য এবং উস্কানিতে ওই মহিলার উপর নির্যাতন চালানো হচ্ছিল।
এই গোটা বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ডেপুটি পুলিশ সুপার (হিন্দোলি সার্কেল) অজিত মেঘবংশী দাবি করেন, আসলে ওই নির্যাতিতা মহিলাই গত ২৭ নভেম্বর পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলেন। কিন্তু, তারপর তিনি নিজের সাহাপুরার বাড়িতে ফিরে যান।
এরপর আক্রান্ত মহিলার বয়ান রেকর্ড করার জন্য পুলিশ এলাকায় যায়। অন্যদিকে, মহিলার পরিবারের সদস্যরা স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে এক মিনিটের সেই ভিডিয়ো ক্লিপিংটি তুলে দেন। সেই ভিডিয়োর সূত্র ধরেই পুলিশ মহিলাকে চিহ্নিত করে এবং তাঁকে খুঁজে পায়। এরপর তাঁকে সেখান থেকে হাসপাতালে পাঠানো হয় স্বাস্থ্যপরীক্ষা করানোর জন্য।
ডিএসপি আরও জানান, শুক্রবার সন্ধ্যায় এই ঘটনায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। ধৃত বাবুলাল ও তার সাঙ্গোপাঙ্গোদের জেরা করা হচ্ছে। বাকি অভিযুক্তদের খোঁজেও তল্লাশি চলছে।