লারসেন অ্যান্ড টুব্রোর চেয়ারম্যান এসএন সুব্রহ্মণ্যনের '৯০ ঘণ্টা কাজ' এবং নারায়ণমূর্তির '৭০ ঘণ্টা কাজ' মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক জারি আছে বিগত বেশ কয়েক মাস ধরেই। এই নিয়ে বেশ কয়েকজন শিল্পপতি নিজেদের প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। সামলোচিত হয়েছেন সুব্রহ্মণ্যন এবং নারায়ণমূর্তি। এরই মাঝে অবশ্য কঠোর পরিশ্রমের পক্ষে সওয়াল করেই সুব্রহ্মণ্যন এবং নারায়ণমূর্তিকে কার্যত সমর্থন করলেন নরেন্দ্র মোদীর আস্থাভাজন প্রাক্তন আমলা। ভারতের জি-২০ শেরপা এবং নীতি আয়োগের প্রাক্তন সিইও অমিতাভ কান্ত এই নিয়ে বললেন, 'ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালেন্সের চক্করে কঠোর কাজ না করার বিষয়টিকে ফ্যাশনে পরিণত করা উচিত হবে না। ৮০ হোক কি ৯০ ঘণ্টা, দেশকে কঠোর কাজ করতে হবে।' (আরও পড়ুন: শেষ পর্যন্ত কি সত্যি হল আশঙ্কা? EPFO-র সুদের হার চূড়ান্ত করল বোর্ড)
আরও পড়ুন: কাজের সময় ঘুমিয়ে পড়ে সাসপেন্ড হয়েছিলেন, সেই সরকারি কর্মীর পক্ষে রায় হাইকোর্টের
বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে ২৭ ফেব্রুয়ারি অমিতাভ কান্ত বলেন, 'কাজ এবং ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে সামঞ্জস্য রাখার জন্যে যুব সমাজকে এটা বলবেন না যে তাঁদের কঠোর পরিশ্রম করতে হবে না। এতে যুব সমাজের কাছে ভুবার্তা যাচ্ছে। যদি আমাদের লক্ষ্য হয় ভারতকে ৪ ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনীতিথেকে ৩০ ট্রিলিয়নের অর্থনীতিতে পরিণত করব, তাহলে তা বিনোদনের মাধ্যমে সম্ভব নয়। কোন মুভি তারকা কী বললেন, তা শুনলে হবে না। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং চিনের অর্থনৈতিক অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে গোটা দেশের কঠোর পরিশ্রমের ফলে। আমরা এমন লোকজনের প্রশংসা করছি, যাঁরা বলছেন, কঠোর পরিশ্রম করা উচিত নয়। কিন্তু কেন? ভারতকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।' প্রসঙ্গত, বিভিন্ন সময়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা অমিতাভ কান্ত মোদীর আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত। এদিকে বিজেপি দাবি করে, মোদী দিনে মাত্র ৩-৪ ঘণ্টাই ঘুমান। বাকি সময় তিনি কাজ করেন। এহেন মোদী ঘনিষ্ঠ অমিতাভের গলাতেও শোনা গেল 'কঠোর পরিশ্রম' করার বার্তা। (আরও পড়ুন: লাহোরে খেলছেন আফগানরা, পাকিস্তানে পাশের প্রদেশেই তালিবানি মসজিদে বিস্ফোরণ, মৃত ৫)
আরও পড়ুন: টানা দ্বিতীয় দিন দাম কমল সোনার, আজ কলকাতায় কততে বিকোচ্ছে হলুদ ধাতু?
উল্লেখ্য, সম্প্রতি কর্মীদের সঙ্গে ভার্চুয়াল সাক্ষাৎ চলাকালীন সুব্রহ্মণ্যনকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, কেন লারসেন অ্য়ান্ড টুব্রোর মতো মাল্টি-বিলিয়ন ডলার মূল্যের একটি সংস্থা এখনও কর্মীদের শনিবার কাজ করাচ্ছে? তার জবাবে সুব্রহ্মণ্যন নাকি বলেছিলেন, 'আমার এটা ভেবে অনুশোচনা হচ্ছে যে আমি আপনাদের দিয়ে রবিবারও কাজ করাতে পারছি না। আমি যদি আপনাদের দিয়ে রবিবারও কাজ করাতে পারতাম, তাহলে আমি খুশি হতাম। কারণ, আমি রবিবার কাজ করি। বাড়িতে বসে আপনারা কী করবেন? কতক্ষণ নিজের বউয়ের দিকে তাকিয়ে থাকবেন? ধুর, অফিসে চলে যান। কাজ করুন।' এরপরই সুব্রহ্মণ্যন তাঁর এক অভিজ্ঞতা কর্মীদের সঙ্গে শেয়ার করে বলেন, 'একবার এক চিনা ব্যক্তির সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল। তিনি দাবি করেছিলেন, চিন অনায়াসেই আমেরিকাকে হারিয়ে দিতে পারে। কারণ, চিনারা সপ্তাহে ৯০ ঘণ্টা কাজ করেন। সেখানে মার্কিনিরা সপ্তাহে মাত্র ৫০ ঘণ্টা কাজ করেন। তাই আপনাকে যদি বিশ্বের সেরা হতে হয়, তাহলে প্রত্যেক সপ্তাহে ৯০ ঘণ্টা করে কাজ করতেই হবে। আপনারা সেটা শুরু করে দিন।' পরে সুব্রহ্মণ্যনের এই মন্তব্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়তেই বিতর্কের ঝড় ওঠে। এবং অনেক শিল্পপতি এই নিয়ে নিজেদের মতামত প্রকাশ করেন।
পরে এই বিতর্ক নিয়ে লারসেন অ্য়ান্ড টুব্রোর হিউম্যান রিসোর্স প্রধান সোনিকা মুরলীধরন দাবি করেন, সংস্থার চেয়ারম্যানের মন্তব্যের পুরোপুরি ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। ওই মন্তব্যের আগে কী বলেছেন, পরে কী বলেছেন, সেইসব বিবেচনা না করেই তাঁকে নিয়ে অহেতুক সমালোচনা করা হচ্ছে। কখনওই সপ্তাহে ৯০ ঘণ্টা কাজের ‘নিদান’ দেননি বা ঘুরিয়েও সেটা বলতে চাননি। একেবারে হালকা চালে সুব্রহ্মণ্যন সেই মন্তব্য করেছিলেন বলে দাবি করেছেন সোনিকা। সোনিকার কথায়, 'উনি প্রত্যেক কর্মীকে নিজের বর্ধিত পরিবারের অংশ হিসেবে বিবেচনা করেন। একতা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক বোধ জাগিয়ে তোলেন, যা আজকের কর্পোরেট দুনিয়ায় বিরল।' তবে তাতেও বিতর্ক থামার নাম নেই।