দাঙ্গা বিধ্বস্ত মণিপুরে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের সফর এখানকার আমজনতার জন্য 'সান্ত্বনার স্পর্শ'-এর সমতুল্য হবে এবং তাঁদের মধ্যে নতুন 'আশা সঞ্চার' করবে। শনিবার (২২ মার্চ, ২০২৫) এই মন্তব্য করেছেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এন কোটিশ্বর সিং।
উল্লেখ্য, বিচারপতি বি আর গাভাইয়ের নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের পাঁচজন বিচারপতির একটি প্রতিনিধিদল এদিনই দু'দিনের সফরে মণিপুর পৌঁছয়। এই প্রতিনিধিদলের সদস্যরা একটি ত্রাণ শিবির পরিদর্শন করেন। তাঁরা সেখানে আশ্রিত এবং নিজভূমেই বাস্তুচ্যুত হওয়া মানুষের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাঁদের কথা শোনেনও। এরপর চুরাচাঁদপুর জেলার মিনি সচিবালয় থেকে ভার্চুয়ালি একটি আইনি সেবা শিবির, একটি চিকিৎসা শিবির এবং একটি আইনি সহায়তা ক্লিনিকের উদ্বোধন করেন সুপ্রিম কোর্টের এই প্রতিনিধিরা।
প্রসঙ্গত, এই প্রতিনিধিদলের অন্যতম সদস্য বিচারপতি এন কোটিশ্বর সিং নিজেই মেইতেই সম্প্রদায়ের একজন মানুষ। আর সেই কারণেই তিনি এদিন কুকি-প্রধান চুরাচাঁদপুরে যাননি। পিটিআই সূত্রে দাবি, স্থানীয় আইনজীবী সংগঠনের আপত্তি থাকাতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই সফর পরিচালনার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা একথা জানিয়েছেন বলে দাবি করা হচ্ছে।
বিষ্ণুপুর জেলার মৈরাংয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতার সময় বিচারপতি সিং বলেন, 'সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের সফর একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। আমি নিশ্চিত, এই ঘটনা দাঙ্গা বিধ্বস্ত মানুষের মনে আশার সঞ্চার করবে এবং তাঁদের সান্ত্বনার স্পর্শ দেবে।'
তিনি আরও বলেন, 'আমাদের অতীত, আমাদের যন্ত্রণা কিংবা ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনার মধ্যেই আটকে থাকা উচিত নয়। আমাদের এমন একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে তাকাতে হবে, যেখানে আমরা সবাই একসঙ্গে বাস করতে পারব। এতে সময় লাগতে পারে। কিন্তু আমাদের আশাবাদী এবং ইতিবাচক হতেই হবে।'
উল্লেখ্য, এদিন যখন সুপ্রিম কোর্টের প্রতিনিধিদলটি ইম্ফল বিমানবন্দরে পৌঁছয়, সেই সময়ে প্রতিনিধিদলের প্রত্যেক সদস্যকে রাজ্যের আইনজীবীদের পক্ষ থেকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয়।
ইম্ফল বিমানবন্দর থেকে বিচারপতি সিং ছাড়া সুপ্রিম কোর্টের বাকি বিচারপতিরা হেলিকপ্টারে চুরাচাঁদপুর যান। অন্যদিকে, সেই সময়েই বিচারপতি সিং সড়কপথে বিষ্ণুপুর জেলায় আসেন। ইম্ফলে ফিরে যাওয়ার পথে বাকি বিচারপতিরাও সড়কপথে বিষ্ণুপুরে পৌঁছে যান। বিষ্ণুপুর জেলায় বিচারপতিরা মৈরাংয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীর স্মৃতিসৌধ পরিদর্শন করেন এবং লোকটাক হ্রদে নৌকা ভ্রমণ করেন।
প্রসঙ্গত, মণিপুরের বার অ্যাসোসিয়েশনগুলির পক্ষ থেকেই আবেদন জানানো হয়েছিল, সুপ্রিম কোর্টের একজন মেইতেই বিচারপতিকে যেন কুকি-জো-প্রধান এলাকায় যাওয়া থেকে বিরত রাখা হয়। প্রশাসন সেই মতোই ব্যবস্থা করে। যাতে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের এই সফর ঘিরে কোনও অনভিপ্রেত ঘটনা না ঘটে।
২০২৩ সালের মে মাস থেকে ইম্ফল উপত্যকাভিত্তিক মেইতেই এবং সংলগ্ন পাহাড়ি এলাকাভিত্তিক কুকি-জো গোষ্ঠীর মধ্যে জাতিগত হিংসা শুরু হয়। সেই হিংসা আজও পুরোপুরি থামেনি। এর ফলে এখনও পর্যন্ত ২৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে এবং হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়েছে।