একেই বোধ হয় বলে, 'ঠগ বাছতে গাঁ উজার'! চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর সরকার নাকি ঠিক করেছে, প্রসাশনের অন্দর থেকে দুর্নীতি একেবারে সমূলে উপড়ে ফেলবে। আর সেটা করতে গিয়েই কার্যত নয়া রেকর্ড গড়ে ফেলেছে তারা।
আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের দাবি, দুর্নীতির অভিযোগে যে তদন্ত শুরু হয়েছে চিনে, তার আওতায় এসে পড়েছেন ৫৬ জন উপ-মন্ত্রী বা তার থেকেও উচ্চতর পদে আসীন ব্যক্তিরা!
তথ্য বলছে, এর আগে - গতবছর - ২০২৩ সালে এই ধরনের তদন্তের আওতায় এসেছিলেন ৪৫ জন উচ্চপদস্থ ব্যক্তি। সেই হিসাবে এবার সংখ্যাটা বেড়েছে প্রায় ২৫ শতাংশ। সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট-এর তরফেই এমনটা দাবি করা হয়েছে।
দুর্নীতি বিরোধী এই তদন্ত চালানোর দায়িত্বে রয়েছে - 'সেন্ট্রাল কমিশন ফর ডিসিপ্লিন ইন্সপেকশন' (সিসিডিআই)। এটি হল চিনের প্রধান দুর্নীতি প্রতিরোধী নিয়ামক সংস্থা।
চিনা সংবাদমাধ্যমের বিভিন্ন রিপোর্টে প্রকাশ, সরকার ও প্রসাশনের একেবারে শীর্ষস্তরে দুর্নীতির অভিযোগ আগের তুলনায় দ্বিগুণ হয়েছে। বিমান পরিষেবা এবং প্রতিরক্ষা শিল্পেও লক্ষ্যণীয়ভাবে দুর্নীতির অভিযোগ বেড়েছে।
তবে, ২০২৩ সালে যেখানে বিভিন্ন আর্থিক ক্ষেত্রে দুর্নীতি ফুলে ফেঁপে উঠেছিল, এবছর তাতে নাকি অনেকটাই লাগাম টানা সম্ভব হয়েছে। গত বছর রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের আটজন উচ্চ-আধিকারিকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত করা হয়েছিল। এবার সেই সংখ্যাটা কমে হয়েছে চার।
অন্যদিকে, এবছর যে ৫৬ জনকে দুর্নীতির তদন্তের স্বার্থে আটক করা হয়েছে, তাঁদের মধ্য়ে ১২ জন শাসক কমিউনিস্ট পার্টি এবং বিভিন্ন সরকারি সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সংখ্য়াটা গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ।
এর থেকেই স্পষ্ট, দুর্নীতি উপড়ে ফেলতে সরকার ও প্রশাসনের একেবারে ওপর তলায় নজর পড়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।
প্রসঙ্গত, সেই ২০১২ সাল থেকেই দুর্নীতি প্রতিরোধী অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন শি জিনপিং। যার উদ্দেশ্যে হল, দুর্নীতির শিখরে বসে থাকা রাঘববোয়াল থেকে শুরু করে দুর্নীতিতে যুক্ত নিচুতলার চুনোপুঁটি - সকলকেই চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। সরকারের তরফে অন্তত এমনটাই দাবি করা হয়।
চিনের লাল ফৌজ বা পিপলস লিবারেশন আর্মির রকেট ফোর্স - যারা মূলত সেদেশের পরমাণু অস্ত্রভাণ্ডার দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে, তার অন্দর থেকেও দুর্নীতি সমূলে উৎখাত করতে চাইছে জিনপিং প্রসাশন।
কিন্তু, সমস্য়া হল, বর্তমান প্রেসিডেন্টের আমলেই চিনের লাল ফৌজে দুর্নীতির শিকড় ক্রমশ ছড়িয়েছে এবং মজবুত থেকে আরও মজবুত হয়েছে।
এদিকে, শি জিনপিং চাইছেন, চিনের সেনাবাহিনী আগামী দিনে একটি গ্লোবাল আর্মি বা আন্তর্জাতিক বাহিনীর সমান শক্তিশালী হবে। কিন্তু, ভিতরের দুর্নীতি তাঁর সেই স্বপ্ন পূরণে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।