মন্দির-মসজিদ নিয়ে দেশব্যাপী বিতর্ক ও বিবাদের মধ্য়েই প্রায় ৫০ বছরের পুরোনো এবং প্রায় ৩৪ বছর ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা একটি মন্দিরের খোঁজ পাওয়া গেল বলে দাবি করা হচ্ছে।
রবিবার পরিত্যক্ত এই মন্দিরটি 'আবিষ্কার' করা হয় উত্তরপ্রদেশের বুলন্দশহরের খুরজা কোতওয়ালি নগরের সালমা হাকান এলাকায়।
যে এলাকায় এই মন্দিরটি 'খুঁজে পাওয়া গিয়েছে' বলে দাবি করা হচ্ছে, সেটি একটি মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা।
প্রসঙ্গত, কিছু দিন আগে উত্তরপ্রদেশের সম্ভলেও প্রায় একই ধরনের একটি ঘটনা ঘটেছিল। সেখানে বহু বছরের পুরোনো এবং পরিত্যক্ত একটি মন্দির পুনরায় খোলা হয়েছিল। ইতিমধ্যেই সম্ভলের সেই মন্দিরে ফের পুজো শুরু হয়েছে।
ঘটনা হল, যেখানে মন্দির-মসজিদ বিতর্কের জেরে দেশের নানা প্রান্ত থেকে অশান্তির খবর আসছে, তারই মাঝে সালমা হাকান এলাকায় এই মন্দির খুঁজে পাওয়ার খবর প্রকাশ্যে আসার পর সেখানে, মূলত স্থানীয় বাসিন্দাদের পক্ষ থেকে দেখা গিয়েছে সৌভ্রাতৃত্ব ও সাম্প্রদায়িক সহাবস্থানের এক ছবি। যা সর্বত্রই সমান কাম্য।
মন্দির খুঁজে পাওয়ার খবর শুনে যাঁরা ওই এলাকায় আসছেন এবং মন্দিরটি দর্শন করছেন, তাঁদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন এলাকার মুসলমান বাসিন্দারা। তাঁরা আগতদের সম্পূর্ণ সহযোগিতা করছেন।
১৯৯০ সালের দাঙ্গার আগে এই এলাকায় প্রায় ৬০টি যাতব পরিবার থাকত। মনে করা হচ্ছে, এই মন্দিরের সঙ্গে সেই পরিবারগুলির সম্পর্ক থাকতে পারে।
একথা জানিয়েছেন যাতব বিকাশ মঞ্চের সভাপতি কৈলাস ভাগমল গৌতম। সূত্রের দাবি, যেহেতু দীর্ঘদিন ধরে (প্রায় ৩৪ বছর) এই মন্দিরের কোনও রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়নি, তাই সেটির এখন ভগ্নদশা।
ইতিমধ্য়েই মন্দিরটি পরিদর্শন করে গিয়েছেন গৌতম। সঙ্গে ছিলেন বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি)-এর প্রতিনিধিরাও। তাঁরা মন্দিরটির কাঠামোর অবস্থা খতিয়ে দেখেছেন।
তবে, ইতিমধ্যেই মন্দির চত্বর দখলের অভিযোগে সরব হয়েছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। তাদের মেরঠের কার্যালয়ের আধিকারিক সুনীল সোলাঙ্কি বিষয়টি নিয়ে বুলন্দশহরের জেলাশাসককে একটি স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন।
টাইমস অফ ইন্ডিয়া-এ প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, সেই স্মারকলিপিতে দাবি জানানো হয়েছে, যাতে অবিলম্বে ওই মন্দিরের আশপাশ থেকে দখলদারদের হটিয়ে দেওয়া হয়। সোলাঙ্কি বলেন, 'আমরা ওই মন্দিরটি সংস্কার করে তার পবিত্রতা রক্ষা করতে চাই। এবং সেটিকে তার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে চাই।'
বিষয়টি নিয়ে খুরজার মহকুমাশাসক দুর্গেশ সিং বলেন, 'ওই গোটা এলাকাটিই ভীষণ শান্তিপূর্ণ। আর ওখানে কোনও দিনই মন্দির নিয়ে কোনও বিতর্ক ছিল না। না আগে ছিল, না এখন আছে। স্থানীয় বাসিন্দারাই আমাদের জানিয়েছেন, ওই মন্দিরটি সম্ভবত যাতবদের তৈরি করা। তারা এখন আর কেউ ওই এলাকায় থাকে না। এবং তারাই ওই মন্দিরের বিগ্রহগুলি সঙ্গে করে নিয়ে চলে গিয়েছিল। পরে সেগুলি স্থানীয় একটি নদীতে বিসর্জন দিয়ে দেওয়া হয়।'