ঋত্বিক ঘটকের অযান্ত্রিক সিনেমাটা অনেকের মনেই দাগ কেটে গিয়েছিল। সেই কাহিনিতে বিমল ছিলেন এক ট্যাক্সি ড্রাইভার। বিমলের ট্যাক্সির নাম জগদ্দল। ভাঙাচোরা ট্যাক্সি। তবে সেটাই তার নয়নের মণি। এই ট্যাক্সিটিকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছিল কাহিনিটি। তবে সেটা তো রিল লাইফের ব্যাপার। রিয়েল লাইফে তেমনই এক জগদ্দলের কাহিনি এবার রাজকোটে।
এক কৃষক পরিবার এবার তাদের প্রিয় গাড়িটিকে রীতিমতো গর্ত খুঁড়ে সমাধি দিলেন। আসলে বয়স হয়ে গিয়েছিল গাড়িটির। আর ছুটতে পারছিল না। অবসরে চলে গিয়েছিল গাড়িটি। দীর্ঘদিন সার্ভিস দিয়েছিল। পরিবারের একজন হয়ে গিয়েছিল গাড়িটি। এরপর একটা সময় একেবারে বিকল হয়ে যায় গাড়িটি। শেষ পর্যন্ত সেটা আর রাস্তায় বের হওয়ার মতো অবস্থায় ছিল না।
২০০৬ সালে কেনা হয়েছিল গাড়িটি। তারপর থেকে গাড়িটি একটানা চালানো হয়েছে। সেই গাড়ির মালিকের নাম সঞ্জয় পোলরা। অবশেষে একেবারে বিকল হয়ে যায় গাড়িটি। তারপরই গাড়িটিকে কবরস্থ করার সিদ্ধান্ত নেয় পরিবার। সাধারণত গাড়ি ভেঙে গেলে সেটিকে ভাঙাচোরার দরে বিক্রি করে দেওয়া হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে গাড়িটিকে বিক্রি করে দিতে মন চায়নি পরিবারের।
বৃহস্পতিবার রীতিমতো আনুষ্ঠানিকভাবে লাঠি তালুকা এলাকায় ওই অনুষ্ঠান হয়। পরিবারের গৃহদেবতাকে সাক্ষী রেখে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। ওই কৃষকের খামার বাড়িতে নিয়ে আসা হয় গাড়িটিকে। এরপর ফুলে ফুলে ঢেকে দেওয়া হয় গাড়িটিকে। শেষ পর্যন্ত গাড়িটিকে কবরস্থ করা হয়।
সেই অনুষ্ঠানে সাধুরা ছিলেন। আধ্যাত্মিক জগতের লোকজন ছিলেন। এমনকী কার্ড ছাপিয়ে ২০০০ মানুষকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। প্রায় ১৫০০ গ্রামবাসী এসেছিলেন। তাঁদের পুরী, চাপাটি, সবজি, লাড্ডু বিতরণ করা হয়। পরিবারের লোকজন জানিয়েছেন, এই গাড়িটি আমাদের পরিবারের একজন সদস্য ছিল। সেই ২০০৬ সাল থেকে গাড়িটি আমাদের বাড়িতে ছিল। এই গাড়িটি অত্যন্ত লাকি। আমাদের জীবন গড়ে দিয়েছে এই গাড়িটি।
সঞ্জয় বলেন, আমাদের মান মর্যাদা সব বেড়েছে এই গাড়িটার জন্য। এই গাড়িটাকে আমরা ভুলব কী করে! ২০০৬ সালে গাড়িটা কিনেছিলাম। এই গাড়িটা কেনার পরে আমাদের পরিবারের সৌভাগ্য ফিরে আসে। আমাদের সামাজিক মর্যাদা বাড়তে থাকে। তবে শেষ পর্যন্ত গাড়িটি বিকল হয়ে গিয়েছে। এরপরই চিন্তা করে শ্রদ্ধার সঙ্গেই গাড়িটিকে চিরবিদায় দেব। তিনি বলেন, যেখানে সমাধি দিয়েছি তার চারদিকে গাছ বসাব। প্রতি বছর ৭ নভেম্বর দিনটিকে পালন করব আমরা।