বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে এক সময় প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আওয়ামী লিগের ছাত্র সংগঠন ‘বাংলাদেশ ছাত্রলিগ’- এর সদস্যদের দাপট ছিল। ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে দাপিয়ে বেরিয়েছিলেন এই সংগঠনের ছাত্র সদস্যরা। তবে অগস্টে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের সঙ্গে সঙ্গেই অবস্থার পরিবর্তন ঘটে। বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লিগের সদস্যদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতেই এখন আত্মগোপন করে বেড়াচ্ছেন ছাত্রলিগের সদস্যরা। এই অবস্থায় আওয়ামী লিগের সঙ্গে যুক্ত বহু ছাত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন ।
আরও পড়ুন: হাসিনা পরবর্তী আমলে বাংলাদেশে ভুয়ো মুক্তি যোদ্ধা সার্টিফিকেট বাতিলের ঘোষণা
একটি আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যে ৫০ হাজারেরও বেশি ছাত্রলিগের সদস্য রয়েছেন যারা আত্মগোপন করে বেড়াচ্ছেন। এরা সকলেই ছাত্র। তারা পড়াশোনা ভয়ে চালিয়ে যেতে পারছেন না। পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে তাদের। গত ২৩ অক্টোবর মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ছাত্রলিগকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে চিহ্নিত করে নিষিদ্ধ করেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক উল্লেখ করেছে , গত ১৫ বছর ধরে ছাত্রলিগের সদস্যরা হিংসা, হয়রানি এবং শোষণের সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন। তারপর থেকেই গ্রেফতারের ভয়ে এখন পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে ছাত্রদের।
আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, রসায়নের একজন ছাত্র বলেছেন, তিনি কিছুদিন আগে পর্যন্ত সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। এখন তাকে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। তার ভবিষৎ নষ্ট হওয়ার পথে।
জানা যাচ্ছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলিগ নেতা শাহরিন আরিয়ানা এবং সৈকত রায়হানকে গত ১৮ অক্টোবর গ্রেফতার করা হয়েছিল। তবে বেআইনিভাবে ভুয়ো অভিযোগ এনে তাদের গ্রেফতার করার অভিযোগ তুলেছিলেন পরিবারের সদস্যরা।
এদিকে, অন্তর্বর্তী সরকার ২৩ অক্টোবর কার্যকর সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯- এর অধীনে ছাত্রলিগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এই আইনের অধীনেই একসময় শেখ হাসিনার সরকার এক দশকেরও বেশি সময় ধরে অন্য ছাত্র সংগঠন ছাত্রদল এবং ইসলামী ছাত্র শিবিরের মতো বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলিকে নিষিদ্ধ করেছিল। তবে ইউনুসের সরকার তাদের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে। বিরোধী ছাত্র দলগুলিকে ক্যাম্পাসের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করার অনুমতি দিয়েছে৷
উল্লেখ্য, জুলাই মাসে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার নিয়ে তীব্র আন্দোলনের জেরে অস্থির হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশ। পরে তা গণ আন্দোলনের রূপ নেয়। ৫ অগস্ট হাসিনা দেশ ছেড়ে পালাতেই তাঁর বাসভবনসহ সরকারি ভবনে হামলা চালায় বিক্ষোভকারীরা। এরপরে হিংসা অব্যাহত থাকে বাংলাদেশে। আওয়ামী লিগের সদস্য ও ছাত্ররা লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। অনেকে আত্মগোপনে করে বা আটক হয়।