অমানুষিক কাজের চাপে এক যুবতীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠল। যে ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন শিবসেনা (উদ্ধব ঠাকরে শিবির) সাংসদ প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদী। তিনি দাবি করেছেন, এই ঘটনার পরে কর্পোরেট সংস্থাগুলির অতি অবশ্যই নিজেদের নীতি বিবেচনা করে দেখা উচিত। ‘হিউম্যান রিসোর্স’ সংক্রান্ত নীতির পর্যালোচনা করার পাশাপাশি কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর দেওয়ার পক্ষেও সওয়াল করেছেন রাজ্যসভার সাংসদ। বিশেষত পড়াশোনা শেষে যাঁরা সদ্য চাকরিতে যোগ দিয়েছেন, তাঁদের দিকে আরও বেশি করে নজর দেওয়া উচিত বলে দাবি করেছেন প্রিয়াঙ্কা।
আর তিনি যে মন্তব্য করেছেন, সেটি একটি ভাইরাল পোস্টের প্রেক্ষিতে। সোশ্যাল মিডিয়ায় যে পোস্ট (সত্যতা যাচাই করেনি হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা) ভাইরাল হয়ে গিয়েছে, তাতে দাবি করা হয়েছে যে ওই যুবতীর মৃত্যুর পরে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে একটি চিঠি (সত্যতা যাচাই করেনি হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা) লিখেছেন তাঁর মা। আর তাতেই 'অমানুষিক কাজের চাপের' কথা তুলে ধরেছেন তিনি।
ওই ভাইরাল চিঠির বয়ান অনুযায়ী, মহিলা জানিয়েছেন যে গত বছরের নভেম্বরে চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেটের পরীক্ষায় পাশ করেছিলেন তাঁর মেয়ে। ১৯ মার্চ যোগ দিয়েছিলেন EY-তে। পুণেতে তাঁর অফিস ছিল। কিন্তু ২০ জুলাই তাঁর মেয়ের মৃত্যু হয়। ঠিক কী কারণে ২৬ বছরের চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেটের মৃত্যু হয়েছে, সে বিষয়ে কিছু জানালেও অফিসে তাঁর মেয়ের উপর কাজের কী মারাত্মক কাজ ছিল এবং দিন-রাত, ছুটি, সপ্তাহান্ত কোনও কিছুর পরোয়া না করেই কীভাবে কাজ চাপিয়ে দেওয়া হত, তা তুলে ধরেছেন মহিলা। বিশেষত একটি টিমের দিকে আঙুল তুলেছেন তিনি।
চিঠির বয়ান অনুযায়ী, মহিলা দাবি করেছেন, তাঁর মেয়ে যখন EY পুণের ওই নির্দিষ্ট টিমে যোগ দিয়েছিলেন, তখন অনেকেই বলেছিলেন যে অমানুষিক কাজের চাপের জন্য অতীতে চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন ওই টিমের একাধিক সদস্য। অফিসের পার্টিতেও এক সহকর্মী বলেছিলেন, তাঁর মেয়ে যে টিমে আছেন, সেই টিমের ম্যানেজারের অধীনে কাজ করতে গেলে নাভিঃশ্বাস উঠবে।
‘রাতে ফোন করে বলতেন যে সকালে রিপোর্ট চাই’
টিম ম্যানেজারের দিকেই আঙুল তুলে মহিলা দাবি করেছেন যে নিজে ক্রিকেট ম্যাচ দেখবেন বলে অনেক সময় মিটিংয়ের সময় পালটে দিতেন। দিনের একেবারে শেষে গিয়ে কাজ চাপিয়ে দিতেন তাঁর মেয়ের উপরে। চিঠির বয়ান অনুযায়ী, মহিলা দাবি করেছেন, তাঁর মেয়ের যে কাজ ছিল, সেটা তো করতেই হত। সেইসঙ্গে বাড়তি কাজও চাপিয়ে দিতেন টিম ম্যানেজার। রাতে ফোন করে বলতেন যে পরদিন সকালের মধ্যে এই কাজটা শেষ করে দিতে হবে। ছুটির দিনে কাজ চাপিয়ে দিতেন। আর মেয়ে যদি সেই ‘অমানুষিক চাপ’ নিয়ে কিছু বললেই শুনতে হত যে ‘তুমি রাতেও কাজ করতে পারো। আমরা সবাই তাই করেছি।’
‘পোশাক পরিবর্তনের শক্তিটুকুও থাকত না মেয়ের’
চিঠির বয়ান অনুযায়ী, মহিলা দাবি করেছেন যে তাঁর মেয়ের এমন অবস্থা হত যে অফিসের পরে বাড়িতে যখন ফিরতেন, তখন শরীরের মধ্যে বিন্দুমাত্র শক্তি পড়ে থাকত না। সবকিছু নিঃশেষ হয়ে যেত। অফিসের পোশাক পরিবর্তনের জন্যও যে ন্যূনতম শক্তি লাগত, সেটাও থাকত না তাঁর মেয়ের। স্রেফ কোনওক্রমে বাড়িতে এসে বিছানায় পড়ে যেতেন। আর তারপরও তাঁর থেকে একের পর এক রিপোর্ট চাওয়া হত বলে দাবি করেছেন মহিলা।
'বুকে ব্যথা হচ্ছিল, ঘুম হচ্ছিল না'
ওই চিঠির বয়ান অনুযায়ী, মহিলা দাবি করেছেন যে মেয়ের মৃত্যুর ঠিক ১৩ দিন আগে (৭ জুলাই) সমাবর্তন অনুষ্ঠান ছিল। সেজন্য ৬ জুলাই কোচি থেকে পুণেতে এসেছিলেন। অনেকটা রাতে পুণেতে পৌঁছালেও মেয়েকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন। কারণ কয়েক সপ্তাহ ধরে মেয়ের বুকে ব্যথা হচ্ছিল। তখন চিকিৎসক জানিয়েছিলেন যে মেয়ের ইসিজি রিপোর্ট স্বাভাবিক আছে। কিন্তু কার্যত ঘুম হচ্ছে না মেয়ের। অনেক দেরিতে খাচ্ছেন। তার ফলে এরকম হচ্ছে। আর কেন সেরকম হচ্ছে, সেটার প্রমাণ ৭ জুলাই পেয়েছিলেন মহিলা। রবিবার হওয়া সত্ত্বেও সেদিন বিকেল পর্যন্ত মেয়েকে কাজ করে যেতে হয়েছিল। তারপর যেতে হয়েছিল নিজের সমাবর্তনে।
'শেষকৃত্যে আসেননি অফিসের একজনও'
তবে সেই ‘অমানুষিকতা’ সেখানেই শেষ হয়নি। ওই চিঠির বয়ান অনুযায়ী, মহিলা দাবি করেছেন যে তাঁর মেয়ের মৃত্যুর পরে শেষকৃত্যে অফিসের একজনও আসেননি। একজনও নন। যে সংস্থা মূল্যবোধ, মানবিকতার মতো বিষয় নিয়ে কথা বলে, সেই কোম্পানিই কীভাবে এরকম কাজ করতে পারল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ওই মহিলা। যদিও বিষয়টি নিয়ে EY-র তরফে কোনও মন্তব্য করা হয়নি।